পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান সময়ে দেশের আলোচিত নাম হেলেনা আক্তার ওরফে জাহাঙ্গীর। আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ‘নামসর্বস্ব’ সংগঠন গঠন করে পতন হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে সম্প্রতি পদ হারানো এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর। র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে হয়েছে তিনটি মামলা। ধূর্ত প্রকৃতির হেলেনা জাহাঙ্গীর যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে নানা ছুতোয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মরহুম প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদসহ বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে নানা ফায়দা হাসিল করেছেন হেলেনা। আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী, ২ জন কেন্দ্রীয় নেতা ও একাধিক এমপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে স্থান করে নেন আওয়ামী লীগের কমিটিতে। ২০২০ সালে প্রথমে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং ২০২১ এর জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হন। আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ গঠনের পর বহিষ্কার হন তিনি।
বর্তমান সময়েই নয়, এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছেন তিনি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার মালিক ড. মাহফুজুর রহমান তার সাথে গান গাইতে চান বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরপর ড. মাহফুজুর রহমান মোবাইল ফোনে হেলেনাকে ধমক দেন ও নানা কটূক্তি করেন। যার ফোন রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এছাড়া জয়যাত্রা টিভি নামক আইপি টিভিতে উপস্থাপনা করার সময় কথা বলা, বাচনভঙ্গি নিয়েও ট্রল হয়েছেন হেলেনা। প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়া কোন এমপি মন্ত্রী কাউকে গোনেন না বলে বক্তব্য দেয়া, জয়যাত্রা টিভির সাংবাদিক নিয়োগে অর্থ নেয়া, চাকুরীজীবি লীগের পদ বিক্রিসহ নানা অপকর্ম নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনায় তিনি।
তবে হেলেনার রাজনৈতিক যোগাযোগের উত্থান হয় জয়যাত্রা টেভিশনের টকশো’র মাধ্যমে। বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও ছোট বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করেন টকশো’র অতিথি করার মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কে জয়যাত্রা টিভির উপদেষ্টা ঘোষণা করার পর থেকে রাজনৈতিক অতিথির সংখ্যা বাড়তে থাকে টকশোতে। এই জিনিসটিকেই কাজে লাগান হেলেনা। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, পরে মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নেন। হেলেনা বিভিন্ন সময় বলেছেন, আমি এমপি মন্ত্রী কাউকে গুনি না, অনেক এমপি আছে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমি কাউকে পাত্তা দেইনা। গত শুক্রবার হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেছে র্যাব। ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। এ ছাড়া তার বাসা থেকে মাদক, বিদেশি মুদ্রা ও বন্যপ্রাণীর চামড়া জব্দের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন ছাড়া জয়যাত্রা নামক টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনার কারণে আলাদা টেলিযোগাযোগ আইনে পৃথক পাঁচটি মামলা করা হবে। এর মধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।
র্যাব জানায়, প্রতারণার জাল বিস্তার করার জন্য হেলেনা খুলে বসেন জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশন। ওই টেলিভিশনের কোনো অনুমতি ছিল না বলে র্যাব জানিয়েছে। রাজধানীর পল্লবীতে দুইটি ফ্ল্যাটে তিনি ওই টেলিভিশন খুলেছিলেন। টেলিভিশনের জন্য হেলেনা ২০ লাখ টাকা খরচ করে স্টুডিও নির্মাণ করেছিলেন। মিডিয়া কেন্দ্রিক প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে টেলিভিশন তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে ওই ভুয়া আইপি টিভির জন্য তিনি ৮০০ সাংবাদিক নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু ঢাকা শহরে তার সাংবাদিকের সংখ্যা ২০০ জন। বিভাগীয় শহরগুলোতে ২৫ জন করে ওই টিভির সাংবাদিক তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও জেলা ও থানা কেন্দ্রিক ওই টিভির সাংবাদিক নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। হেলেনা র্যাবের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, জেলা কেন্দ্রিক সাংবাদিক নিয়োগে তিনি ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। তাদের তিনি একটি করে জয়যাত্রা টিভির আইডি কার্ড দিয়েছেন। ২ বছরের চুক্তিতে ওই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কোনো মাসিক বেতন দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন। তা সত্তে¡ও তার ভুয়া টিভিতে লোকজন জয়েন করেছে।
তবে হেলেনার শুরুটা একটু ভিন্ন ভাবে। ২০১৫ সালের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে পোস্টারিং করে ছেয়ে ফেলেন ঢাকা শহর। তখন সবাই তার পোস্টার দেখলেও তার সম্পর্কে কেউ কিছুই জানতো না। কোন দল করে না করে এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট কথা বলেন নি হেলেনা। প্রচার প্রচারণার জন্য ধূর্ত হেলেনা কাজে লাগিয়েছেন ‘আসল বিএনপির’ মূখপাত্র কামরুল হাসান নাসিমকে। কামরুল হাসান নাসিমের তথ্য ও পরামর্শে পোস্টারিং, প্রচার প্রচারণা করে আলোচনায় আসেন হেলেনা। যদিও পরবর্তীতে নাসিমের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় হেলেনার। ডিএনসিসির নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান, পরবর্তী উপ-নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন, ২০২০ সালের ডিএনসিসি নির্বাচন, সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চান হেলেনা।
নানা ভাবে আলোচনায় থাকতে চাইতেন হেলেনা। সেজন্য গড়ে তোলেন হেলেনা ফাউন্ডেশন, হেলেনা শিশু কল্যাণ সংঘ, হেলেনা সেবা সংঘ, হেলেনা আলোর দিশারী ফুটবল ক্লাব, হেলেনা সারগাম একাডেমি, হেলেনা চক্ষু হাসপাতাল ও জয়যাত্রা অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডটকমসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ভাঙিয়ে তিনি সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন কাজের তদবির করে আর্থিক সুবিধা নিতেন। সূত্র জানায়, হেলেনার সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে যাতায়াত ছিল অবাধে। সচিবালয়ে যাতায়াত করতে পাস পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হতো না। বিশেষ করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল।
সূত্র জানায়, জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান হেলেনা। আর ওই টিভি পরিচালনা করতো শাহদাৎ ও সুমন নামে দুই ব্যক্তি। হেলেনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা পলাতক রয়েছে। হেলেনা যেখানেই যেতো তার সঙ্গে আরও দুইটি গাড়ি তাকে এসকর্ট করে নিয়ে যেতো। গাড়িতে লাগানো থাকতো ছোট ফ্ল্যাগ। এ ছাড়াও হেলেনা যেখানেই যেতেন তার সঙ্গে ২ জন সুন্দরী থাকতো। তারা হেলেনার ব্যক্তিগত সহকারী এবং নিজেদের জয়যাত্রা টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। তারাও গাঢাকা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, রাত হলেই হেলেনা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব পাড়ায় বিচরণ করতেন। হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তিনি ১২টি ক্লাবের সদস্যপদে রয়েছেন। রাত হলেই ঢাকার একাধিক ক্লাবে যাতায়াত করতেন। গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্লাব ও বারিধারা ক্লাবে যাতায়াত ছিল তার।
হেলেনা নিজেকে সিস্টার হেলেনা পরিচিত করার জন্য ঢাকা এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছে। এজন্য তার লোকজন তাকে সিস্টার বলে ডাকতেন। কেউ তাকে ম্যাডাম বা স্যার বললে তিনি তাদের সিস্টার বলে ডাকার আদেশ দিতেন বলে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন। সূত্র জানান, বাংলার মাদার তেরেসা উপাধি পাওয়ার জন্য হেলেনা নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন হেলেনা ফাউন্ডেশন। তবে সেটি প্যাড সর্বস্ব। সেটির কোনো কার্যালয় ছিল না। কুমিল্লার একাধিক এলাকায় ৪ বার গরিব লোকদের আর্থিক সহযোগিতার ফটোসেশন করে তিনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছেন। হেলেনা মূলত আলোচনায় আসেন চাকরিজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ঘোষণা দিয়ে পোস্টার ছাপানোর পর। পোস্টারে মাহবুব মনির নামে এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। মনির এখন লাপাত্তা। তাকে খুঁজছে র্যাব। চাকরিজীবী লীগ এ সদস্যপদ দেয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগেই তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম কুমিল্লা জেলায়। জানা যায়, বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সুবাদে তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। লেখাপড়া করেছেন স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা। ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে। তারপর থেকে তার নামের পাশে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। বর্তমানে তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীর নামেই পরিচিত। বিয়ের কয়েক বছর পর মিরপুরে ভাড়া করা দুটি রুম নিয়ে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেখেন সফলতার মুখ। ব্যবসার কারণে পরিচিত হতে থাকেন সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে। ব্যবসায়িক সফলতা বিস্তারের পাশাপাশি তার বিচরণ হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। জয়যাত্রা গ্রুপের ব্যানারে একে একে গড়ে তোলেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসায়িক পরিচয়: বিয়ের ৬ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১-তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে হেলেনা শুরু করেন প্রিন্টিং ও এম্ব্রয়ডারি ব্যবসা। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে তিনি গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্ট লিমিটেড, জেসি এম্ব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবক’টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে। তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।