Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসরাইলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস কি বাংলাদেশেও ব্যবহৃত হয়েছে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২১, ৫:০৩ পিএম

ইসরাইলে তৈরি একটি স্পাইওয়্যার কিনে তা দিয়ে বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং আরো অনেকের ওপর গোপন নজরদারি নিয়ে এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট নিয়ে তোলাপাড় চলছে এখন। বিশ্বের ১৭টি প্রথম সারির মিডিয়া, সাংবাদিকতা বিষয়ক প্যারিস-ভিত্তি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ এবং সেইসাথে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের পুরোটা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

অনুসন্ধানে যেসব দেশে ব্যাপকহারে এই নজরদারি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে তেমন ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারতের নাম রয়েছে। তবে তালিকা আরো লম্বা কিনা তা এখনো অপরিষ্কার। বিশ্বের প্রায় যে প্রায় ৫০টি দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি মোবাইল ফোনে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান এনএসও’র তৈরি পেগাসাস নামের সফটওয়ারটি ঢুকিয়ে নজরদারির নজির এই অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে তাতে বাংলাদেশের কোনো টেলিফোন নম্বর রয়েছে কিনা তা এখনও অস্পষ্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট, যারা এই অনুসন্ধান প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার, সোমবার প্রকাশিত তাদের এক রিপোর্টে বাংলাদেশের নাম লেখা হয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের ঐ রিপোর্টে ‘কারা এনএসও’র ক্রেতা?’ – এ উপ-শিরোনামে (সাব- হেড) ৪৫ টি দিশের নাম লেখা হয়েছে যেখানে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারি হয়েছে বা হচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই তালিকায় ভারত, পাকিস্তানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার আর যে দেশটির নাম রয়েছে তা বাংলাদেশ। তবে এই তালিকার সূত্র হিসাবে নাম করা হয়েছে সিটিজেনস ল্যাব নামে ক্যানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলা হয়েছে।

২০১৮ সালের তালিকায় বাংলাদেশ : জানা গেছে, সিটিজেনস ল্যাব, পেগাসাসের ব্যবহার নিয়ে তাদের ২০১৮ সালের এক অনুসন্ধানের পর প্রথম বাংলাদেশের নাম করেছিল। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কোনো দেশে কোনো মোবাইল ফোনে পেগাসাসের উপস্থিতি পাওয়ার অর্থ এই যে সেদেশের সরকারই পেগাসাসের ক্রেতা।’ ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত রিপোর্টে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য না দেয়া হলেও, সরকারের একজন মন্ত্রী পেগাগাস কেনা বা ব্যবহারের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

সরকারের টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে উদ্ধৃত করে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার লিখেছে, ‘টেলিযোগাযোগ বিভাগ বা তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এই ধরণের কোনো স্পাইওয়্যার কেনেনি। কেনার কোনো প্রশ্নই আসেনা… বাংলাদেশের মানহানির চেষ্টা হচ্ছে।’ সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক তাসনিম খলিল, যিনি অনেকদিন ধরে বাংলাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি পর্যবেক্ষণ করেন, বিবিসি বাংলাকে বলেন, তার জানা মতে পেগাসাসের ব্যবহার নিয়ে সর্ব-সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশে এটির সরাসরি ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নেত্র নিউজ ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক বলেন, যে ১৭টি মিডিয়া এই অনুসন্ধানী প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিল তাদের একটির সম্পাদক তাদেরকে জানিয়েছেন পেগাসাস ঢোকানো হয়েছে এমন কোনো বাংলাদেশী মোবাইল ফোনের সন্ধান তারা পাননি। তবে এই অনুসন্ধানে যে ৫০ হাজারের মত টেলিফোন নম্বরে পেগাসাস ঢোকানোর আলামত পাওয়া গেছে সেগুলো কোন কোন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে বা হয়েছে তার পুরো তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

অবশ্য চলতি বছরের গোড়ার দিকে কাতারের আল জাজিরা টিভি তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলে নজরদারির জন্য বাংলাদেশ গোপনে ইসরাইলি প্রযুক্তি কিনেছে – যে খবর নিয়ে সেসময় দারুণ হৈচৈ হয়। জানুয়ারির শেষ দিকে প্রচারিত আল জাজিরার এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকসিক্স নামের একটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের তৈরি ইমসি ক্যাচার নামে এই যন্ত্র দিয়ে ওয়াই-ফাই, সেলুলার এবং ভিডিও নজরদারি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি হয় এবং ২০১৯ সালে পূর্ব ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে দু'জন ইসরাইলি গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর চারজন বাংলাদেশি গোয়েন্দাকে প্রশিক্ষণ দেয়। আল জাজিরা তাদের প্রমাণ হিসাবে নথিপত্র-ছবি-ফুটেজ প্রচার করে, তবে বাংলাদেশে সরকার অবশ্য সেসময় তা অস্বীকার করে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্পাইওয়্যার পেগাসাস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ