Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

ওয়াশিংটন আ’লীগের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৫১ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থ সহায়তা ও নির্দেশ দিয়ে যারা দেশে জঙ্গিবাদে মদদ যোগাচ্ছে ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ জনগণকে পুড়িয়ে মারছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। গত বুধবার রিজ কার্লটন হোটেলে আওয়ামী লীগের ওয়াশিংটন শাখার নেতা-কর্মীদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা রুজু প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এসব রাজনৈতিক মামলা নয়, এসব জনগণকে পুড়িয়ে মারার মামলা। যারা অপরাধী তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া যারা অপরাধীদের সহায়তা করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে তাদেরকেও অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। এ সময়ে শত শত দলীয় সমর্থক বিচারের সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকে।
বিদেশীদের ওপর নির্ভর ও দেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের কাছে সারবস্তুহীন ঢালাও অভিযোগ করার জন্যে বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণের শক্তির ওপর তাদের কোন আস্থা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৭০ বছরে পা রেখেছেন। কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ কোন আয়োজন না করেই তার জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যের কল্যাণে স্বার্থত্যাগের বিষয়টি বাল্যকালেই তিনি তার মরহুম পিতা-মাতার কাছ থেকে শিখেছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ যখন ওই সময়ে খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্যে সংগ্রাম চালাচ্ছে তখন তার পরিবারের সদস্যরা কখনই জাঁকজমকভাবে জন্মদিন পালন করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, জন্মদিন উদযাপনের জন্যে কেক কাটা আমার পছন্দ নয়। দেশের নির্যাতিত ও নিপীড়িত জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা, পাকিস্তানী শাসকদের রুজু করা মামলা মোকাবেলা এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে চালিয়ে নেয়ার জন্যে তাঁর মায়ের যে অবদান তা স্মরণ করেন।
একইসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ কীভাবে পুনর্গঠন করেছেন, স্বাধীনতাত্তোর দেশের অর্থনীতি পুন:নির্মাণ এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি তিনি যে অনুধাবন করেছিলেন সেসব কথাও স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জমির সীমানা নির্ধারণ এবং মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল চিহ্নিতকরণ এবং মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে নৌ-সীমার মীমাংসার কাজ শুরু করেছিলেন। এছাড়া স্বাধীনতার পর তৎকলীন শেল ওয়েল কোম্পানীর কাছ থেকে গ্যাস ফিল্ড কিনে নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গঠনে তার দূরদর্শী পদক্ষেপেরই পরিচায়ক।
তিনি বলেন, অবকাঠামো থেকে শুরু করে অর্থনীতির সকল মৌলিক কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশ উদাহরণ তৈরি করতে পারতো।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, বিদেশে প্রায় ৬ বছর তিনি উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর জেনারেল জিয়ার সামরিক জান্তাদের বিভিন্ন বাধাবিঘেœর মুখোমুখী হওয়ার পাশাপাশি নিজ দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কঠোর পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
অনুসারীদের উল্লাস ধ্বনির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, বড় নেতারা ভুল করেছে তবে তৃণমূল কর্মীরা ভুল করেনি।
অবৈধভাবে জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল ও বিএনপি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিয়া সেনা আইন ও সংবিধান লংঘন করেছেন। যে দল অবৈধভাবে গঠিত হয়েছেÑ সেই দল জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জিয়ার পুত্র (তারেক) অর্থ পাচারকারী, যা এফবিআই’র তদস্তে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কখনও অসৎ পথে যাইনি। আমরা আমাদের নিজেদের ভাগ্য গড়ার চিন্তা করছি না। আমাদের চিন্তা কিভাবে জনগণের কল্যাণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী শাসনকালে জিয়া, খালেদা ও এরশাদ আমলে সরকার ছিল সবচেয়ে দুর্বল এবং এই শাসকরা ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন অথবা ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ইস্যু উত্থাপনে কখনোই সাহস পায়নি।
তারা তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলায় ব্যস্ত ছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের নীতি ছিল দেশকে ভিক্ষুকে পরিণত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া।
শ্লোগান ও করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর পর তার সরকার ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করে এবং প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করে। যা বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন কিভাবে তার সরকার খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে, ভয়ানক বিদ্যুৎ সংকট সমাধান করেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে এবং দেশকে কিভাবে ডিজিটালাইজেশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের ক্ষেত্রে তার চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। বিশ্ব ব্যাংক এ ব্যাপারে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করছে।
তিনি বলেন, আমি জনগণের জন্যই সবকিছু করেছি, যখনই আমি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি আমি জনগণের সমর্থন পেয়েছি।
মনেই হয়নি, সব্যসাচী কবি চলে যাবেন :
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে না পারায় দুঃখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেখকের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী তার জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকতার আড়ম্বরও পরিহার করেছেন। জন্মদিনের কেক কাটার সব আয়োজন বাতিল করা হয়েছে তার নির্দেশে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির লালন ও বিকাশে আজীবন সোচ্চার থাকা সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে গোটা জাতির সঙ্গে তিনি ব্যথিত। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ হককে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ওই সময় সৈয়দ শামসুল হকের চিকিৎসার পুরো ব্যয়ভার নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। সেই সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী ভার্জিনিয়ার অনুষ্ঠানে বলেন, উনার সঙ্গে যখন কথা বলি, আমার মনে হয়নি যে উনি চলে যাবেন। উনার এতো মনের জোর ছিল।
আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব ২০২০ সালে। আমি ভাবছিলাম উনাকে দিয়েই আমরা এই কমিটিটা করতে চাই। কিন্তু উনি অসুস্থ হওয়ার কারণে আর কমিটি ঘোষণা করতে পারিনি।
প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা :
প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সরাসরি মঞ্চে গিয়ে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট বক্তৃতা করেন তিনি। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও প্রবাসীদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সঙ্কটের সময় প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার কথা আমি কখনো ভুলব না। সে সব দিনের দুঃসহ স্মৃতি আমাকে গভীর কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে প্রবাসীদের কাছে। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ’খানেক প্রবাসী আমার সহযাত্রী হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তিনি প্রবাসীদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং তাদের আরও বেশি করে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে বলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সাফল্যের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে তুলে ধরতে সকল প্রবাসীকে ‘রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায়’ অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, চিহ্নিত একটি মহল বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সহ্য করতে পারছে না। তারাই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওদের অপপ্রচারে যাতে আন্তর্জাতিক মহল বিভ্রান্ত না হয় সে জন্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সকল প্রবাসীকে সোচ্চার থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকা-ের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। দেশবিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশীকে জীবন দিতে হয়েছে। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়। সব জায়গায়ই সন্ত্রাসবাদ এজন্য আরো সজাগ থাকতে হবে।

 



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গিবাদের মদদদাতাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ