Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে বিনিয়োগের অভাবে পোলট্রি শিল্পের প্রসার নেই

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে পোলট্রি শিল্পের প্রসার ঘটছে না। পুঁজির নিরাপত্তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চট্টগ্রামে পোলট্রি শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে বলে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা মত প্রকাশ করেছেন। মেজবান থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। প্রাত্যহিক চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে পারছে না ব্রয়লার মুরগির ফার্মগুলো। চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৬শ’ খামার থাকলেও জেলা ও নগরীতে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে খামারীরা।
এদিকে পুঁজির অভাবে আনুষঙ্গিক খরচের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে না পারায় খামারের সংখ্যা বাড়ছে না। ফলে চাহিদা অনুসারে সরবরাহে ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটি (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে পোলট্রি শিল্পে আরও তিনগুণ বিনিয়োগ সম্ভব। এ শিল্পে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা গেলে চট্টগ্রামে ব্রয়লার মুরগি চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায়ও সরবরাহ করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিক ও পোলট্রি ফিড মালিকদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খামারিরা টিকতে পারছেন না। পোলট্রি ফিড ও এক দিনের বাচ্চার চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে, আবার চাহিদা কমলে দাম কমে। এ কারণে খামারিরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার অধিকাংশ খামারি অব্যাহত লোকসানের কারণে পুঁজি হারিয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অনেক কষ্টে খামারগুলো টিকিয়ে রেখেছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু খামার মালিক পুঁজি হারানোর ভয়ে তাদের খামার বন্ধ রেখেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের মেজবানের মাধ্যমেই ব্রয়লার মুরগির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে ৪ হাজার ৬শ খামারের মধ্যে ৩ হাজার ব্রয়লার এবং ১৬শ’ লেয়ার খামার। ২০০৫ সালে বার্ড-ফ্লু বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পের সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ঘটিয়েছিল। কিন্তু প্রকারান্তরে বার্ড-ফ্লুই এ শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। কারণ খামারিরা এখন বায়োসিকিউরিটি এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বিষয়ে অনেক বেশি সজাগ হয়েছে। আর এ কারণেই ডিম ও মাংসের মান অনেক বেড়েছে।
ব্রয়লার হলো মুরগির মাংস উৎপাদনের জন্য এক বিশেষ ধরনের মুরগি যাদের দেহের ওজন ৩০ থেকে ৩৫ দিনে দেড় থেকে পৌনে দু’কেজি হয়। ওই সময়ে এরা এক কেজি দেহের ওজনের জন্য মোটামুটিভাবে দেড় কেজি খাবার খায়। এদের মাংস খুব নরম ও সুস্বাদু। ভারী ওজনবিশিষ্ট বিভিন্ন মোরগ-মুরগির মধ্যে মিলন ঘটিয়ে ছাঁটাই-বাছাই করে দীর্ঘ গবেষণার পর কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে অধিক মাংস উৎপাদনশীল হাইব্রিড ব্রয়লার তৈরি করা হয়। ব্রয়লার জাতের নাম হল, হাইব্রো পিএন, হাববার্ড ক্লাসিক, কব ৫০০, হাইব্রো পিজি ও আরবার একর ও স্টারব্রো ইত্যাদি। ব্রয়লারের জন্য খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এমন মুরগির জাত সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। কারণ সব মুরগি সমানভাবে ওজন বাড়ে না।
লেয়ার মুরগির বিষয়ে খামার মালিকরা জানান, লেয়ার মুরগি হলো ডিম উৎপাদনের জন্য বিশেষ ধরনের মুরগি, যাদেরকে একদিন বয়স থেকে পালন করা হয়। যারা ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়সে ডিম দিতে শুরু করে এবং উৎপাদনকাল ৭২ থেকে ৭৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ডিম উৎপাদনকালীন এরা গড়ে প্রায় সোয়া দু’কেজি খাবার খেয়ে এক কেজি ডিম উৎপাদন করে। অন্যদিকে ডিম উৎপাদনের উদ্দেশে কাক্সিক্ষত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন ধরনের মোরগ-মুরগির মিলন ঘটিয়ে ক্রমাগত ছাঁটাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ গবেষণার পর সৃষ্ট অধিক ডিম পাড়া মুরগিকে হাইব্রিড লেয়ার বলে। ডিমের প্রকৃতি বা রং অনুসারে লেয়ার মুরগি দুই ধরনের হয়ে থাকে বলে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা জানান।
এদিকে সংক্রামক রোগেও আতঙ্কে থাকেন খামার মালিকরা। তবে সংক্রামক রোগ হতে মুরগিকে রক্ষা করা যায় বলে জানালেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা জানান, টিকাদান ফলপ্রসূ হলে রোগের প্রাদুর্ভাব খুব কম হবে এবং মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায় রাখা যাবে। লেয়ার মুরগির টিকা হল মারেক্স, রাণীক্ষেত, গামবোরো, ব্রংকাইটিস, বসন্ত, সালমোনেলা, করাইজা। আর ব্রয়লার মুরগির টিকা হল মারেক্স, রাণীক্ষেত, গামবোরো।
খামার মালিকরা জানান, ব্রয়লার মুরগির চাহিদা রয়েছে অনেক। বিভিন্ন সামাজিক ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এ মুরগির প্রচুর চাহিদা থাকায় সরবরাহে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। চাহিদানুসারে তেমন মুরগি উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। তাদের মতে এ শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ করলে এতদঞ্চলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। প্রতিহাজার লেয়ার মুরগিতে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচের পরেই কেবল এরা ডিম পাড়া শুরু করে। কিন্তু ডিমের দাম পড়ে যাওয়া এবং খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে অনেকে ডিমপাড়া মুরগি বিক্রি শুরু করেছে। হাজার মুরগির জন্য শ্রমিক খরচ সাত হাজার টাকা, বিদ্যুৎ খরচ তিন হাজার টাকা লাগে। অপরদিকে প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার টাকার ওষুধ লাগে। অনেক ঘাম, শ্রম ও অর্থব্যয় করার পরেই লেয়ার মুরগি ডিম পাড়া শুরু করে। এসব কারণে মুরিগির খামারের সংখ্যা বাড়ছেনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিম ও মুরগির মাংসের তুলনা হয়না। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্রয়লার মুরগি খুবই জনপ্রিয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভিএএসইউ) প্রফেসর ড. একেএম সাইফুদ্দিন বলেন, পোলট্র্রি ডিম ও মুরগির মাংস নিয়ে সাধারণের মাঝে অনেক ভুল ধারণা আছে। চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে খামারিদের জন্য নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও গবেষণা কাজে ছাত্রছাত্রীরা সিভিএএসইউতে আসে আবার বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরাও সেখানে নিয়মিত যাচ্ছে। এতে অভিজ্ঞতার বিনিময় ঘটছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে বিনিয়োগের অভাবে পোলট্রি শিল্পের প্রসার নেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ