পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : দেশের পুঁজি বা মূলধন বিনিয়োগে আসছে না। সেটা ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র সঞ্চয়ই হোক, অথবা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ হোক। কাগজ পত্রের হিসাবে বিপুল বিনিয়োগের চিত্র দেখানো হলেও বাস্তবে কোথাও তেমন নতুন বিনিয়োগ নেই। অথচ বর্তমান স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেশে বিপুল বিনিয়োগ হওয়ার কথা। কমতি সুদ হারেও ব্যাংকে আমানত রাখছেন ক্ষুদ্র পুঁজির মালিকরা। আর ঋণের নামে এসব অর্থ নিয়ে বিদেশে পাচার করছে একটি বিশাল চক্র। তাই খাতা-কলমে বিপুল বিনিয়োগের পরিসংখ্যান দেখা গেলেও বাস্তব চিত্র ঠিক উল্টো। এতে অর্থনীতিতে যে হারে গতি থাকার কথা ছিল তা নেই।
বর্তমানে আমানতের গড় সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশেরও কম। মূল্যস্ফীতির হার প্রায় একই। অর্থাৎ ব্যাংকে অর্থ রেখে প্রকৃত অর্থে কোন লাভ হচ্ছে না আমানতকারীদের। এরপরও তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয় ব্যবসায়ে না খাটিয়ে ব্যাংকে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন ছোট পুঁজির মালিকরা। গেল অর্থবছরে তারা ব্যাংকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি আমানত রেখেছেন আগের বছরের তুলনায়। এই চিত্র নির্দেশ করছে, ক্ষুদ্র পুঁজির মালিকরা প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে যেতে চাইছেন না।
এদিকে বেড়েছে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ৬ মাসে ব্যাংকগুলোয় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে শিল্পঋণ বিতরণের পরিমাণ। এ ঋণের বড় অংশই ব্যয় হয়েছে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে। ওই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ। শিল্প ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি দেশে বিনিয়োগের চিত্র নির্দেশ করে। তবে বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঋণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে মেয়াদি ঋণ বিতরণ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমলেও চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রচলিত নিয়মে, মেয়াদি ঋণ বাড়লে চলতি মূলধন ঋণ বিতরণও বাড়ে। কিন্তু মেয়াদি ঋণ বিতরণ কমলে চলতি মূলধন ঋণ বাড়ার কোন যুক্তি নেই। তারপরেও চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ বেড়েছে। পাশাপাশি ওই সময়ে একদিকে যেমন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমেছে, তেমনি দেশের কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ করছে, এসব অর্থ আসলে বিনিয়োগ হয়নি। চলতি মূলধন ঋণের বেশিরভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
ঋণের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি অতীতে যেটা দেখেছি ঋণের সঙ্গে বিনিয়োগ হওয়ার তেমন সম্পর্ক নেই। অনেকে ঋণ নিয়ে টাকা ভিন্ন খাতে নিয়ে যায়। তাই ঋণের টাকা কোথায় যাচ্ছে সে দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
বিনিয়োগের পরিবর্তে ঋণের অর্থ যে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তা বলা হয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা লক্ষণীয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ উপায়ে মূলধন পাচারের কারণে অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত মূলধন গঠনের অভাব রয়েছে, যা জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে বাড়তে দিচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংকের শিল্প ঋণ বিতরণ বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। তাহলে নিয়ম অনুযায়ী দেশে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়ার কথা। তবে উল্টো কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। এই পরিস্থিতি ঋণের অর্থ বিনিয়োগে না আসারই বহিঃপ্রকাশ, বলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
একটি হিসাবে দেখা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের মাত্র ৩০ শতাংশ বিনিয়োগে আসছে। বাকি ৭০ ভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। শিল্প ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দিয়ে থাকে সরকারি ব্যাংকগুলো।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মূলত বেনামী প্রকল্প এবং ভুয়া এলসির মাধ্যমেই ব্যাংক ঋণের টাকা বিদেশ পাচার হচ্ছে। এসব ঋণের অর্থ সরকার বিনিয়োগের হিসাবে আনলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। এ কারণে দেশের জিডিপি যে হারে বাড়ার কথা সে হারে বাড়ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।