পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : সরে গেছে জঞ্জাল। মাথার উপর অবারিত আকাশ। সবুজ পাহাড়, গাছগাছালি মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে বন্দরনগরী। নগরীর টাইগারপাস মোড়ে দাঁড়ালে দেখা যাবে অন্য রকম এক নান্দনিক চট্টগ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে প্রাচ্যের রাণী। কদিন আগেও ওই এলাকা ছিল ঢাউস সব বিলবোর্ড, ফেস্টুন আর ব্যানারে ভরা। ঢেকে গিয়েছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দম বন্ধ হয়ে আসা, সে অবস্থার অবসান হয়েছে।
মহানগরীর প্রায় প্রতিটি মোড় ও পয়েন্টের চিত্র এখন এ রকম। সারি সারি বিলবোর্ড নেই। নেই ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারের জঞ্জাল। পাহাড় আর সমুদ্রে ঘেরা বন্দরনগরীর চেহারা এখন একেবারেই পাল্টে গেছে। খোলা আকাশ মুক্ত পাহাড় সবুজ বৃক্ষের সারি ভিন্ন এক আবহের সৃষ্টি করেছে। টাইগারপাস মোড়ের মতো মহানগরীর চৌমুহনী মোড়, আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়, এক্সেস রোড, বারিক বিল্ডিং মোড়, জিইসি মোড়, ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট মোড় থেকে শুরু করে সবকটি মোড় এখন জঞ্জালমুক্ত। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, ইউনিপোল সরিয়ে ফেলায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে এসব এলাকার পাহাড় আর গাছগাছালি। শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে অক্সিজেন মোড়, কর্ণফুলী সেতু থেকে সিটি গেইট কোনো সড়কেই নেই বিলবোর্ডের জঞ্জাল। সড়কের দুই পাশে বড় বড় বিলবোর্ড, সড়ক বাতিতে লাগানো ফেস্টুন, ব্যানার, ইউনিপোল সবকিছু উচ্ছেদ করা হয়েছে।
নগরীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জঞ্জালমুক্ত উন্মুক্ত মোড় ও পয়েন্টে অন্য এক মহানগরীর চিত্র। আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের ব্যবসায়ী কাজিম উদ্দিন বলেন, বিশাল সাইজের বিলবোর্ডে পুরো এলাকা ঢেকে গিয়েছিল। দৃষ্টিনন্দন সব ভবন সেইসাথে গাছপালা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চাপা পড়েছিল বিলবোর্ডে। জঞ্জালমুক্ত হওয়ায় এখন অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দম বন্ধ অবস্থা থেকে যেন মুক্তি পেয়েছে নগরবাসী।
টাইগারপাসের বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, বিলবোর্ডের আড়ালে টাইগারপাস এলাকার দৃষ্টিনন্দন পাহাড় আর সবুজ বৃক্ষরাজি ঢাকা পড়েছিল। জঞ্জাল সরে যাওয়ায় মুক্ত পাহাড় সবুজ গাছের সারি দেখা যাচ্ছে। এসব সড়কে যাতায়াতকারী লোকজন মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। চট্টগ্রাম যে সত্যিই দৃষ্টিনন্দন মহানগরী এখন তা বুঝা যাচ্ছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে হবে।
কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশেরাও বেজায় খুশি। একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, বিলবোর্ড আর ইউনিপোলের জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সমস্যা হত। দূরের অনেক কিছুই দেখা যেত না। এখন সে সমস্যা নেই। এতে করে গাড়ি চালকদেরও সুবিধা হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি রাত থেকে মহানগরীর সব ধরনের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তাদের সাথে মাঠে নামে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা অভিযানে উচ্ছেদ করা হয়েছে ছোট-বড় ১ হাজার ২৩১টি বিলবোর্ড। বড় সাইজের বিলবোর্ডের পাশাপাশি আরও কয়েক হাজার ব্যানার, ফেস্টুন, ইউনিপোল অবৈধ সাইনবোর্ড, পোস্টারও উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে।
সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, পুরোপুরি জঞ্জালমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ কোনো বিলবোর্ড বসানোর সাথে সাথে তা উচ্ছেদ করা হবে। মহানগরীর নান্দনিক পরিবেশ বিনষ্টকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সিটি করপোরেশনও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তাদের হিসেবে নগরীতে বিলবোর্ড রয়েছে ছয় হাজারের বেশি। সব বিলবোর্ডই অপসারণ করা হবে। এজন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নতুন কোনো বিলবোর্ডের অনুমোদন দেয়নি করপোরেশন। এছাড়া পুরোনো বিলবোর্ডের রাজস্ব আদায়ও বন্ধ রাখা হয়েছে।
মহানগরীতে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনের উৎপাত চলেছে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে। বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ডে ঢেকে যায় গোটা মহানগরী। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পয়েন্ট থেকে শুরু করে সড়কবাতি, সড়কদ্বীপ এমনকি ফুটপাতেও বসে ঢাউস সব বিলবোর্ড, ইউনিপোল। কেপিআই খ্যাত সরকারি স্থাপনাগুলোও বাদ যায়নি বিলবোর্ডের উৎপাত থেকে। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে গড়ে তোলা ভাস্কর্যগুলোও ঢাকা পড়েছিল বিলবোর্ড আর ব্যানারের জঞ্জালে। সরকার দলীয় লোকজনের প্রত্যক্ষ মদদে অবৈধ বিলবোর্ডের জমজমাট ব্যবসা চলে। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। দুর্নীতি উঠে চরমে।
বিগত ২০১০ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এম মনজুর আলম অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ শুরু করে। প্রথম দিনেই বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের ধারা নিজ অফিসে অবরুদ্ধ হন তিনি। হামলা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতে। বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ। ৫ বছর মেয়র থাকাকালে দফায় দফায় অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। দেড়বছর আগে সিএমপির কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল বিলবোর্ড উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন। শুরুতে কিছুটা সফল হলেও একপর্যায়ে রাজনৈতিক চাপে পিছু হটেন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আ জ ম নাছির উদ্দীন বিলবোর্ডমুক্ত মহানগরী গড়ার উদ্যোগ নিয়েও কয়েক দফা হোঁচট খান। এরপর মধ্য জানুয়ারি থেকে গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ার অংশ হিসেবে সর্বশক্তি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরকে ঘিরে শুরু হয় ক্রাশ প্রোগ্রাম। আর এতে সফল হন সিটি মেয়র।
এদিকে বিলবোর্ডের জঞ্জালমুক্ত হলেও মহানগরীর অধিকাংশ রাস্তা বেদখলমুক্ত করা যায়নি। এতে করে নগরবাসীর দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না। নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কের ফুটপাত বেদখল হয়ে গেছে। যত্রতত্র পসরা সাজিয়ে বসেছে হকারেরা। সড়কের দুইপাশে বাস-ট্রাক আর যানবাহনের সারি। কোনো কোনো এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী রেখে দখল করা হয়েছে সড়ক ও ফুটপাত। মহানগরীকে জঞ্জালমুক্ত করতে ফুটপাত দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেও তা চলছে ধীর গতিতে। নগরবাসীর প্রশ্ন ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত হবে কবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।