Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসির ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আজ কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়ার পরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৬০০ ইউপির ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। গতকাল ভেটিং শেষে ইসি সচিবালয়ে এসেছে সংশোধনী বিধিমালা। ভেটিংয়ে ইসির দুই ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রার্থিতা বাতিল এবং দলের জরিমানা পরিমাণে যে ক্ষমতা ইসির ছিল তা খর্ব করা হয়েছে। এদিকে গতবারের মোট ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ দেয়া হলেও ব্যবহার করা হবে পুরোনো সরঞ্জাম। আর ইসির ক্ষমতা খর্ব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইসিতে।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের আলোকে নির্বাচনী বিধিমালা ও আচরণবিধি ভেটিংয়ে পাঠায় ইসি। ভেটিং শেষে গতকাল মঙ্গলবার ইসি সচিবালয়ে আসে বিধিমালা। আজ তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে পারে। একই সাথে এ নিয়ে কমিশনে মিটিং ও তফসিলের চূড়ান্ত রূপরেখা হতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইসির প্রেরিত বিধির বেশকিছু ধারা পরিবর্তন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বহুল আলোচিত প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে রাজনৈতিক দলকে জরিমানা করার ক্ষমতা।
চূড়ান্ত বিধিতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকছে না। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলবিধি লঙ্ঘন করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা অর্থদ-ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ইসি সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তফসিল আগামী বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে আগামীকাল (আজ বুধবার) কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফাঁকেও এক দফা নির্বাচন হতে পারে। বিকেল থেকে রাতে প্রচারণা হওয়ায় পরীক্ষায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান জাবেদ আলী। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা এসেছে জানালেও বিধিমালায় ইসির ক্ষমতা খর্ব নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এর আগে জাবেদ আলী জানিয়েছিলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবারের নির্বাচনী বিধিমালা এলে আমরা বৃহস্পতিবার তফসিল দেব। মার্চ মাসের ২৬ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার চিন্তা করছি।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকারভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছে রয়েছে। আচরণবিধিতে বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে প্রার্থিতা বাতিলে কমিশনের প্রস্তাবিত ধারার বিষয়ে আপত্তি থাকায় এখন আইন ও বিধি অনুযায়ী, বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় জেল-জরিমানার মধ্যে দ- সীমাবদ্ধ থাকবে। আইন ও বিধি প্রয়োগের সবকিছুই রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর নির্ভর করছে। কমিশনের কাছে প্রার্থিতা বাতিলের কোনো ক্ষমতা থাকছে না।
এদিকে ক্ষমতা খর্ব করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ইসি সচিবালয়ে। যদিও কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নারাজ। তাদের মতে, মতে অন্যান্য স্তরের মতো এই স্তরেও ক্ষমতায় দেওয়া হলে আচরণবিধি পরিপালনে অধিক সচেতন থাকত প্রার্থীরা। ক্ষমতা খর্ব করার ফলে আচরণবিধি পরিপালনের ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেবে না প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘœ হতে পারে। আবার কারো মতে, যেহেতু ইতিহাসে এই ক্ষমতার কোনো প্রয়োগ হয়নি, ফলে এটি নিয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল বলেন, আচরণ বিধিমালা সংশোধনীতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের হাতে রেখে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে ওই ধারাটি বাদ দেয়া হলে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
এদিকে এবারেও ভিভিআইপিদের তালিকায় রাখা হয়েছে সংসদ সদস্যদের। ফলে তারা প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। ইসির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। ফলে এই রিট নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আটকে দিতে পারে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ওই ক্ষমতা রাখা নিয়ে কমিশনে বিরোধ দেখা দেয়। মতামত দিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী বলেছেন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থাকলেও তা কখনও করা হয়নি। অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের বাইরে এমন বিধান রাখা ঠিক নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে ইসি প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত বিধি যুক্ত করে প্রস্তাবিত ইউপি আচরণবিধি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পাঠায়।
আচরণবিধির ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড বা লিখিত প্রতিবেদনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে বলে ইসির কাছে প্রতীয়মান হলে তা তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে ওই প্রার্থী অযোগ্য হতে পারেন বলে কমিশন সন্তুষ্ট হলে তাৎক্ষণিক আদেশে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে ইসি।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানান, ইউপি ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনার জন্যে চেকলিস্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। বিধিমালা জারির পর স্থানীয় সরকার বিভাগের তালিকা নিয়ে কমিশন সভায় উপস্থাপনের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপের উপকূলীয় এলাকার সাড়ে সাতশ’ ইউপি ও পরে বাকিগুলোর ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানায়, নির্বাচনের জন্য প্রথম ধাপের ৭৭৪টি ইউপির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব ইউপির বেশিরভাই উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকার। তবে পুলিশের মতামতের ভিত্তিতে এই সংখ্যা কমিয়ে চারশ করা হতে পারে। যদিও এ নিয়ে ইসি সচিবালয় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এছাড়া কয়েকটি ধাপে সাড়ে চার হাজার ইউপি নির্বাচনের জন্য ৬শ’ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার জন্য ২৩০ কোটি টাকা এবং আইন-শৃঙ্খলা খাতের জন্য ৩৭০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইসির আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ৩ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা নিবে। ফলে মার্চের শেষ সপ্তাহে ভোটের আয়োজন করবে ইসি। এইচএসসি পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তাদের মতে, ইউপি নির্বাচনে বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকে প্রচারণা নির্দিষ্ট। তাই পরীক্ষার মাঝে নির্বাচন হলে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না।
তাছাড়া পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তারা প্রথম ধাপে কম সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন দিতে মত দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রথম দফায় ৬০০ ইউপিতে আগামী বৃহস্পতিবার বা রোববার তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে পৌর নির্বাচনের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউপি নির্বাচনের পক্রিয়া শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। চলছে তদবির।
এর আগে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে মোট আটবার। সর্বশেষ ২০১১ সালে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল প্রথম দফায় প্রায় ছয়শ ইউপিতে ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ মে থেকে ৫ জুলাই তিন হাজার আটশ’র বেশি ইউপিতে নির্বাচন করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসির ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ