পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এবার দেশি গরুতেই ঈদ উল আযহার কোরবানি সম্পন্ন করেছেন দেশের জনগণ। ভারতীয় বা অন্য কোন দেশ থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। বরং অনেক দেশীয় গরু এবার বিক্রি হয়নি, উদ্বৃত ছিল হাটে। গরু বিক্রি করতে না পেরে কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরেছেন অনেক বেপারী। এছাড়া অনেকেই লোকসানে গরু বিক্রি করেছেন। গত ঈদে একদিন আগেই পশুর হাট ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। শেষ দিকে অনেক বেপারী দ্বিগুণ দামে গরু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবার ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেও গরু বিক্রি করতে পারেননি অনেকেই। প্রথম দিকে বেশি দামে গরু বিক্রির আশায় দাম ছাড়েনি বেপারীরা। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রেতা সংকটে বিপাকে পড়ে যান তারা। শুরুতে যেই দাম উঠেছিল পরে সেই দামেও গরু বিক্রি করতে পারেনি বেপারীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে গরু ও ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে অনেকেই কোরবানি দিতে না পারায় এবার অনেক গরু ছাগল বিক্রি হয়নি। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই যারা একা কোরবানি দিতেন তারা ভাগে কোরবানি দিয়েছেন। ফলে এ হিসেবেও গরু কম বিক্রি হয়েছে।
এবারের ঈদে সবচেয়ে ভাইরাল হয়েছে কুষ্টিয়া থেকে নিয়ে আসা গরু ‘মনু’। গরুর মালিক একজন পর্দানশীল মহিলা রিনা বেগম। এই প্রথম দেশের কোরবানির হাটে কোন মহিলা গরু বিক্রি করতে এসেছেন। গাবতলীর হাটে তোলা ২৮ মন ওজনের এই গরুর দাম প্রথমে রিনা বেগম চেয়েছিলেন বিশ লাখ টাকা। দাম কমতে কমতে একজন ১০ লাখ টাকা বললে রিনা বেগম ১২ লাখ টাকার কমে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে গরু কেনার জন্য আর কেউ দাম বলেনি। ঈদের একদিন আগে রিনা বেগমের কান্না জড়িত কণ্ঠে গরুটি বিক্রির আবেদন মন কাড়ে দেশবাসীর। তিনি বলেন, এই গরু বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি তার সন্তানদের পড়ালেখা করাবেন। কোন হৃদয়বান ব্যক্তি যেন তার গরুটি কিনে নেন। আল্লাহ একজন অবশ্যই পাঠাবেন যিনি ন্যায্য দামে গরুটি কিনে নিবেন। কিন্তু এরপরও বিক্রি হচ্ছিল না তার গরুটি। রিনা বেগমের ভিডিও দেখে এক মা তার সন্তানকে বলেন নিজেদের কোরবানির বাজেট একটু বাড়িয়ে গরুটি যেন কিনে বাসায় আনেন এবং রিনা বেগমের কষ্ট দূর করেন। সবশেষ মায়ের নির্দেশে ঈদের আগের রাতে ৫ লাখ টাকায় গরুটি কিনে নেন মোহাম্মদ পিয়াস নামের এক ব্যক্তি। পিয়াস বলেন, কোরবানির বাজেট ছিল দেড় লাখ টাকা। মায়ের ইচ্ছা পূরণে এবারই প্রথম এতো বড় গরু কোরবানি দিলাম। সর্বশেষ গরুটি বিক্রি করতে পেরে রিনা বেগম বেশ খুশি হয়েছেন এবং তার গরুটি বিক্রির জন্য যারা দোয়া করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
শুধু রিনা বেগম নন, অনেক বেপারী শুরুতে গরুর দাম বেশি উঠলেও তারা বিক্রি করেননি আরো বেশি দামের আশায়। শুরুতে অতিরিক্ত দাম বলে বেপারীরা ক্রেতাদের কাছে কটুক্তিও শুনেছেন। বেপারীরাও আশায় ছিল গত ঈদের মত এবারও তারা লাভবান হবেন। কিন্তু হল হিতে বিপরীত। যেই গরুর ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেননি সেই গরু পরে ২ লাখে বিক্রি করেছেন। আবার অনেকে বিক্রিই করতে পারেননি।
চাকুরিজীবি নুরুল ইসলাম তার বাড়ির সামনে দনিয়া হাটে ঈদের দুইদিন আগে একটি গরুর দাম বলেছিলেন ১ লাখ টাকা। কিন্তু গরুর বেপারী সেই দামে গরুটি বিক্রি করেনি। পরে ঈদের আগের দিন রাতে সেই গরু আশি হাজার টাকায় বিক্রি করেন সেই বেপারী। এছাড়া আরো দুটি অবিক্রিত গরু নিয়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়া ফিরে যান। ফেরার সময় নুরুল ইসলামের সাথে বেপারীর দেখা হলে সেই দামে বিক্রি না করার জন্য আফসোস করেন।
যেসব বড় গরু হাটে শেষ দিকে ছিল সেসব বেপারীরা নিরবে কেঁদেছেন। কারণে যারা বড় গরু কিনেন তারা আগে ভাগেই কিনে রাখেন। অনেক বেপারী লোকসানে গরু বিক্রি করেছেন। আবার অনেকেই এবার বিক্রিই করতে পারেননি।
সিরাজগঞ্জের খামারি আউয়াল মিয়া জানান, বাড়িতে গরুর বেপারি এসে তার দুটি ষাঁড়ের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা বলেছিল। কিন্তু আরও বেশি দামের আশায় এলাকার পাঁচজন খামারির সঙ্গে ট্রাক ভাড়া করে গরু নিয়ে ঢাকায় পশুর হাটে তিনি যান। সেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় নেওয়ার মতোও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই গরু দুটি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।
এদিকে গরু বিক্রি করতে না পেরে অনেক বেপারী পড়েছেন বিপাকে। চড়া সুদ নিয়ে এলাকা থেকে গরু কিনে হাটে এনেছিলেন। কিন্তু অবিক্রিত ছিল গরু। পাবনার বেড়া উপজেলা দেশের অন্যতম গরু পালনকারী এলাকা বলে পরিচিত। খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী এবার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে উপজেলায় অন্তত ১৫ হাজার গরু লালন-পালন করা হয়েছিল।
স্থানীয় ও বাইরের গরু ব্যবসায়ীরা ঈদুল আযহার মাসখানেক আগে থেকেই গরু কেনা শুরু করেন। এই এলাকায় এবার শতাধিক ব্যক্তি গরু ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাদের অনেকেই চড়া সুদে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গরুর ব্যবসায় নেমেছিলেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী গরু পালনকারীদের কাছ থেকে বাকিতেও গরু কিনেছিলেন। কিন্তু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের গরুর হাটে গিয়ে তারা কেনা দামেও গরু বিক্রি করতে পারেননি। কেউ কেউ লোকসানে কিছু গরু বিক্রি করে বাকিগুলো ফিরিয়ে এনেছেন। এ অবস্থায় পাওনাদাররা গরু ব্যবসায়ীদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এতে অনেক গরু ব্যবসায়ীই পাওনাদারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন।
বেড়া পৌর এলাকার শম্ভুপুর মহল্লার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ৪৯টি গরু নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পশুর হাটে নিয়ে গিয়েছিলাম। লোকসানে ৩০টি গরু কোনোরকমে বিক্রি করেছেন। বাকি ১৯টা গরুই ফিরিয়ে এনেছেন। সব মিলিয়ে তার ১৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
মোমিনুল ইসলাম ৭৭টি গরু ঢাকার তিনটি পশুর হাটে নিয়ে গিয়েছিলেন। ২৮টি বিক্রি করে বাকি ৪৯টি গরু ফিরিয়ে এনেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।