পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিকল্পনা মাফিক নির্মাণ করতে হবে : প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম
বছিলা সেতু ভাঙার নির্দেশনা এখনো পাইনি : প্রকৌশলী আবদুস সবুর
‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ হিন্দি ভাষার এই প্রবাদটি যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনার বদলে খামখেয়ালিভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি সহায়তা না করে ভুল পরিকল্পনা, ভুল নকশা প্রণয়ন করে জনগণের টাক্সের টাকায় সারা দেশে শত শত সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত, নিচু সেতু, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা সেতু, ভুল নকাশা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করেই নির্মাণ করা ৮০৫টি সেতু এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। অথচ উন্নত দেশগুলোতে পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় একটি সেতুর মেয়াদ একশ’ থেকে দেড়শ’ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। ভেঙে ফেলতে হচ্ছেন এমন সেতুগুলোর নির্মাণের দায়িত্ব থাকা অযোগ্য কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতা, খামখেয়ালিপনা আর অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দেশকে জনগণের ট্রাক্সের শত শত কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন যাদের দুর্নীতি-অযোগ্যতা ও খামখেয়ালির কারণে এখন এই সেতুগুলো ভাঙতে হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে? নাকি ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ প্রবাদের মতো জনগণের টাকার এভাবে অপচয় চলতেই থাকবে?
জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে প্রতিটি সেতু পরিকল্পনা মাফিক নির্মাণ করতে হবে। সেতু নির্মাণের সময় উচ্চতা ঠিক রাখতে হবে যেন সেতু নিচ দিয়ে কার্গো চলাচল করতে পারে। নুতন প্রকল্পের আওতায় ৮০৫টি সেতু ভাঙতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে উচ্চতা ঠিক রাখতে হবে। যেমন বছিলা সেতু ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্ষার কারণে কার্গো জাহাজগুলো সেতুর নিচে দিয়ে যেতে পারে না। সেটি আরো উঁচু করতে হবে। বছিলা এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত সেতুটি প্রায় ৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ৭০৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতু শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু নামে পরিচিত।
জানা গেছে, সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অপরিকল্পিত, নিচু সেতু, মেয়াদ উত্তীর্ণ আবার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্রিজ, ভুল পরিকল্পনার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেতুগুলোর কারণে কার্গোসহ অপেক্ষাকৃত বড় ধরনের জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। ফলে নদী তথা পানি পথ কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত বসিলা সেতুসহ ৮০৫টি সেতু ভাঙতে হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছে যাচ্ছে। সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, কারিগরি সহায়তা, সম্ভব্যতা যাচাই এবং নশকা প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজে ভুল রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে নির্মাণ পদ্ধতি কিছুটা জটিল হলেও নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামো হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতা ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে আওতাধীন সারা দেশে মোট মহাসড়ক রয়েছে ২২ হাজার ০৯৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯৯টি জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৯০৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার। এসব সহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের ও দৈর্ঘ্যরে ৪ হাজার ৪০৪টি সেতু, ১৪ হাজার ৮১৪টি কালভার্ট এবং ৩৯টি ফেরিঘাটে বিভিন্ন ধরনের ৭১টি ফেরি চলাচল করছে। মহাসড়ক যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের যুযোপযোগী ও সময় সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে সওজ অধিদফতর ১০টি জোন ২২টি সার্কেল ৫৬টি বিভাগ এবং ১২৯টি উপবিভাগ এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করে আসছে।
বান্দরবানে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রুমা সাঙগু সেতু ২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আর্থিক সংকটের কারণে চার কিলোমিটার সংযুক্ত সড়কের নির্মাণকাজ না হয়নি। তিন বছর পরে তা করা হয়। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর ইনকিলাবকে বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী গতকাল বক্তব্য দেয়ার পরে আমরা সচিব স্যারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমাদের কতটা সেতু ভাঙা হবে তার সঠিক তথ্য নেই। আমাদের সকল সেতুর কাজ কারিগরি সহায়তা, সম্ভব্যতা যাচাই এবং সঠিক নশকা প্রণয়নের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২ হাজার ১৫০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৪২৫ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সে সময় বলা হয়, ভুল পরিকল্পনার মাশুল দিতে ভাঙতে হবে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী (বসিলা সেতু সেতুসহ ৮০৫টি সেতু। যথেষ্ট উচ্চতা অনুযায়ী নির্মাণ না করায় বর্ষার সময় সেতুর নিচ দিয়ে কার্গো চলাচল করতে না পারার কারণে এসব সেতু ভেঙে পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৪৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন সেতু পুনর্নির্মাণ-পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
বছিলা সেতু ভাঙা প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, বছিলা সেতু ভাঙার বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানতে পারব।
বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার চারপাশের চারটি নদীতে ১৩টি সেতু রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বুড়িগঙ্গা প্রথম ও দ্বিতীয়, বসিলা, আমিন বাজার, বিরুলিয়া, ধৈৗড়, প্রত্যাশা, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গীর রেলওয়ে, কায়েতপাড়া, ডেমরার সুলতানা কামাল ও কাঁচপুর সেতু। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা প্রথম ও দ্বিতীয় এবং কাঁচপুর সেতু ছাড়া বাকিগুলোর নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে জাহাজ চলাচল করতে পারে না।
জানা গেছে, রাজধানীর যানজট কমাতে ২০০৪ সালে প্রথম সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি নামানো হয়েছিল। তারপর ২০১০ সালে ২৮ আগস্ট দুটি ওয়াটার বাস নামানো হয়। কিন্তু যাত্রীর অভাব এবং ওয়াটার বাসে ত্রুটির কারণে সেবাটি সচল রাখা যায়নি। এরপর তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে আরও চারটি ওয়াটার বাস নামানো হয়। কিন্তু কিছুদিন চলার পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, সমন্বয়হীন পরিকল্পনার না থাকার কারণে নৌপথ কখনও একা টিকে থাকতে পারে না। এর সঙ্গে সড়কের একটা সমন্বয় বা কানেকটিভিটি থাকতে হবে। অনেক সম্ভাবনা থাকার পরেও একটির সঙ্গে আরেকটির সংযোগ ও সমন্বয়হীনতার অভাবে সড়কের যানজটের ভার কমানো যাচ্ছে না।
এদিকে স্থানী সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলজিইডি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করলেও পরবর্তীতে এর কাজের পরিধি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। এলজিইডি পল্লী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৪টি বড়, মাঝারি এবং ছোট সেতু নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে অনেক সেতু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, কারিগরি সহায়তা, সম্ভব্যতা যাচাই এবং ভুল নকশায় প্রণয়নে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।