পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কঠোর লকডাউন শিথিলের পর বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। কঠোর বিধিনিধেষ শিথিলের প্রথম দিনেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে টিকিটের জন্য উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন, বেশিরভাগ ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের কেবিনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও অনেকে অ্যাপসে ও ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
এদিকে, সরকার বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন খুলে দিলেও প্রথম দিনেই দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে লঞ্চে। দূরপাল্লার বাসেও এক আসন খালি রাখার নিয়ম মানছে না অনেক বাস কোম্পানি। তবে ট্রেনের ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। যদিও লোকাল ট্রেনগুলোতে এর ঘাটতি আছে। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, লোকাল ট্রেনগুলো সব স্টেশনে দাঁড়ায় এবং যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়ে। সে কারণে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
কঠোর বিধিনিষেধ শিথির করা হয়েছে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে। নতুন নিয়মে বাস- ট্রেন-লঞ্চ চলাচল করবে আট দিন। ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাজধানী ও তার আশপাশ থেকে ঘরমুখো হচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু শুরুতেই তারা বাস- ট্রেন-লঞ্চের টিকিট পেতে ভোগান্তির মধ্যে আছেন। কোথাও মিলছে না টিকিট। গতকাল সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দেশের নানা প্রান্তে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ। ঘরমুখী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার অধিকাংশ যাত্রীই টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছেন। সকাল দশটা থেকে গাবতলীতে আজকের টিকিটের জন্য ঘুরছেন রাজশাহীর চাপাইগামী যুবক বাবু (২৪)। তিনি বলেন, চাঁপাইয়ের রাজ্জাক মোড়ে যাব। সকাল থেকে গাবতলীর প্রায় প্রত্যেকটি কাউন্টারে ঘুরেছি টিকিটের জন্য। সবাই বলছে টিকিট শেষ। এত দ্রুত কিভাবে টিকিট শেষ হয়ে গেলো সেটাই তো মাথায় ঢুকছে না। এখন টিকিট না পেলে লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যেতে হবে। এটা খুবই কষ্টের যাত্রা হবে! টিকিট কাউন্টারের পাশেই বসে আক্ষেপ করছিলেন চুয়াডাঙ্গাগামী যাত্রী লিজা খাতুন (২৭)। তিনি বলেন, কাল রাতেই যদি এখানে আসতাম তাহলে টিকিট পেতাম। সবাই রাতে এসে টিকিট নিয়ে রেখেছে, তাই আমরা যারা সকালে এসেছি তারা কেউই টিকিট পাইনি। টিকিট না পাওয়ায় খুব হতাশ লাগছে। এখন আর ঢাকার বাসাতেও ফিরে যাওয়ার কোন পথ নেই। ঈদের পরে কারখানা সব বন্ধ থাকবে তাই একেবারে মেস ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে এসেছি। যেভাবেই হোক আজ বাড়ি যেতে হবেই।
ন্যাশনাল ট্রাভেলসের কল্যাণপুর টিকিট কাউন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধি সোহেল বলেন, আমরা টিকিট দিচ্ছি তো। যাত্রী চাপ বেশি থাকায় দ্রুতই টিকিট শেষ হয়ে গেছে। আজকের টিকিট তো শেষই, আগামী ১৮ তারিখ রাত পর্যন্ত কোন টিকিটও নাই। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মানানোর কোনো চেষ্টাও দেখা যায় নি। ভুক্তভোগি কয়েকজন যাত্রী বলেন, গত বছরও একই অবস্থা ছিল। লঞ্চ মালিকরা সরকারকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি পেলেই তারা সব ভুলে যায়। যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে বুধবার থেকেই শুরু হয় আগাম কেবিন বুকিং। তবে প্রভাবশালীরা ছাড়া আগাম কেবিন এখন বুকিং দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন। যাত্রীরা কেবিন চাইতে গেলেই কাউন্টারের দায়িত্বরতরা কেবিন নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন নদীবন্দরে এই অবস্থায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। গত বুধবার বরিশাল যাওয়ার জন্য কেবিন বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি যাত্রী সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জনকে ফোন করে বুকিং দেওয়ার জন্য বলছি। চেষ্টা করছি দেখি টিকিট পাই কি-না। এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন দাবি করেছেন, তাদের কোম্পানি আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে কেবিন দেয়। এবার কেবিন বুকিং শেষ হয়ে গেছে। ডেকে যাত্রীপ্রতি ভাড়া পড়বে ৪০০-৪৫০ টাকা। কেবিন ও সোফার ভাড়া বাড়েনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদুল আযহায় বাড়ি যাবার জন্য বিরাট চাপ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, সদরঘাট ও রেল স্টেশনে। যাত্রীর তুলনায় টিকিট কম থাকে স্বাভাবিক সময়েই। এখন একসঙ্গে অনেক যাত্রী বাড়ি যেতে চাচ্ছেন, তাই সংকট তীব্র হয়েছে। এই সংকট পুঁজি করে সংশ্লিষ্টরা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
এদিকে রাজধানীর গাবতলী, কলেজ গেট, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও তার আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারে টিকিট নেই, টিকিট নেই রব উঠেছে। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস পরিচালনা করতে হবে। একটি বাসের মোট আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী বহন করতে হবে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস চালাতে হবে বলে স্বাভাবিক সময়ে যে সংকট থাকে এবার এই সংকট আরও বেশি হবে। তবে কাউন্টার ও অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় টিকিট কম। এছাড়া একক সময়ে সার্ভারে বেশি চাপ পড়ছে। ফলে কোনো কোনো সময় বিপর্যয় তৈরি হচ্ছে। তবে এই অবস্থা কেটে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ট্রেনে মোট আসনের বিপরীতে ৫০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হবে। এর বেশি টিকিট বিক্রি করা হবে না। ঈদ মৌসুমে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। মোট আসনের বিপরীতে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করার নির্দেশনা মানতে হবে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম যাত্রী পরিবহন করতে হবে। স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন করা হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।