পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিতর্কিত কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের ভাই দুলাল শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। গতকাল কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছিল নিজস্ব সাইবার টিম। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার জন্য এই সাইবার টিম কাজে লাগাতেন তিনি। ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য আসলে সাইবার টিম মন্তব্যকারীদের প্রতিহত করত। এছাড়া মাদক দ্রব্য আইনে গুলশান থানায় করা মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। ট্র্যাপে ফেলে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চিকিৎসক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ ও আমলাসহ একাধিক পেশাজীবী লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন তিনি। তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, হেলেনার কাছ থেকে উদ্ধার করা ১৯টি চেকবইয়ের সূত্র ধরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা জামা আছে; তা জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হবে। তাছাড়া তার ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাংক হিসেবে কী ধরনের টাকা রয়েছে বা লেনদেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, একটি মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জয়যাত্রা টিভির কার্যালয় থেকে দুলাল শরীফকে হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া ‘জয়যাত্রা’ নামক আইপি টিভি চ্যানেল পরিচালনার কারণে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে র্যাব পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছিল। সেই মামলায় দুলালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কাছ থেকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন বা ছবি প্রচার করত সাইবার টিম। নানা ছুতোয় হেলেনা ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ওইসব ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর করে অনেককেই ট্র্যাপে ফেলেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, চিকিৎসক, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, আমলাসহ একাধিক পেশাজীবী লোকজন। মানসম্মানের ভয়ে তারা কাউকে এতদিন কিছু বলতে পারেননি। ট্র্যাপে পড়েও বিষয়টি তারা চেপে গেছেন। হেলেনা গ্রেফতারের পর কয়েক জন ভুক্তভোগী এ ব্যাপারে র্যাব সদর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন।
সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ত্রাণ বিতরণের জন্য ‘পল্লী মাতা’ এবং চাকরির সুযোগ করে দেয়ায় ‘মাদার তেরেসা’ নামের দুটি উপাধি নিয়ে প্রচারের জন্য সাইবার টিমকে কাজে লাগান হেলেনা জাহাঙ্গীর। আবার নিজেকে সিস্টার হেলেনা বলেও পরিচয় দিতেন জয়যাত্রা আইপি টিভির মাধ্যমে।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনার কাছ থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেছেন। হেলেনা অনেক প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দিয়েছেন। আবার অনেক প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে; এমন প্রশ্নে হেলেনা নীরব ছিলেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা ১৯টি চেকবইয়ের সূত্র ধরে পুলিশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা জামা আছে; তা জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানাবে।
র্যাবের একটি সূত্রে জানা গেছে, র্যাবের মাঠ পর্যায়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা হেলেনা ও তার স্বামীর মালিকানাধীন পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানার সন্ধান পেয়েছেন। গার্মেন্টসগুলো হচ্ছে, মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে নিট কনসার্ন ইউনিট এবং জেসি এমব্রডারি, হুমায়ারা স্টিকার, জয় অটো গার্মেন্টস ও প্যাক কনসার্ন প্রতিষ্ঠান চারটি নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। প্যাক কনসার্ন যৌথ মালিকানাধীন। এছাড়াও আরো আটটি পোশাক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটির জন্য তিনি জমি অধিগ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে তার প্যাকেজিং কারখানা প্রক্রিয়াধীন ছিল। এসব তৈরি পোশাক কারখানা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম দেখাশোনা করেন। জাহাঙ্গীর আলম ২৫ বছর আগে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু কীভাবে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন; সে ব্যাপারে হেলেনা জাহাঙ্গীর র্যাবের কাছে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার ১৫টি একক মালিকাধীন ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৫তলা ভবনে পাঁচটি, গুলশানের-২ নম্বরের ৩৬ নম্বর রোডে ৫ নম্বর বাড়িতে পাঁচটি, গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর রোডে ৭/বি নম্বর বাড়িতে একটি, গুলশান এভিনিউয়ে একটি, গুলশান নিকেতনে একটি, মিরপুরের ১১ নম্বরের ৬ নম্বর রোডে একটি ও মিরপুরের কাজীপাড়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় হেলেনার ১০০ একর জমির সন্ধান পেয়েছে র্যাব।
মাদক মামলায়ও হেলেনাকে রিমান্ডে চায় পুলিশ : মাদক দ্রব্য আইনে গুলশান থানায় করা মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ রিমান্ড আবেদন করেন গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানুর রহমান। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে রয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ মামলার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করার দিন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালতে সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই রাত ১২টার দিকে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, চাকু, বৈদেশিক মুদ্রা, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। রোববার গুলশান থানা থেকে মামলার তদন্তভার ডিবির স্পেশাল সাইবার ক্রাইম বিভাগে দেয়া হয়েছে। একই সাথে রাতে আসামি হেলেনা জাহাঙ্গীকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতে এ সব তথ্য জানান ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এদিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও পল্লবী থানায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রিমান্ডে থাকা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ডিবির কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। তিন দিনের রিমান্ডের রোববার ছিল দ্বিতীয় দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।