Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইয়াবার ভয়াল আগ্রাসন

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নূরুল ইসলাম : থামছে না ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন। ইয়াবার ভয়াল আগ্রাসনের কাছে প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়েছে। সাগর, নদী, পাহাড় পেরিয়ে নদী ও সড়ক পথ হয়ে ইয়াবার চালান পৌঁছে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এর বিস্তৃত নেটওয়ার্কের কাছে সহজেই পরাজিত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আকার ছোট বলে হাতে হাতে এটি ছড়িয়ে পড়ছে পাড়া-মহল্লা, অলিতে-গলিতে। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবার চালান ধরাও পড়ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ছে তার অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, পত্র-পত্রিকার খবরের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ইয়াবা পাচারের সাথে সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। ইয়াবার আগ্রাসন রোধ করতে না পারার পেছনে এটাও একটা প্রধান কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাদকের স্রোতের মধ্যে আবার ঢুকে গেছে নকল ইয়াবা। মাদকসেবীরা ইয়াবার নামে যা ব্যবহার করছে এর বড় অংশ নকল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের নকল ইয়াবা তৈরির কারখানারও সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সময় রাসায়নিক পরীক্ষাতে উদ্ধার করা বেশিরভাগ ইয়াবায় এর মূল উপাদান পাওয়া যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন দেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে ব্যস্ত- এই সুযোগে বেপরোয়া মাদক পাচারকারীরা। সাগর পথে মাছ ধরা ট্রলারে সরাসরি মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান দেশে ঢুকে পড়ছে। সড়ক ও নদী পথে সুবিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। বাংলাদেশের এমন কোনো থানা বা ইউনিয়ন নেই যেখানে ইয়াবা পাওয়া যায় না। তার মানে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারী রয়েছে। অথচ এক সময় ইয়াবা শহরের উচ্চবিত্তের বখে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের নাগালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
গত মঙ্গলবার রাতে কোস্টগার্ড সদস্যরা টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর মোহনায় অভিযান চালায়। এসময় মায়ানমার থেকে আসা একটি ডিঙি নৌকা নাফ নদীর মোহনায় পৌঁছলে কোস্টগার্ড সদস্যরা থামার জন্য সংকেত দেন। এতে পাচারকারীরা নৌকাটি ফেলে অন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পালিয়ে যায়। পরে নৌকাটি তল্লাশি করে ৯ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয় যার মূল্য ৪৫ কোটি টাকা। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, পাচারকারীরা এবার নাফ নদীর সীমান্ত বাদ দিয়ে সাগর পথকে বেছে নিচ্ছে, তাতে পাচারকারীদের আটক অনেকটা অসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সব কারণে ইয়াবার আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছে না তার মধ্যে ভৌগলিক কারণ প্রধান উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, টেকনাফের বিশাল সীমান্তজুড়ে সমুদ্র। এই সমুদ্রপথে হাজার হাজার নৌকা, ট্রলার চলাচল করে। কোন ট্রলারে ইয়াবা আসছে তা নির্ণয় করা সত্যি বড় কঠিন কাজ। আমাদের কোস্টগার্ডের যে জনবল ও শক্তি আছে তা দিয়ে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, গত ৫ বছরে এই টেকনাফ সীমান্ত থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে দুই জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারপরেও বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার।
ইয়াবার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক
ইয়াবার বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এ সুযোগে রাজধানীজুড়ে গড়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অপ্রতিরোধ্য নেটওয়ার্ক। এরমধ্যে ‘ডিরেক্ট পার্টি’ নামে পরিচিত পাইকারি বিক্রেতার সংখ্যাই তিন শতাধিক। বিভিন্ন সূত্রমতে, প্রতিদিন শুধু রাজধানীতেই ১০ থেকে ১২ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা বিক্রি হয়। ক্রেতার একটি বড় অংশই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা, প্রচুর পরিমাণ ইয়াবাও উদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরও প্রাণঘাতী এ মাদকটির দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রস্তুত করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই ভাষায় ইয়াবা মানে ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ওষুধ। ইয়াবা এক ধরনের মাদক যা হেরোইনের চেয়ে ভয়াবহ এবং হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহƒত হয়। ইয়াবার মূল উপাদান মেথ্যাম ফিটামিন ও সঙ্গে থাকে উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিন। ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেথ্যাম ফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি এ ট্যাবলেটের রং সাধারণত সবুজ বা লালচে কমলা হয়ে থাকে। ইয়াবা ট্যাবলেটের স্বাদ যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে এবং সেবনের পর ধরা পড়ার আশঙ্কাও থাকে না। ইয়াবা ব্র্যান্ডের এসওয়াই, এনওয়াই ও ডব্লিউওয়াই নামের আরও তিনটি ট্যাবলেট বাজারে পাওয়া যায়। তবে রাজধানীতে এখন চার রকমের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে গাঢ় লাল রঙের ‘চম্পা’ প্রতি পিস খুচরা ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। টেকনাফে এটি কেনা হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। হালকা গোলাপী রঙের ‘আর সেভেন’ ইয়াবার দাম সবচেয়ে বেশি। এটি ঢাকায় কমপক্ষে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হালকা গোলাপী রঙের আরেক ধরনের ইয়াবার নাম ‘জেপি’। এর খুচরা মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। ‘ডগ’ নামের মাটি রঙের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় প্রতিটি। এছাড়াও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে দেশেই তৈরি হচ্ছে আরেক ধরনের ভেজাল ইয়াবা। এগুলো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যায়।
ঢাকায় ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা
নগরীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। সেখানে ইয়াবা বিক্রির পাশাপাশি ‘ভিআইপি’ ক্রেতার জন্য সেবনের বন্দোবস্ত আছে। কিছু ব্যবসায়ী ইয়াবা বিক্রিতে সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করছেন। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে সর্বনাশা এই মাদক। অভিজাত এলাকা ছাড়াও রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকাতেই ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। প্রভাবশালীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যও টাকার বিনিময়ে ইয়াবা বেচাকেনাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএমপি’র পক্ষ থেকে রাজধানী থানাগুলোতে মাদকের প্রসার বন্ধ করার জন্য কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বরাবরই মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্সের নির্দেশ দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। যার প্রমাণ মিললো গত মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী থানায়। ওই দিন রাতে যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে দেখা যায়, এক সাথে ৬/৭জনকে ধরে এনেছে পুলিশ। থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, এরা সবাই মাদক সেবন করছিল, এজন্য আটক করে থানায় আনা হয়েছে। ওসি আনিছুর রহমান বলেন, মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের কোনো ছাড় নয়। যাকে যখন যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে আটক করার নির্দেশ দিয়েছি। আমার থানার পুলিশ সদস্যরা সেভাবেই কাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওসি আনিছুর রহমান যোগদান করার পর থেকে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মাদকের প্রসার অনেকটাই কমেছে। একই অবস্থা কদমতলী থানা এলাকারও। সেখানেও মাদক বেচাকেনা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেছেন, তিনি মাদকের প্রসার কমানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিকভাবেও এলাকার মানুষকে মাদকবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতে ভালো ফল পাচ্ছেন। তবে পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর থানার চিত্র একেবারে উল্টো। সেখানে মাদকের প্রসার দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদেশে বসে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী, শহীদ কমিশনারের লোকজন মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে। ঢালকানগরের মালেক নামে শহীদ কমিশনারের এক সহযোগী পুরো শ্যামপুর এলাকা ইয়াবায় সয়লাব করে ফেলেছে। পুলিশ ইচ্ছা করলে মাদকের কারবার বন্ধ করতে পারে। কিন্তু তা করছে না। মাদককে কেন্দ্র করে ঈদের আগেও শ্যামপুরে খুনের ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্ত পেরিয়ে যেভাবে আসে ইয়াবা
গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশে পাচারের জন্যই মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ৩৮টি ইয়াবা কারখানা। এ সব কারখানা থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখেরও বেশি ইয়াবা টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তের ৪৩টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের মংডু হতে বিভিন্ন প্রকার ফিশিং বোটের মাধ্যমে টেকনাফের স্থলবন্দর, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাংয়ের লেজিপাড়া ও বার্মাপাড়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লাখ লাখ পিচ ইয়াবা আসছে। স্থানীয় সূত্রগুলো অভিযোগ করে জানায়, বিভিন্ন সংস্থার একশ্রেণীর কর্মকর্তার সাথে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সখ্যতা ও গোপন লেনদেন থাকায় ইয়াবা প্রবেশ রোধ হচ্ছে না কোনোভাবেই। সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের পাইকারি বেচাকেনা চলে রাতের অন্ধকারে। নৌকা নিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মজুদ নিয়ে টেকনাফে ঢুকে মিয়ানমারের আকিয়াবের মংডু এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ ও ইউনুসসহ বেশ কয়েকজন। তারা সকলেই রোহিঙ্গা। পাজেরোসহ দামি দামি গাড়িতে ‘প্রেস’ ‘সাংবাদিক’ বিভিন্ন এনজিও এমনকি জাতিসংঘ’র শরণার্থী বিষয়ক দপ্তরের স্টিকার লাগিয়েও অহরহ ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
মানসিক বিকারগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকেই
জীবনীশক্তি ধ্বংসকারী ইয়াবা সেবনকারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন এবং যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলছেন চিরতরে। কিডনি সংক্রান্ত নানা জটিলতাতেও ভুগছেন তারা। বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ইয়াবা আসক্তদের উপর পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটানা মাত্র দুই-আড়াই বছর ইয়াবা সেবন করলে যে কেউ মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হওয়ার উপক্রম হবে। তাদের অনেকেরই মস্তিষ্কের ভারসাম্যতাও বিনষ্ট হতে পারে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, এক থেকে দুই বছর-এর মধ্যে ইয়াবা সেবনকারীদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানি বলেন, ইয়াবা সেবনকারীরা মানসিক রোগে ভুগতে থাকে। অস্থির ভাব এবং যেকোন সময়ে যে কোনো অঘটন তারা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। বেশিরভাগ ইয়াবা আসক্ত সিজেফ্রেনিয়ার মানসিক রোগের শিকার হয়।
নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে ইয়াবা
রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক এখন ব্যবহার হচ্ছে কতিপয় অসৎ পুলিশ সদস্যের উপরি আয়ের অস্ত্র হিসেবে। এ কাজে পুলিশকে সহায়তা করছে সোর্স নামধারী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা। রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকাতেই এসব সোর্সকে পুলিশের গাড়িতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। নিরীহ মানুষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় অনেকেই আতঙ্কিত। অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার সোর্স নামধারী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ইয়াবা বা ভিন্ন কোনো মাদক দিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামপুর, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী ও দারুস সালাম থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই পুলিশ সোর্স। এলাকায় এরা মূর্তিমান আতঙ্ক। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের কৌশলে এই এলাকার সোর্সরা অনেক পারদর্শী বলে জানান মিরপুরের এক বাসিন্দা। পল্লবী থানার দুই দারোগা সোর্সদের নিয়ে উপরিবাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। খিলগাঁও থানা পুলিশের সোর্স ওহাব গোরান এলাকার বেশ কয়েকজনকে ইয়াবা দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন।
মামলার দীর্ঘসূত্রতা
র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সাড়ে চার হাজার, ২০১৫ সালে সাড়ে ছয় এবং চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শুধু র‌্যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও আছে। কিন্তু এসব গ্রেফতারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার খুব একটা অগ্রগতি হয় নি। বরং সেগুলো ঝুলে আছে। বড় বড় চালান উদ্ধারের মামলার আসামীও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার পুরনো ব্যবসায় নেমে পড়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, ইয়াবা চোরাচালানি, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতি বছর ১০ হাজারেরও বেশি মামলা হয়। কিন্তু বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় এসব মামলার বেশিরভাগ ঝুলে আছে বছরের পর বছর ধরে। ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের প্রসার ও বেচাকেনা ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে মাদকের প্রসার ঠেকানো যাবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ সে লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে।



 

Show all comments
  • সবুর খান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৩:০৩ পিএম says : 0
    এর দায়ভার প্রশাসন এড়াতে পারবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবার ভয়াল আগ্রাসন

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ