পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : তিনি পেশায় মোটরসাইকেল চোর। তার বিরুদ্ধে ১৮টি চুরির মামলা। সিআইডি সদস্যের মোটরসাইকেল চুরির জের ধরে ওই বাসায় হানা দেয় সিআইডি। সেখানে গিয়ে চোখ কপালে উঠে সিআইডি সদস্যদের। বাসাটি যেমনি আলিশান তেমনি সিসিটিভি দ্বারা সুরক্ষিত। সাতটি ক্যামেরায় বাসার আশপাশের সব দৃশ্য মনিটর হয় ঘর থেকে। মনিটরের সাথে সংযোগ আছে তার মোবাইলের। দরজায় লাগানো শক্তিশালী দূরবীক্ষণ। বাইরে থেকে কারা আসছে তা সহজে ধরা পড়ে ক্যামেরায়। ঘরের বাইরে থাকলেও মোবাইলে সবকিছু দেখতে পান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার আশরাফিয়া হাউজিং সোসাইটির ওই বাসাটিতে থাকেন পুলিশের তালিকাভুক্ত মোটরসাইকেল চোর নাসির উদ্দিন। মঙ্গলবার রাতে একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় ওই বাসায় অভিযান চালায় সিআইডি। চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে গিয়ে পাওয়া গেল গুলিসহ বিদেশি পিস্তল। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি ছোরাসহ মোটরসাইকেল চুরির সরঞ্জাম। তবে এসময় নাসির উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। সিআইডি ধারণা করছে সিসি টিভিতে অভিযান টের পেয়ে সটকে পড়েছে সে। আটক করা হয়েছে তার স্ত্রী রোকসানা আক্তারকে (২৪)।
সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) আবদুর রহমান খান জানান, রোকসানার স্বামী নাসির উদ্দিন মোটরসাইকেল চোরচক্রের সদস্য। সিআইডির একটি টিম চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে তার বাসায় যায়। এসময় রোকসানা বাসায় ঢুকতে ও তল্লাশিতে বাধা দেন জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, বাসার একটি আলমারি থেকে সাতটি গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও একটি কিরিচ উদ্ধার করা হয়। ওই বাসাটি ছিল সিসি টিভি দ্বারা সুরক্ষিত।
চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধ দমনে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আবাসিক এলাকা ও বাসাবাড়িতে সিসি টিভি লাগাতে জনগণকে উৎসাহিত করছে পুলিশ। পুলিশের উদ্যোগেও নগরীর বিভিন্ন স্পটে বসানো হয়েছে সিসিটিভি। তবে পুলিশের হাত থেকে নিজেকে রক্ষায় কোন অপরাধীর বাড়িতে সিসিটিভি লাগানোর ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। নিজের বাড়িতে সিসিটিভি বসিয়ে সিআইডির হাত থেকে আপাতত রক্ষা পেলেও যে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চুরি করেছে সে বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে তার ছবি রয়ে গেছে। ওই ছবির সূত্র ধরেই তার বাসায় অভিযান চালায় সিআইডি।
গত ১৯ আগস্ট খুলশী আবাসিক এলাকা থেকে সিআইডির এক সদস্যের বাসা থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়। এর তদন্তে নেমে চুরির সঙ্গে নাসিরের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় নাসির স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বাসার ভেতরে-বাইরে সাতটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো আছে বলে জানান তিনি। নাসিরের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় মোটরসাইকেল চুরির ১৮টি মামলা আছে বলে জানিয়ে আব্দুর রহমান বলেন, তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
এদিকে রোকসানা জানান, ব্যবসায়ী পরিচয়ে নাসির তাকে বিয়ে করে। নিজের সম্মতিতে নাসিরকে বিয়ে করায় মেনে নেননি বাবা-মা। বিয়ের পর রোকসানা জানতে পারেন, নাসির ব্যবসায়ী নয়, একজন মোটর সাইকেল চোর। তাদের বাসা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি কিরিচ ও চারটি ছোরা, একটি কাটার, হাতুড়ি, প্লাস ও তিনটি রেঞ্জ এবং একটি সিসিটিভি কন্ট্রোলার।
খুলশী আবাসিক এলাকার নাহার ম্যানশনের ওই বাড়ি থেকে একসাথে দু’টি মোটরসাইকেল চুরি হয়। একটি হচ্ছে সিআইডি সদস্য আজিজুল ইসলাম ও অপরটি পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা পলাশ রায়ের। ওই বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় নাসির অপর এক সহযোগীকে নিয়ে বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে ঢুকে। এরপর দু’টি মোটরসাইকেলের লক খুলে তারা তা নিয়ে পালিয়ে যায়। নাহার বিল্ডিংয়ের সিসিটিভিতে সংরক্ষিত ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিআইডি দেখতে পায়, নাসির নিজেই তালা কেটে মোটর সাইকেল চুরি করেছে।
এরপর সিআইডি আরও তথ্য পায়, গত আগস্টে নাসির কর্ণফুলী সেতু এলাকায় একজনের পায়ে গুলি করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযানে থাকা সিআইডির আরেক এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাসায় নাসির ছিল না। আমাদের কাছে তথ্য ছিল স্টিলের আলমিরায় অস্ত্র এবং মোটর সাইকেল চুরির যন্ত্রাংশ আছে। কিন্তু রোকসানা কোনভাবেই আমাদের আলমিরা খুলতে দিচ্ছিল না। আধাঘণ্টা পর বাড়িওয়ালাসহ প্রতিবেশিদের ডেকে এনে তাদের সামনে আমরা আলমিরা খুলে সেখান থেকে পিস্তল-গুলিসহ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করি।
সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রোকসানা জানান, নাসিরের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। আর রোকসানাদের বাড়ি নগরীর হালিশহর এলাকায়। সাত বছর আগে নাসিরের হাত ধরে পালিয়ে যায় রোকসানা। হালিশহরে নাছিরের একটি মোটর গ্যারেজ আছে বলে জানত রোকসানা। কান্নাজড়িত কন্ঠে রোকসানা বলেন, পালিয়ে আসার পর জানতে পারি, সে আগেও একটি বিয়ে করেছিল। সেটার সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে। তার এক ছেলে-এক মেয়ে আছে। বিয়ের পরই জানতে পারলাম, আসলে তার কোন গ্যারেজ ছিল না। সে একজন মোটরসাইকেল চোর।
রোকসানার ঘরে এক ছেলে আছে। তিন সন্তানকে লালনপালন করছে রোকসানাই। অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়ে জানত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার অস্ত্র আর গুলি এনে নাসির আলমারিতে রেখেছে। আমি জানতে চাওয়ার পর ঝগড়া শুরু করে সে। তারপর আমাকে সে মারধর করে। সিআইডি টিমকে আলমারি খুলতে বাধা দিয়েছিল কেন জানতে চাইলে প্রথমে নিরুত্তর থাকেন রোখসানা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নাসির আমার স্বামী। তার ভাত খাই। বেঈমানি ক্যামনে করি? রোকসানার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসআই জাহাঙ্গীর আনাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।