পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যথাযথ ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে সারাদেশে ১৪৪২ হিজরী সনের পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাবিত হচ্ছে। ঈদ জামাত শেষে মোনাজাতে আল্লাহ হুম্মা আমীন আল্লাহ হুম্মা আমীনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে মসজিদগুলো। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারও রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি অনুরসণ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। অনেক মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার উপর ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা কোরবানির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফযিলত সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করেন। মসজিদে মসজিদে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, দেশ-জাতির সুখ-শান্তি উন্নতি এবং মুসলিম উম্মার সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাতে মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি না করেই মুসল্লিরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রচুর মুসল্লিার সমাগম ঘটে। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাতে প্রচুর মুসল্লি অংশ নেন।
কোরবানির দিন আদম সন্তানের কোন আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়। কেয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং পশম খুরসহ (হাশরের ময়দানে) হাজির হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব সন্তুষ্ট চিত্তে কোরবানি করতে হবে। আজ বিভিন্ন মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ সকালে ঈদুল আজহার খুৎবাপূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, কোরবানি হযরত ইবরাহিম আ. এর আদর্শ বা সুন্নাত। কোরবানি এক মাত্র মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। প্রতি বছর ত্যাগের শিক্ষা নিয়েই আমাদের মাঝে কোরবানি আসে। পেশ ইমাম বলেন, মহান আল্লাহপাক কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মার জন্য কোরবানিকে ওয়াজিব বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। ইসলামের রীতিনীতি অনুসরণ করেই কোরবানির ওয়াজিব বিধান পালন করতে হবে। আমাদের অর্জিত সম্পদকে মানুষের কল্যাণে দেশ-জাতির কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, কোরবানির পশু জবাইয়ের কোন গোশত, রক্ত হাড় কিছুই আল্লাহর নিকট পৌছে না। একমাত্র তাকওয়াই আল্লাহর নিকট পৌছে। তিনি গরীব মিসকিনদের হক যথাযথভাবে আদায়ে গুরুত্বারোপ করেন। ঈদ জামাত শেষে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, দেশ-জাতির সুখ-শান্তি এবং মুসলিম উম্মার সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময়ে মুসল্লিরা কান্নাকাটি করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম মিল্লাতের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট নেয়ামত। ত্যাগ বিসর্জনের মাধ্যমেই এতে প্রতিটি মুসলিম আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করে থাকেন। কোরবানির শিক্ষা নিয়ে শুধু পশু জবেহ নয়, বরং নিজের ভেতরের পশুত্বকে জবেহ করতে হবে। মনের সকল প্রকার কুপ্রবৃত্তিকে খতম করার দৃঢ. প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে। এ দিনে যেমন নিজেদের আনন্দের সাথে গরিবদের শামিল করার লক্ষ্যে কোরবানির গোশতের কিছু অংশ তাদের মাঝে বন্টন করা হয় ঠিক তেমনি ভাবে অন্যান্য সময়েও তাদের জীবনে আনন্দ প্রদান, দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা আমাদের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব। খতিব আরও বলেন , পবিত্র ঈদুল আজহায় যেমন অত্যন্ত আন্তরিকতা ও ন¤্রতার সাথে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাকআত নামাজ আদায় করে নিজেদের সব ভেদাভেদ ভুলে যায়। পরস্পরে কুশল বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করে, জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময়ী এবং আন্তরিকতাপূর্ণ করে তুলে তেমনি ভাবে প্রত্যেকেরই পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের কল্যাণে, মানুষের মঙ্গলে ধর্মীয় চেতনায় উদ্যোগী ভূমিকা নেয়া উচিৎ। ঐক্যবদ্ধ ভাবে অন্যায় অবিচার,দুর্নীতি দূরাচার, স্বেচ্ছাচারিতা ও মাদকসহ সকল প্রকার চরিত্র বিধংসী, ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্ম এবং শান্তি বিরোধী কার্যকালাপের বিরুদ্ধে দূর্বার সামজিক আন্দোলন গড়ে তোলা একান্ত কর্তব্য। পরিশেষে তিনি বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও ডেঙ্গুজ্বরসহ সকল রোগব্যাধি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মহান আল্লাহর নিকট তওবা করত; স্বাস্থবিধি রক্ষা করে চলার জন্য মুসল্লিদের প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানান। ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টরস্থ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম ঈদুল আজহার খুৎবায় বলেন, তিরমিজি ও নাসায়ী শরীফ এসেছে কোরবানির দিন আদম সন্তানের কোন আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়। কেয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং পশম খুরসহ (হাশরের ময়দানে) হাজির হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব সন্তুষ্ট চিত্তে কোরবানি করতে হবে।
১০ জিলহজ কোরবানি করা উত্তম। বিশেষ প্রয়োজনে জিলহজের ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। শরীকি কোরবানিতে কোন ব্যক্তির নিয়ত অশুদ্ধ হলে সকলের কোরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। কোরবানির পশুতে আকিকা করায় কোন অসুবিধা নেই। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করুন। জবাইকারীকে ছুড়ি ধরে যারা সহযোগিতা করবে, তারাও বিসমিল্লাহি আল্লাহুআকবার বলুন। কাচা চামড়া অথবা বিক্রিত টাকা নিজ দায়িত্বে এতিম ও গরীবদেরকে পৌঁছে দিন। পশুর রক্ত ময়লা হাড়গোড় যত্রতত্র ফেলা উচিত নয়। দুর্গন্ধময় ও বিরক্তিকর দ্রব্য যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা ও মানুষকে কষ্ট দেয়া কঠিন গোনাহের কাজ। ঈদের আনন্দের নামে গান বাজনা, বেপর্দা ও অশ্লীলভাবে চলাফেরা করা হতে বেচে থাকা খুব জরুরি। আর অভিভাবকদের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব হল এ জাতীয় হারাম কাজ হতে সন্তানকে বিরত রাখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আখেরাতমুখি জীবন গঠনের শৌভাগ্য দান করুন। আমীন। দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম ঈদ জামাতের খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মুসলমানদের জন্য আজ বরকতময় ঈদের দিন। এই দিনটি আমাদেরকে হযরত ইবরাহীম আ. এর শিশুপুত্র ইসমাইল কোরবানির দিন। পশু কোরবানির মাধ্যমে আমাদের মনের পশুত্বকে কোরবানির করা। কোরবানি একান্তই আল্লাহর ওয়াস্তে করতে হবে। নিশ্চয়ই আমার নামাজ আমার কোরবানি এবং আমার জীবন মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। সূরা আনআম। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ঈদুল আজহার দিনে বনী আদম এমন কোন আমল করে না, যা আল্লাহর নিকট কোরবানি অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। আল্লাহ আমাদের সকল আমলকে কবুল করুন। আমীন। মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পূর্ব বয়ানে বলেন, বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের এক অনুপম ইবাদত পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কোরআন হাদীসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তাকিদ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানি করুন (সূরা কাওসার : ২)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (ইবনে মাজাহ)। সুতরাং সামর্থবান প্রত্যেক মুসলমানকেই কোরবানি করতে হবে। এটা ওয়াজিব। কোরবানি না করে সে অর্থ আল্লাহর রাস্তায় বা গরীব অসহায়দের দান করলে ওয়াজিব দায়িত্ব আদায় হবে না।
খতিব আরও বলেন, আমাদেরকে ঈদুল আজহার শিক্ষা ও প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে। ঈদুল আজহা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, বিবি হাজেরা ও ইসমাঈল আ. এর পরম ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত উৎসব। কোরবানির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে রাজি আছে কিনা সেটিই পরীক্ষা করা হয়। ঈমানের এসব পরীক্ষায় যার যত বেশি ইখলাস ও তাকওয়া থাকবে সে তত বেশি সফলতা লাভ করতে পারবে। কোরবানি শুধু পশু কোরবানির নাম নয়। বরং নিজের পশুত্ব, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহঙ্কার ত্যাগের নাম। নিজের নামাজ, কোরবানি, জীবন-মরণ ও যাবতীয় বিষয় কেবল আল্লাহর নামে, শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য করাই হচ্ছে প্রকৃত কোরবানি। এটা লোক দেখানো বা গোশত খাওয়ার কোন উৎসব নয়। অনেককে দেখা যায় গরিব-মিসকিনদের যথাযথভাবে কোরবানির গোশত না দিয়ে ঈদের দিন নিজেরা যৎসামান্য গোশত রান্না করে বাকিটা ফ্রিজে রেখে দেয়। এগুলো কোনো অর্থেই প্রকৃত কোরবানির পর্যায়ে পড়ে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে গোশত খাওয়ার নিয়তে বা হারাম সম্পদ দ্বারা কোরবানি করলে কোরবানি কবুল হবে না। বরং তা পশু জবাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। আল্লাহ তায়ালা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কোরবানিদাতাদের সাবধান করে দিয়েছেন, কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হজ : ৩৭)। এছাড়া আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করা ও তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ করাটাও ঈদুল আজহার অন্যতম তাৎপর্য। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।