পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে পরস্পরকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বাক্যবাণ চালিয়েছেন দুই প্রধান প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে যুক্তি ও বলিষ্ঠতায় রীতিমত আগুনে ফুলকি ঝরিয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নব্বই মিনিটের ওই বিতর্কে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, কর, বর্ণবাদ আর নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পকে বারে বারে ধরাশায়ী করেছেন তিনি। প্রথম কিছুক্ষণ ছাড়া বলতে গেলে পুরো বিতর্কেই অনেকটা নিষ্প্রভ ছিলেন রিপাবলিকান ট্রাম্প। বিতর্ক শেষে বিভিন্ন মিডিয়া ও জরিপ সংস্থার তাৎক্ষণিক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন। বিশ্লেষকরাও বলছেন, ট্রাম্পকে নিষ্প্রভ রেখে হিলারি তার পুরো সময়টি বলিষ্ঠতার সাথেই কাটাতে পেরেছেন। সিএনএন/ওআরসি’র প্রকাশ করা জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ভোটার মনে করেন হিলারি জয়ী হয়েছেন। আর মাত্র ২৭ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন।
যদিও বিতর্কের দর্শকদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ডেমোক্রেট সমর্থক প্রার্থী। ডেমোক্রেট প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রথম বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে চেয়েছেন জাতিগত বিদ্বেষ, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক আচরণ এবং কর খেলাপের মত অভিযোগ এনে।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষের মন্ত্রিত্বের দিনগুলোর কাজের সমালোচনা করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে তার আন্তরিকতা নিয়ে। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে (বাংলাদেশ সময় গতকাল সকালে) নিউ ইয়র্কের হেম্পস্টেডে হোফসট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে ৯০ মিনিটের এই বিতর্কে সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন এনবিসি টিভি’র লেস্টর হল্ট। চূড়ান্ত ভোটের লড়াইয়ের আগে আরও দু’টি বিতর্কে দেখা যাবে হিলারি ও ট্রাম্পকে।
বিবিসি জানিয়েছে, হিলারি ও ট্রাম্পের এ টেলিভিশন বিতর্ক ১০ কোটি দর্শক সরাসরি দেখেছেন। টুইটার জানিয়েছে, বিতর্কের সময় ৬২ শতাংশ ব্যবহারকারী ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করে টুইট করেছেন, হিলারির নাম লিখেছেন ৩৮ শতাংশ ব্যবহারকারী। রয়টার্সের সোশ্যাল সেন্টিমেন্ট ট্র্যাকারেও বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করছেন। বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, প্রথম বিতর্কে দুই প্রার্থী অভিবাসন নীতি, ইরাক যুদ্ধ, নিউক্লিয়ার অস্ত্র, পররাষ্ট্র নীতিসহ চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধে নামেন। ট্রাম্প আঙুল তোলেন হিলারির ইমেইল কেলেঙ্কারির দিকে। অভিযোগ করেন, হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বিস্তৃত হয়েছে। যখন এটি ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী ছিল তখন আপনি মন্ত্রী হন, আর এটি এখন ৩০টির বেশি দেশে বিস্তৃত, তখন আপনি একে থামাতে পারবেন বলে আমি মনে করি না।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেন এবং ক্ষমতায় গেলে ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করতে ইরাকের সব তেল তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন। উত্তর কোরিয়াকে থামাতে চীনের সাহায্য নেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেন রিপাবলিকান প্রার্থী। কয়েক সপ্তাহ আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হিলারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মত শারীরিক সক্ষমতা রাখেন কী না- সে প্রশ্নও তোলেন এ ধনকুবের।
অন্যদিকে, হিলারি তার বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর মধ্যে থাকা বর্ণবাদ দমনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, আহতও হয়েছেন অনেকে। সন্দেহভাজন মনে হওয়ায় পুলিশ এদের উপর গুলি করার কথা জানালেও, বেশিরভাগ সময় হতাহতদের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না বলে মার্কিন গণমাধ্যমের খবর। নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর ট্রাম্প কেন তার আয়করের খতিয়ান প্রকাশ করেননি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিলারি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের শুভাকাক্সক্ষী আখ্যায়িত করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানানোয় রিপাবলিকান প্রার্থীর সমালোচনা করেন সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বারাক ওবামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে কী না নির্বাচনী প্রচারে এমন প্রশ্ন তোলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনেন হিলারি। চলতি বছরের ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর পক্ষে কাছাকাছি জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে। বিবিসি’র সর্বশেষ জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। গার্ডিয়ান, সিএনএন, বিবিসি ও রয়টার্স।
কার কথা সত্যি?
দুই প্রার্থীর বাগ্যুদ্ধের সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোড়েন। এসব অভিযোগের কতটা সত্যি, কতটাই-বা মিথ্যা, তা যাচাইয়ের চেষ্টা করেছেন সিএনএনের ‘সত্যতা যাচাই দল’।
ওই দলে রয়েছেন সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদক, গবেষক ও সম্পাদকেরা। এই দলের সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে দুই প্রার্থীর বর্তমান ও আগের অবস্থানের বিশ্লেষণ করেছেন। যাচাই করেছেন তাঁদের বক্তব্যের সত্যতা।
প্রথম বিতর্কে জলবায়ু পরিবর্তন, কর্মসংস্থান, আবাসন, ট্রাম্পের ব্যবসা, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপÑ এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। সিএনএনের যাচাই দলের পর্যালোচনায় এসব ইস্যুতে হিলারির বক্তব্যের সত্যতাই বেশি। ট্রাম্প বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দু’জনের বক্তব্যের বিশ্লেষণ করেছেন সিএনএনের সংবাদকর্মী লরা কোরান। ক্লিনটন বলেছেন, ট্রাম্প মনে করেন, চীনারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তবে ট্রাম্প তা অস্বীকার করেন। এখন প্রশ্ন হলো, দু’জনের মধ্যে কে সত্যি, আর কে মিথ্যা বলছেন?
২০১২ সালের ৬ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, চীনাদের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর ট্রাম্প আবার টুইট করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চালাকির কারণেই জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প আবার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরও চিন্তাভাবনা করা দরকার। দুঃখের বিষয়, চীন এ নিয়ে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
মার্চ মাসে আবার কথা ঘোরান ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা সম্পাদকীয়তে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন না মানুষের কর্মকা-ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণেই এমন পরিবর্তন হচ্ছে। পরে ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, কৌতুক করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তিনি চীনকে দায়ী করেছেন। সিএনএনের যাচাই দল মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ট্রাম্প বারবার তাঁর অবস্থান বদলেছেন। চীনকে দায়ী করার বিষয়ে হিলারির অভিযোগ সত্য।
কর্মসংস্থান
বিতর্কে হিলারি বলেন, তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এক কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে সিএনএন। মুডির বিশ্লেষক মার্ক জান্দি বলেন, অর্থনীতির গতিশীলতার কারণেই ৭০ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। হিলারি উদ্যোগ নিলে আরও ৩৫ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের আরেকটি বিশ্লেষণ বলছে, হিলারির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালে দুই লাখ বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ৪০ লাখ চাকরির সুযোগ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই হিলারির বক্তব্য সত্য। তবে এতে তথ্যগত কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে।
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ
ট্রাম্পের অভিযোগ, বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) অনুমোদন করতে চেয়েছিলেন হিলারি। উত্তরে হিলারি বলেন, তিনি আশা করেছিলেন এটি ভালো চুক্তি হবে। কিন্তু চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বুঝেছেন, এটি ততটা ভালো নয়। চুক্তির দায়ভারও তাঁর নয়।
সিএনএনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, ২০১২ সালে টিপিপি চুক্তির পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন হিলারি। কিন্তু ২০১৫ সালে এসে তিনি টিপিপির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ওই সময় হিলারি এটাও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি টিপিপি প্রত্যাখ্যান করবেন। অর্থাৎ, ট্রাম্পের অভিযোগের আংশিক সত্য। হিলারি টিপিপির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এ কথা কখনো বলেননি যে তিনি সেটি অনুমোদন করবেন।
ট্রাম্পের ব্যবসা
ট্রাম্প সব সময় দাবি করেন, তিনি আত্মনির্ভরশীল। নিজের চেষ্টায় আজকের অবস্থানে এসেছেন। তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন হিলারি। তিনি বলেন, আসলে ট্রাম্প খুবই ভাগ্যবান। তিনি ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। আর এই অর্থ তিনি ধার করেছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ১৯৮৫ সালে ট্রাম্পের ক্যাসিনো ব্যবসায় নেওয়া লাইসেন্স থেকে বোঝা যায়, সে সময় ট্রাম্প তাঁর বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন। সময়টা ছিল আশির দশকের শেষে। এটা ঠিক যে ব্যবসা শুরুর সময় ট্রাম্পের কাছে মাত্র ১০ লাখ ডলার ছিল। এর পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, ট্রাম্প তাঁর বাবার কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন।
মিথ্যা তথ্যে ট্রাম্প ১৬, হিলারি শূন্য:
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফোর্বসের এক হিসাবে বলা হয়েছে, প্রথম বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তত ১৬টি মিথ্যাচার করেছেন। পক্ষান্তরে হিলারির বক্তব্যে কোনো মিথ্যা ছিল না। তবে দু-একটি অস্পষ্ট কিংবা ভিন্ন পথে প্রবাহিত হয় এমন বক্তব্য তিনিও দিয়েছেন। তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে, সামাজিক মাধ্যম যেখানে সব কিছুই মুক্ত করে দিয়েছে তখন আর কোনো কিছু গোপন থাকে না। আর সে কারণে যেকোনো মিথ্যাচার দ্রুতই প্রমাণিত হয়ে যায়। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কে যেসব মিথ্যা বলেছেন, তার অতীত মন্তব্যের যেগুলো অস্বীকার করেছেন, সেগুলোই এখন সামনে আসছে তুলনামূলক বিচারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।