Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যার চরিত্র ভালো : খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২১, ১২:০৩ এএম

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো। (মিশকাত শরীফ)। নৈতিক চরিত্র ঈমানের পূর্ণঙ্গতা লাভের শর্ত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (তিরমিজি শরীফ) অন্য হাদীসে উত্তম চরিত্রকে পুণ্যের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরকালীন জীবনে সাফল্য লাভ করতে চাইলে নৈতিক চরিত্র অনুসরণের বিকল্প নেই। গতকাল মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। অধিকাংশ মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার ওপর মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেন।

ঢাকা বাংলা মোটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে আমরা এক অস্থির সময় পার করছি। মানুষের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। সমাজ-রাষ্ট্র সর্বত্র একই চিত্র। মানুষের মনুষত্ববোধ, সামাজিক দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতাবোধ হ্রাস পেয়েই চলছে। মা-বাবা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সন্তানরা কাক্সিক্ষত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করছে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নৈতিকতার চরম স্খলনকে এর জন্য দায়ী করে থাকেন অনেকেই।
খতিব বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদীসে নৈতিক চরিত্র অনুসরণের গুরুত্ব আলোচিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো কোনো জিনিস মানুষকে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি ও সচরিত্র। আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, কোনো জিনিস বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি শরীফ) অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে প্রাসাদ নির্মাণের জন্য জামিন হব। (আবু দাউদ শরীফ)।

পার্থিব জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলেও নৈতিকতা অনুশীলনের বিকল্প নেই। নতুন প্রজন্মকেও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, নৈতিকতা চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, জীবনের প্রতিটি স্তরে নৈতিকতা চর্চার তৌফিক দান করুনÑআমীন!

বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান গতকাল জুমা বয়ানে বলেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে আমাদের আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হাঁচি দিতেন, তখন হাত বা কাপড় দ্বারা চেহারা ঢেকে নিতেন এবং আওয়াজকে ক্ষীণ করতেন। আজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞাপন সেই পরামর্শই দিচ্ছে। যা দেড় হাজার বছর আগে নবী (সা.) শিখিয়েছেন। পেশ ইমাম বলেন, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ চার পাশেই ছড়িয়ে পড়ছে। সুরা রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে। আল্লাহ তাদের তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান। যাতে তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। তিনি বলেন, এই মহামারি ও বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ঈমান ও আমলকে সংশোধন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। এ জন্য খাঁটি তওবাহ করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, বিপদগস্ত অসহায় মানুষের প্রতি সহায়তার হাত নিয়ে আরো বেশি মানবিক হতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুনÑ আমীন!

ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম গতকাল জুম্মার খুৎবায় বলেন, জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করা ও দুনিয়ার জীবনে আত্মার প্রশান্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার জিকির অনেক বড় আমল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, তোমারা অধিক পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার জিকির করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো (সুরা জুমুআ আয়াত-১০)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর অধিক জিকিরকারী পুরুষ ও নারী তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার (সুরা আহযাব আয়াত ৩৫)। নবী কারীম (সা.) বলেন, সকল বাক্যের মধ্যে এ চারটি বাক্য সর্বোওম। সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আল্লাহু আকবর। (মুসলিম শরিফ) আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব সময় তার জিকির করার সৌভাগ্য দান করুন। আমীন! ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মারুফ বিল্লাহ গতকাল জুমার খুৎবায় ‘সুন্দর আচরণ’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাদীসে এসেছে, পরস্পর হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও ইবাদত হিসেবে গণ্য। রাসুল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন মোমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারি আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে তাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে (তিরমিজি : ৪/৩৬২-৩৬৩)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা পরিত্যাগ করে, হাসি-মস্করাচ্ছলেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আর যার আচরণ-ব্যবহার সুন্দর আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি। (আবু দাউদ (৪/২৫৩)। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সবার সাথে সুন্দর আচরণ করার তৌফিক দান করুনÑ আমীন!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসুলুল্লাহ (সা.)
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ