Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানা সমস্যা সত্ত্বেও মৎস্যসম্পদে উদ্বৃত্ত এলাকা দক্ষিণাঞ্চল

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষের অভাবসহ জনবল সংকট ও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৎস্যখাতের ব্যাপক ক্ষতির পরেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় বার্ষিক ২.১০ লাখ টন মাছের চাহিদার বিপরীতে গত বছর উৎপাদন ছিল প্রায় ৩ লাখ ৮০হাজার টন। এর মধ্যে ইলিশের উৎপাদনই ছিল প্রায় সোয়া ২লাখ টনের মত।
গত বছর দেশে মোট ইলিশ উৎপাদন ছিল প্রায় ৩লাখ ৮০হাজার টনের কাছাকাছি। আর দেশে মোট মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ৩৭লাখ টনের মত। মৎস্য অধিদফতরের মতে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত বছর ১লাখ ৭০হাজার টনের মত মাছ উদ্বৃত্ত ছিল। তবে এর বাইরে দক্ষিণাঞ্চলে গলদা ও বাগদা চিংড়ীর উৎপাদনও ছিল আরো প্রায় সাড়ে ৬হাজার টনের কাছাকাছি। যদিও সাম্প্রতিককালে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও আধুনিক মাছ চাষের কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে, তবুও এ অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাত এখানো প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। আর একের পর এক প্রকৃতিক দুর্যোগ এঅঞ্চলের মৎস্য খাতকে বার বারই বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। এমনকি ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অতিবর্ষণ সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেসে যায় বহু কষ্টে যোগাড় করা ব্যাংক ঋণের অর্থে চাষ করা মাছ ও মাছে ঘের । ফলে মৎস চাষিরা বারে বারেই সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসে যায়। এমনকি এ খাতের পুনর্বাসনেও তেমন কোন সরকারী উদ্যোগ এপর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি।
মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় প্রায় ২৭হাজার হেক্টরের সোয়া ৪ লক্ষাধিক পুকুর ও দিঘী ছাড়াও ৯০টি প্রবহমান নদ-নদীতে ৩.২০ লাখ হেক্টর জলাশয় রয়েছে। এছাড়াও ৪৩টি বিল, ১টি বাঁওড়, ১ হাজার ৩৪০টি খাল, ৬২৮টি প্লাবন ভূমিতে ১লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জলাশয় রয়েছে। পাশাপাশি ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টরে দেড় সহ¯্রাধিক বেসরকারী বাণিজ্যিক মৎস্য খামারও গড়ে উঠেছে। বেশ কিছু সরকারী-বেসরকারী হ্যাচারী সহ নার্সারী খামারও স্থাপিত হয়েছে দক্ষিনাঞ্চলে ।
তবে অব্যাহত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রমে নানামুখি প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। গত দুই দশকে গোটা দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে নগরায়নের ধাক্কায় প্রায় অর্ধেক পুকুর ও খাল অস্তিত্ব হারিয়েছে। পাশাপাশি দেশের উত্তর এবং মধ্যভাগের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারী ও বৃহত শিল্পের নানা ধরনের বিষাক্ত বর্জ্য বিভিন্ন নদÑনদীর মাধ্যমে ভাটির এ এলাকা অতিক্রম করে সাগরে পতিত হচ্ছে। ফলে এঅঞ্চলের নদ-নদীগুলোও এসব শিল্প বর্জে দুষিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাছের আবাসস্থলগুলোও। তবে এর পারেও দক্ষিণাঞ্চলে ধান ক্ষেতে মাছের চাষ সহ বিভিন্ন ছোট এবং মাঝারী নদ-নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের মত আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তির মাছ চাষের যথেষ্ট সম্প্রসারণ ঘটছে সাম্প্রতিককালে। সম্প্রসারণ ঘটছে আধুনিক প্রযুক্তির তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ চাষেরও।
গতবছর দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর ৩সহ¯্রাধিক ধান ক্ষেত্রে মাছ চাষ হয়েছে। আরো দেড় সহ¯্রাধিক ধান ক্ষেতে কার্প জাতীয় মাছের সাথে চিংড়ীর মিশ্র চাষও হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির এসব চাষের মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রায় ১৫হাজার টন মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়েছ বলে জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় মৎস দফতর।
তবে মৎস্য খাতের এসব উন্নয়নের বেশ কিছু প্রতিকুল চিত্রও রয়েছে এখনো বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই। এবিভাগে মৎস্য অধিদপ্তরের ৩৬৮টি বিভিন্ন পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২১৩জন। ১৫৫টি পদে কোন জনবল নেই। এ বিভাগে ১৬৮টি মঞ্জুরীকৃত কর্মকর্তা পদের বিপরীতে ৮০টিতেই কোন লোকবল নেই। ২শ’টি কর্মচারী পদেরও ১২৫টি শূণ্য। জেলা মৎস কর্মকর্তা থেকে উপজেলা পর্যায়েরও বেশীরভাগ পদ খালি। ৪২টি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পদের অর্ধেকই শূণ্য। সম সংখ্যক সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার ৩৩টিই শূণ্য। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই মৎস সেক্টরের উন্নয়ন সহ চলমান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপরন্তু কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জালের মত নিষিদ্ধ মৎস আহরন সরঞ্জামাদীর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের পরেও দক্ষিনাঞ্চলে তা থেমে নেই। গতবছর জাটকা সংরক্ষন কর্মসূচী সহ নিষিদ্ধ জাল সমুহ নির্মূল অভিযানে দক্ষিনাঞ্চরেল বিভিন্ন নদ-নদী থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ জাল আটক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়। এসময় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদী থেকে প্রায় আড়াই কোটি মিটার নিষদ্ধ ও অবৈধ জাল বাজেয়াপ্ত করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্যও প্রায় ৮০কোটি টাকা।
তবে জাটকা সংরক্ষণে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ইলিশ পোনা নিধনে জেলেদের বিরত রাখার কার্যক্রমে গতবছরও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ১লাখ ৩০ হাজার জেলে পারিবারের মধ্যে ২১হাজার টন চাল বিতরন করা হয়। সিমিত কিছু জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিয়েছে সরকার।
তবে এর পরেও দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য চাষ সম্প্রসারন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে এসব কার্যক্রমের সুফল মৎস্যচাষীদের কাছে পৌছে দেয়ার লক্ষে আরো নিবিড়ভাবে মূল্যায়নের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল।
মৎস্য বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বশীল মহলের মতে মাছ চাষে এ অঞ্চলে গত এক দশকে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ইলিশসহ পাঙ্গাস জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি লক্ষনীয়ভাবেই বেড়েছে। সূত্রটির মতে ২০০৯Ñ১০সালে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন ১.৬০লাখ টন থেকে গত অর্থবছরে ২.৩০লাখ টনে উন্নীত হবার বিষয়টি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নানা সমস্যা সত্ত্বেও মৎস্যসম্পদে উদ্বৃত্ত এলাকা দক্ষিণাঞ্চল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ