Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

প্রতারিতরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন

এএমসি’র ডিপিএম ডা. আবু বকর সিদ্দিকের নিয়োগ ও কমিশন বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারে (এএমসি) চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রায় একশ’ জনের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডিপিএম) ডা. আবু বকর সিদ্দিক। কিন্তু এদের অধিকাংশই চাকরি পাননি। অথচ এএমসি’র নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। এদিকে চাকরি না মিললেও প্রার্থীদর টাকা ফেরত দিচ্ছেন না ডা. আবু বকর সিদ্দিক। এ অবস্থায় প্রতারিতরা টাকা ফেরতের আশায় মহামারির মধ্যে এএমসিতে এসে প্রতিদিন ভীড় করছেন। বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যসহ এএমসি’র সব ধরণের কাজে চাপ দিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ডা. আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে।
এভাবে তিনি এখন বিপুল পরিমাণ অর্থ ও বিত্তের মালিক। এক সময়ে এলাকায় মোটর মেকানিক হিসেবে জীবন শুরু করা এই ইউনানী ডাক্তার মাত্র ৬/৭ বছরে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে তৈরি করেছেন বিশাল অট্টালিকা। বাবা গাড়ি চালক হলেও হঠাৎ করেই তাঁরা এখন একাধিক পরিবহনের মালিক। অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ বৈধ করতে ইউনানী ডাক্তার আবু বকর সিদ্দিক এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের ঠিকাদারী ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করেছেন। স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কঠোর হলেও অজ্ঞাত কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এক সময়ের মোটর মেকানিক এএমসি’র ডা. সিদ্দিক।
জানা গেছে, অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারের আওতায় ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ও হোমিও চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার (ইউনানী), আবাসিক চিকিৎসক (ইউনানী), প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার এসব পদে নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর চাকরির খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রার্থীরা এএমসিতে এলে ডা. সিদ্দিক তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কৌশলে প্রচার করতে থাকেন, এএমসিতে তিনি খুবই প্রভাবশালী কর্মকর্তা। ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজেও এ সংবাদ প্রচার করেন সিদ্দিক। এ খবর জানার পর চাকরি প্রার্থীরা ডা. আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর সিন্ডিকেট করে কারো কাছ থেকে ১০ লাখ আবার কারো কাছ থেকে ১৫ লাখ এভাবে টাকা আদায় করেন ডা. আবু বকর সিদ্দিক।
ডা. সিদ্দিকের এই নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ দিন ঝুলে ছিল। সম্প্রতি এসব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কিছু পদে ডা. সিদ্দিকের প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু যেহেতু ঢালাওভাবে অনেকের কাছ থেকে ডা. সিদ্দিক টাকা আদায় করেন, তাই সবার চাকরি হয়নি। তবুও বঞ্চিতদের তিনি এখনো চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশ^াস দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে চাকরি প্রার্থীরা সবাই মুখ খুলতে চাচ্ছে না। সোনার হরিণ ধরার আশায় তারা এখনো অপেক্ষা করছে। কিছু চাকরি প্রার্থী প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে এএমসিতে এসে টাকা তোলার চেষ্টা করছে। যদিও ডা. সিদ্দিক এদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।
অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক ইউনানী ডাক্তার ডা. আবু বকর সিদ্দিক টাকার জোরে স্বাস্থ্য সেক্টরের আমলাদের হাত করে রেখেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো কাজ হয় না। টাকার জোরে তিনি সচিবালয়ে প্রবেশের কার্ড পর্যন্ত বাগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে এই প্রতিষ্ঠানের লাইন ডাইরেক্টরকে (এলডি) সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে তার অধীনের একজন মেডিকেল অফিসার বুক ফুলিয়ে বলেন, তিনি যখন যতবার ইচ্ছে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেন। মুলতঃ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতেই অনৈতিক উপায়ে সচিবালয়ে প্রবেশের কার্ড সংগ্রহ করেছেন তিনি।
নিয়োগ-বাণিজ্য ও ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে ডা. আবু বকর সিদ্দিক ইনকিলাবকে বলেন, একটি চক্র তাদের স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, এএমসি’র নিয়োগে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। শতভাগ সঠিক নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি এ জন্য তিনি সদ্য বিদায়ী স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নানের সঙ্গেও কথা বলতে বলেন।
সার্বিক বিষয়ে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর মো. আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি হাসপাতালে চিবিৎসাধীন থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।##



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ১৮ জুলাই, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    যতদিন পযন্ত রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি না আসবে,এই অবস্থা চলতেই থাকবে,এই দুষকৃতকারীরা আমলাতান্ত্রিক দলীয় সংসদীয় পদ্ধতি করার এক মাত্র লুট পাঠ করে খাওয়ার জন্য করেছে,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ