Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দ শামসুল হক আর নেই

প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৭ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। লেখকের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দুই সন্তান, স্ত্রী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, বিকেলে ৫টা ২৬ মিনিটে লেখকের মৃত্যু হয়। তিনি হাসপাতালের ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের পরামর্শক ডা. অসীম কুমার সেনগুপ্তের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। লেখকের লাশ আজ বুধবার সকাল ১০টায় চ্যানেল আই কার্যালয়ে নেয়া হবে। সেখান থেকে বেলা পৌনে ১১টায় লাশ নেওয়া হবে বাংলা একাডেমিতে। এরপর বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাশ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর লাশ হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নেওয়া হবে। সেখানেই সব্যসাচী লেখককে দাফন করা হবে।
সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর খবরে বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রেসিডেন্টের শোক
সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে সৈয়দ হকের নন্দিত বিচরণ বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাকে অমর করে রাখবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, সৈয়দ শাসমুল হকের মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক সৈয়দ হকের শক্তিশালী লেখনী জাতিকে চিরদিন পথ দেখাবে। তিনি সৈয়দ হকের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল প্রখ্যাত সাহিত্যিক, কবি ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম টেলিফোনে বাসস’কে জানান, যুক্তরাষ্ট্র সফরের শেষ পর্যায়ে বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক নিয়ে এই খবর শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব জানান, সৈয়দ শামসুল হককে জাতির বিবেক হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এমন একজন লেখককে হারালো যিনি ছিলেন সত্যের প্রতি সমর্পিত। পাশাপাশি তার (সৈয়দ হক) মৃতুতে প্রধানমন্ত্রী তার একজন শুভাকাঙ্খিকে হারিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সৈয়দ শামসুল হক বাঙালী, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে এক অবিচ্ছেদ্য সত্ত্বা হিসেবে দেখেছেন এবং তার শক্তিশালী লেখনী জাতিকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সৈয়দ হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি’। তিনি বলেন, সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্ম জাতিকে সবসময় সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

অন্যান্যের শোক
এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফাজলে রাব্বী মিয়া, চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ।

এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান লেখকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। সৈয়দ হকের মৃত্যুর কারণে আজ বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন উদযাপন কমিটি আনন্দ আয়োজনটি স্থগিত করেছে। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল সৈয়দ হককে।
লেখক ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চার মাস লেখক লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে অসফল চিকিৎসা শেষে গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ঋতু পরিবর্তনজনিত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর থেকেই তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য সৈয়দ হক ১৯৬৬ সালে, মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যিক প্রতিভা কালোত্তীর্ণ। গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য, চলচ্চিত্রসহ বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কালজয়ী অবদান রেখেছেন। তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি বহুল পরিচিত নাটক বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর সৈয়দ শামসুল হক কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ শামসুল হক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী কবি তাঁর বাড়ির রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দু’লাইনের একটি পদ ‘আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/তাহার উপরে দু’টি লাল পাখি বসিয়া আছে’ রচনা করেন। এরপর ১৯৪৯-৫০ সালের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। সেখানে ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।
সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৫২ সালে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। কিছুদিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সৈয়দ শামসুল হক আর নেই

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ