ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো: খোরশেদ আলম দুলাল
কর্মহীন নারী-পুরুষ এবার গৃহপালিত পশু লালন-পালনের জন্য ঋণসহায়তা পেয়েছে এবং মানসিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার মানসিকতায় বলিয়ান হয়েছে। এর অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সামাজিক প্রভাব আমরা সবাই কম-বেশি লক্ষ্য করছি এবং আগামীতে লক্ষ্য করবো। এ ধারা ধরে রাখার জন্য পশু পালন সংক্রান্ত বিষয়গুলো যারা দেখভাল করেন তাদের সবসময় সজাগ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈঠকী আড্ডায় প্রায়ই বলা হতো, ভারত যদি সীমান্ত খুলে গরু আসার সুযোগ না দেয় তাহলে বাংলাদেশের মুসলমানদের অনেকেই কোরবানি দিতে পারবে না দাম বাড়ার কারণে। বলা হতো ভারত থেকে শাড়ি, থ্রি পিস না এলে ঈদ করতে পারবে না বাংলাদেশের মানুষ। এমতাবস্থায়, কিছুতেই ভারতকে রাগানো যাবে না। ভারতমুখী হয়েই থাকতে হবে। এরকম আরো অসংখ্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালীসামগ্রী নিয়ে মানুষকে দুশ্চিন্তায় থাকতে দেখেছি। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি, এবার পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, দেশবাসী সম্পূর্ণ দেশের পালিত গরু দিয়েই নির্বিঘেœ কোরবানির ঈদ সম্পন্ন করেছে এবং অত্যন্ত সহনীয় দামে গরু-ছাগল ক্রয় করতে পেরেছে। শুধু ভারত নয়, মিয়ানমার থেকেও আগে আমাদের দেশে বৈধ-অবৈধ পথে অনেক গরু আসত। সরকারের ভারতপ্রীতির কারণে অনেকেই কোরবানির গরুর চালান সম্পর্কে যেমন ওপরের কথাটি বিশ্বাস করত, তেমনি সরকারের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতির কারণে সেই ধারণাটিও পাল্টে গেছেÑ এ কথাটি মানতেই হবে। দেশের যুবসমাজ, প্রান্তিক চাষি বা গবাদি পশু পালনকারীরা যাতে গো-খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সাশ্রয়ী মূল্যে পায় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই সঙ্গে সম্ভব হলে প্রতি উপজেলায় একটি করে পশু হাসপাতাল বা পশু রোগ নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে পশু পালনকারীরা অনেক বেশি উৎসাহিত হবে। দেশের কত প্রকল্পই তো অলাভজনক হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এখানেও সরকার কিছুু ভর্তুকির ব্যবস্থা করে পশু সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা দিতে পারে।
ভারতের বিজেপি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলমানদের খুবই প্রয়োজনীয় এই গরু নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। অকারণে বাংলাদেশে গরু যেতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এমন ভাব দেখিয়ে ছিলেন, যেন তারা গরু আসতে না দিলে বাংলাদেশের মুসলমানরা চড়া দামেও গরু কিনতে পারবে না। এখানে একটা হাহাকার সৃষ্টি হবে। এটা অমূলক ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আসলে ক্ষমতায় থাকার জন্য বা নির্বাচনে জয় পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতারা যেসব অপকৌশলের আশ্রয় নেন তা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমান বিজেপি সরকারের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে হিন্দু-মুসলমান বিতর্ককে চলমান রাখা। যখন যে রাজ্যে প্রয়োজন সেখানেই এই হিন্দু-মুসলমান বিতর্ক জুড়ে দিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা। যা হোক, গরু নিয়ে অপরাজনীতি বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে এনেছি। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতমুখী প্রবণতা থেকে মানুষকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুবিধা করে দিয়েছে। গ্রামের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে গরু লালনপালনের জন্য। আশা করি, এই সফলতা ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশের মানুষ। কিছু দিন আগে অর্থাৎ গত ঈদুল ফিতরের সময় চট্টগ্রামের একটি বড় শপিংমলের শাড়ির দোকানের মালিকের সাথে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম বর্তমানে ভারতীয় চ্যানেলের যে সিরিয়ালগুলো হচ্ছে তার পাত্রীদের গায়ে যেসব দৃষ্টিনন্দন শাড়ি দেখা যায় তার বেশীরভাগই নাকি বাংলাদেশ থেকে যায়। বিশ্বাস হচ্ছিল না ওই ব্যবসায়ীর কথা। কি করে সম্ভব? এযাবৎ শুনে আসছি ভারতীয় শাড়ি এবং থ্রি-পিসের কথা, গৃহিণীরা দোকানে গেলেই জিজ্ঞেস করতেন ভারতীয় শাড়ি এবং থ্রি-পিসের কথা। আর সেখানেই কি না এখন জানতে পারছি বাংলাদেশের শাড়ি পরেই ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর চাকচিক্য বাড়ছে। এটা সত্যি হলে অবশ্যই গর্ব করার বিষয়। যদিও বাংলাদেশের জামদানি শাড়ির কথা আলাদা। আসল কথা হলো, সৎচেষ্টা থাকলে সৎসাহস থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা তথা সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও খুবই জরুরি। গরুর মতো শাড়ি, থ্রি-পিসের ব্যাপারেও যদি আমরা ভারতমুখী মনোভাব থেকে ফিরে আসতে পারি তাহলে তা হবে এ জাতির জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিজয়। কেননা তাদের তখন কথায় কথায় আমাদের সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলার সুযোগ কমে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে হয়রানির শিকার হচ্ছে তার কারণও কিন্তু ভারতনির্ভরতার। দেখা গেছে, ভারত ভ্রমণকারীদের অধিকাংশই যান ভারতীয় চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য। ভারতীয়দেরও বলতে শুনেছি, বর্তমানে কলকাতায় যেসব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে তার মান যথেষ্ট সন্তোষ নয়, যদিও কিছু ব্যতিক্রমও আছে। ওই দেশে ছুটে যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হচ্ছে, সে দেশের ডাক্তারদের কৌশল অর্থাৎ তারা আচার-আচরণ দিয়ে এ দেশের রোগীদের রোগ অর্ধেক নিরাময় করে দিচ্ছেন বা ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের মন জয় করে নিচ্ছেন। অথচ জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ডাক্তাররা দক্ষতার দিক দিয়ে ভারতীয় ডাক্তারদের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে আছে শুধু মানসিকতার দিক দিয়ে। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এ দেশের ডাক্তাররা ভারতীয় ডাক্তারদের মতো যদি রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারেন তাহলে দেশের রোগীরা ভারতীয় ডাক্তারদের চেয়ে বেশি সেবা ভোগ করতে পারবে। দেশীয় সম্মানিত ডাক্তাররা যদি রোগীর ব্যাপারে আর একটু সচেতন তথা একটু বেশি মনোযোগ দেন তাহলে দেখা যাবে এ দেশের মানুষের ভারতীয় ডাক্তারদের ওপর নির্ভরতা অনেক কমে যাবে। তাতে দেশের অনেক বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে এবং কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতীয় ভিসারও প্রয়োজন হবে না। আসলে সবকিছু নির্ভর করে সৎসাহসের ওপর, উদার মানসিকতার ওপর। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এ কথা অসত্য নয়। ওপরে যে কয়টি বিষয় নিয়ে আলাপ করলাম এগুলোর কারণেও তো ভারতে বাংলাদেশের অনেক বৈদেশিক মুদ্রার খরচ করা হতো। যদি গরু পালনের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা আর একটু স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই এর ফল সমগ্র দেশবাসী ভোগ করব। যাত্রা শুরু করি না হয় গবাদিপশু উৎপাদনের বিপ্লব দিয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।