Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনী নদীতে ভারতের ২৬টি অবৈধ পানির পাম্প হাউজ তুলে নিতে বিজিবির চিঠি

সাব্রুমে বিজিবি-বিএসএফ’র বৈঠক

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার ১৭টি সীমান্ত পয়েন্টে সীমান্তবর্তী ফেনীনদী থেকে পানি উত্তোলনের জন্য নো ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের অবৈধভাবে স্থাপিত ২৬টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প মেশিন তুলে নিতে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)কে পত্র দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত বুধবার রামগড় সীমান্তের ওপারে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে অনুষ্ঠিত দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বিএসএফের কাছে এ পত্র হস্তান্তর করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাথে কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই ভারত দীর্ঘদিন থেকে এ পাম্প মেশিনগুলোর মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে দৈনিক এক শতাধিক কিউসিক পানি তুলে নেয়। একতরফাভাবে পানি তুলে নেয়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে ফেনী নদী শুকিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়। রামগড়, উত্তর ফটিকছড়ি ও মিরেরসরাইয়ের সীমান্তের ওপারে পাম্প হাউজগুলো অবস্থিত। এদিকে মৃতপ্রায় এ নদী খেকে ভারত চুক্তির মাধ্যমে আরো ১ দশমিক ৮২ কিউসিক পানি তুলে নেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাম্প মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতের পানি উত্তোলন বন্ধ করার পর ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে পানি বন্টন চুক্তি করতে কোন আপত্তি নেই।
বুধবার সাব্রুমে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্তে দুদেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর বৈঠকে বিজিবির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম. জাহিদুর রশীদ পিএসসি’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রামগড়স্থ ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবির, গুইমারা সেক্টরের জি টু মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. ম. জুলফিকার তারেক। অপরপক্ষে বিএসএফের উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি ইয়াদ ভান্দ্রা’র নেতৃত্বে অন্যান্যের মধ্যে সাব্রুমের ৩১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার টি সিং নেগী ও সাব্রুম মহকুমার পানি উন্নয়ন বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা হতে পৌনে ১২টা পর্যন্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দেশে ফিরে বিজির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম. জাহিদুর রশীদ জানান, ভারত ফেনী নদী থেকে ২৬টি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে দৈনিক এক শতাধিক কিউসিক পানি তুলে নিচ্ছে। এখন বাংলাদেশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আরও এক দশমিক ৮২ কিউসিক পানি নিতে চায়। সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তারা পানির এ দাবি করছে। তিনি বলেন, বৈঠকে ভারতীয় পক্ষকে ফেনী নদীর পাড়ে অবৈধভাবে স্থাপিত পানির পাম্প মেশিনগুলো তুলে নিতে অনুরোধ জানানো হয়। এ ব্যাপারে একটি লিখিতপত্রও বিএসএফকে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে স্থাপিত পাম্প মেশিনগুলো তুলে নেয়ার পর নদীর পানির পরিমাণ নির্ণয় করে হিস্যা অনুযায়ী ভারত পানি নিতে পারে। আমাদের এ বক্তব্যটিই ভারতীয় পক্ষকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ভারত ফেনী নদীর জল প্রবাহ থেকে ৩০-৫০ গজ দূরে ঢেউ টিন দিয়ে তারা স্থায়ীভাবে পাম্প হাউজ নির্মাণ করে সেখানে বিদ্যুৎচালিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মোটর বসিয়ে নদী থেকে পানি তুলে নেয়। মোটর চালানোর জন্য প্রতিটি পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমা বসানো হয়েছে। মানুষের নজরে না আসার জন্য অধিকাংশ পাম্প হাউজ মাটির নীচে টিন অথবা পাকা দেয়াল তৈরি করে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পাম্প হাউজ থেকে নদীর পানি পর্যন্ত খনন করে মাটির নীচ দিয়ে ৬-৮ ইঞ্চি জিআই এবং পিভিসি পাইপ বসানো হয়। এসব পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে সাব্রুম মহকুমার বিস্তৃীর্ণ সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার একর ফসলী জমিতে সেচ দেয় ভারত। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষার সময় ছাড়া বাকি ১০ মাসই ভারত পাম্প মেশিনের মাধ্যমে পানি তুলে নেয়। ১৯৮২ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে এ পাম্প হাউজগুলো স্থাপন করা হয় বলে জানা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেনী নদীতে ভারতের ২৬টি অবৈধ পানির পাম্প হাউজ তুলে নিতে বিজিবির চিঠি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ