Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পথে পথে ভোগান্তি

ঈদযাত্রা : বাস ও লঞ্চে উপচেপড়া ভিড় : ফাঁকা যাচ্ছে ট্রেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম

ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষের ঢল বেড়েছে। বাস ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়। তবে ট্রেনের চিত্র ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে চলছে ট্রেন। সে কারণে ভিড় নেই। এদিকে, দেশের মহাসড়কগুলোতে গতকালও গাড়ির চাপে যানজট ছিল। প্রচন্ড গরমে সেই পথে পথে সেই যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের। এদিকে, গতকালও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলাসহ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অবস্থা লঞ্চেও। সদরঘাটে গতকাল দুপুরের পর থেকে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার যাত্রী গাদাগাদি করে লঞ্চে উঠেছেন। লঞ্চের ডেকেও তারা রওনা করেছেন গাদাগাদি করেই।
গতকাল সকালে রাজধানীর শ্যামলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১ এবং গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যানজটের তীব্রতা অনেক বেশি। মিরপুর-১ ও গাবতলী থেকে আসা যানবাহনগুলো রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, আসাদগেট, ধানমন্ডি ও ফার্মগেট অভিমুখে যানজটের কারণে দাঁড়িয়ে আছে। আবার গাবতলীতে যানজটের কারণে ঢাকার বাইরে বের হতে পারছে না দূরপাল্লার বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। তার ওপর তীব্র গরম মানুষের এ দুর্ভোগ বাড়িয়েছে আরও। টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন বলেন, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল বেশি। সেই সঙ্গে গণপরিবহন ও বাড়িফেরা মানুষের চাপে যানজট দেখা দিচ্ছে। সকাল থেকেই রাস্তায় যানজট লেগে আছে। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
এদিকে, যানজটের কারণে দূরপাল্লার বাসগুলো সময়তো ফিরতে না পারায় আগের দিনের মতো গতকালও বেশিরভাগ বাস নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। সে কারণে যাত্রীদের টার্মিনাল বা বাস কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। গাবতলী টার্মিনালের একজন যাত্রী জানান, সকাল সাড়ে ৭টার বাসের টিকিট করে তিনি ভোর ৫টায় বাসা থেকে রওনা করে টার্মিনালে এসেছেন। কিন্তু এখানে চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও বাসের দেখা মেলেনি।
একই অবস্থা মহাখালী টার্মিনালেও। সেখানেও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সকালে বাসে ওঠা উত্তরাঞ্চলগামী একজন যাত্রী জানান, গাবতলী থেকে বাস ছাড়ার পর আমিনবাজারে যানজটে দুই ঘণ্টার বেশি সময় আটকে ছিল। প্রচণ্ড গরমে হাজার হাজার যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। বেশিরভাগ যাত্রীই বাস থেকে নেমে গাছের ছায়াতলে বিশ্রাম নিয়েছেন। এরপর সাভার নবীনগরে গিয়ে আবার বাস আটকে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পর সেখান থেকে ছেড়ে টাঙ্গাইল মহাসড়কে কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকে। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে গিয়ে আবার যানজট। সেতু পার হওয়ার পর ওপাড়েও ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে বাসগুলো।
একই অবস্থা যে সব গাড়ি ফেরি দিয়ে পারাপার হয় সেসব বাসেও। খুলনাগামী একজন যাত্রী জানান, গাবতলী থেকে বাস ছেড়ে কয়েক ঘণ্টা পর পাটুরিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছালে বিশাল লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। এরপর ফেরির সিরিয়াল পেতে লেগে যায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। ওপাড়ে গিয়ে ফেরি থেকে নেমে মূল সড়কে উঠতেও ঘন্টার বেশি সময় লেগে যায়। পথে পথে এ ভোগান্তি মেনে নিয়েই মানুষ ফিরছেন।
এদিকে, গতকালও বাসগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, দূরপাল্লার ক্ষেত্রে ঢাকা আশুলিয়া বাইপাইল মোড় থেকে রংপুর রুটে ৬০০ টাকার বাস ভাড়া গত দুই দিন যাবত ২১০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে রংপুর রুটে ৮৫০ টাকার বাস ভাড়া ২২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সংগঠনটির দাবি, দেশের বিভিন্ন রুটে হিউম্যান হলার, অটোটেম্পু, অটোরিকশায় বিদ্যমান ভাড়ার চেয়ে কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি বা অর্ধেক যাত্রী বহনে সরকারি নির্দেশনা থাকলে তা মানা হচ্ছে না।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন সকাল থেকে মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছে লঞ্চঘাটে। সামাজিক দূরত্ব মানা দূরের কথা মাস্ক থুতনিতে বা গলায় ঝুলিয়ে লঞ্চঘাটে ভিড়ছেন মানুষ।লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষের নজরদারি উপেক্ষা করে ঢোকার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানলেও ভিতরে এসে গাদাগাদি করে মাস্ক খুলে বসে বা দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছেন। অন্যদিকে গাদাগাদি করে যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি উপেক্ষা করে ঢাকা নদীবন্দর থেকে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করেও পারছেন না সঠিক ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদে লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করতে।
গতকাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দল বেধে পরিবারসহ মানুষ আসছেন লঞ্চঘাটে। গেটে বিআইডিডব্লিউটিএ’র লোকজনের নির্দেশে মুখে মাস্ক পরে তাপমাত্রা পরিমাপ করে টার্মিনালে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। তবে ভিতরে ঢোকার পর আর স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। লঞ্চঘাটে আসা যাত্রীরা চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখলী, হাতিয়া এবং ভোলার উদ্দেশে রওনা হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। টার্মিনালের গেটে দায়িত্ব পালন করা ঢাকা নদী বন্দরের শুল্কপ্রহরী মো রোকন বলেন, আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে টার্মিনালের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। সামাজিক দূরত্ব মেনে যাতে সবাই চলাচল করে সেদিকে খেয়াল রাখছি। যাত্রী বা যারা লঞ্চের মধ্যে কাজ করছেন তারা স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না।এমভি পূবালী-৬ এর দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য জামাল বলেন, লঞ্চে প্রবেশকালে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডেকে বসার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা সেটি মানছেন না।
অন্যদিকে, স্বাভাবিক ঈদের মতো ভিড় নেই রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে এবারের ঈদ যাত্রা অনেকটা আলাদা। শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ছাড়া স্টেশনে অন্য ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে না। এতে রেল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি খুশি সাধারণ যাত্রীরাও। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, অন্যান্য পরিবহনেও যদি এ ধরনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যেতো তাহলে করোনার সংক্রমণ কমে আসতো। স্টেশন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এ বছর করোনা মহামারির কারণে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই চলছে ঈদযাত্রা। নির্ধারিত আসনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হয়েছে। কাউন্টারে শুধু মেইল কমিউটার ট্রেনগুলোর টিকিট দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আগের মতো ভিড় নেই। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়িও নেই এবারের ঈদযাত্রাতে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারোয়ার বলেন, স্টেশন ও ট্রেনে প্রবেশের সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কোনও যাত্রীকে স্টেশন ও ট্রেনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সব যাত্রী অত্যন্ত সুন্দর ও নিরিবিলিভাবে ভ্রমণ করতে পারছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পথে পথে ভোগান্তি

১৯ জুলাই, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ