Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মেধাহীনের শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ফারুক হোসাইন : শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ক্লাসে পড়ান। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাসে শুধু পড়ান না; তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন, তত্ত্ব উদ্ভাবনা করেন, আবিষ্কার করে দেশকে নতুন পথ দেখান, জাতিকে উচ্চতায় নেন। সে কারণেই ‘সেরাদের সেরা’রাই হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের আগে নিজ নিজ বিভাগে মেধাতালিকায় শীর্ষ থাকা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, গবেষণা, প্রবন্ধ, প্রকাশনা এবং উচ্চতর ডিগ্রিকে মূল্যায়ন করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর দুটি কমিটির যাচাই-বাছাই, মৌখিক পরীক্ষা ও সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্বের নামকরা অক্সফোর্ড, হার্ভাডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের এ রেওয়াজ প্রচলিত। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা নেয়া ও পুলিশের ভেরিফিকেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে সরকারের এ প্রস্তাবনাকে মেধার ওপর খড়গ হিসেবে অবিহিত করেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এ ধরনের উর্বর চিন্তা মেধা বিকাশে বাধাই শুধু নয়; দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও পুলিশি ভেরিফিকেশন কেন? পুলিশি ভেরিফিকেশনের নামে কি দলবাজীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে হবে? এতে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন, আবিষ্কার, প্রকাশনা হ্রাস পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া এ নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিক্ষকরা এমন নির্দেশনা মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীন দেশে এটা কোন নিয়ম হতে পারে না। বৃটিশ আমলে এধরনের নিয়ম ছিল। পরাধীন দেশের সেই নিয়ম স্বাধীন দেশে হয় না। প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে শিক্ষকদের চরমভাবে অপমান করা হবে। শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা ও পুলিশের ভেরিফিকেশন হাস্যকর। পৃথিবীর কোন দেশে এই ধরনের নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই। জঙ্গিবাদ দমনে এমন চিন্তা হাস্যকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম শিক্ষক নিয়োগে এধরনের নির্দেশনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী নয়, দলীয় কর্মী নিয়োগের জন্য এধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
অন্যান্য দেশের মতো একইভাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি বিভাগে মেধা তালিকায় শীর্ষ থাকা শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল, গবেষণা, প্রবন্ধ, প্রকাশনা এবং উচ্চতর ডিগ্রিকেও মূল্যায়ন করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। দুটি কমিটির যাচাই-বাছাই, মৌখিক পরীক্ষা ও সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পরই নিয়োগ দেয়া হয় শিক্ষকদের। স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রামসহ সবকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়ম মেনে চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চিরাচরিত এই নিয়মকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে সচ্ছতা এবং অনিয়ম দূর করার অজুহাতে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। একইসাথে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনেরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে এবং সচ্ছতার সাথে পরিচালিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রতিথযথা-বরেণ্য শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশনা জারির পরপরই তা না মানার ঘোষণা দিয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দিতে পারে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়।
তবে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষক নিয়োগে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে তারা উল্লেখ করেছেন দেশের প্রবীণ শিক্ষাবিদরা। পরাধীনতার সময় (ব্রিটিশ সরকার ও পাকিস্তান সরকারের প্রথম দিকে) যে ব্যবস্থার প্রচলন ছিল তা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অন্য কোন উদ্দেশ্যও খুঁজছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষকদের চরমভাবে অপমান করা হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশনের স্বাধীনতা পূর্ব নিয়মে চলে গেলে সময় ও সুযোগ বুঝে দলীয়করণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে মেধাবীদের একটা বড় অংশই বাদ পড়ে যাবে। এছাড়া এই নিয়োগে বাণিজ্যেরও সুযোগ তৈরি হবে।
লিখিত পরীক্ষা ও পুলিশের ভেরিফিকেশনের বিষয়টিকে শিক্ষাবিদেরা হাস্যকর উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে এই ধরনের নিয়ম নেই। জঙ্গি প্রতিরোধে প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণেরও পরামর্শ দিয়েছেন। পরাধীন দেশের নিয়ম স্বাধীন কিভাবে হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, এর মাধ্যমে যোগ্যপ্রার্থীদের বাদ দিয়ে দলীয়করণ করা হবে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা তাদের মতাদর্শের লোকদেরকে নিয়োগ দেবে। কোন না কোন সময় এই নিয়মটির চরম অপব্যবহার হবে। যার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থা।
বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি বিভাগে শীর্ষ স্থান অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বাছাই করে একাডেমিক (প্রথম) কমিটি একটি তালিকা নিয়োগ কমিটির কাছে প্রেরণ করে। নিয়োগ কমিটি সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে অধিকতর যোগ্যপ্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য আহ্বান করে। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেটে প্রেরণ করা হয়। সিন্ডিকেট সেই প্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়ে সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সচ্ছতা আনতে সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ায় অনিয়ম ও যোগ্যপ্রার্থী বাদ পড়ছে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়। এমন অবস্থায় সম্প্রতি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়। নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনেরও তাগিদও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে পাওয়া গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) এসব নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একইসাথে সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত ‘অপরাধীদের’ নিয়োগ ঠেকাতে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসি সচিবকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়ে, ইদানিং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অনভিপ্রেত অবস্থার সমাধানকল্পে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে পাওয়া গোয়েন্দা বিভাগের গোপনীয় প্রতিবেদনে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে দু’টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়, এতে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে প্রার্থীর মেধা যাচাই করা সহজ হবে এবং অনিয়মের সুযোগ হ্রাস পাবে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্বে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন বা গোয়েন্দা সংস্থা মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যাদি যাচাই হয় না। ফলে সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত ব্যক্তি বা অপরাধীরা নিয়োগের সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের আগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে নিয়োগ করা যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এসব নির্দেশনা অনুসরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তা মন্ত্রণালয়কে জানাতে ইউজিসিকে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা দেয়ার পরপরই বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাবিদেরা। বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ উল্লেখ করে তারা বলেন, এক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেই। এছাড়া সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে ক্ষেত্রে নির্দেশনা নয়, বরং পরামর্শ দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
দেশের প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে শিক্ষকদের চরমভাবে অপমান করা হবে। কেননা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনার্স ও মাস্টার্সে পরীক্ষা নেয়, এখানেই মেধার মূল্যায়ন করা হয়। নতুন করে পরীক্ষা নেয়া হলে, শিক্ষার্থীরা একাডেমিক লেখাপড়ায় নিরুৎসাহিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের ভেরিফিকেশন বিষয়ে তিনি বলেন, এই নিয়ম স্বাধীনতার আগে ছিলো। এই নিয়ম আবার চালু হলে সময়ের উপর নির্ভর করে কেউ কেউ সুবিধা নেবে। যে যার মতো ব্যবহার করে দলীয়করণের সুযোগ থাকবে। এ কারণে মেধাবীদের একটা অংশ বাদ পড়ে যাবে। শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ বিপজ্জনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শিক্ষক নিয়োগে পুলিশের ভেরিফিকেশনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাধীন দেশে এটা কোন নিয়ম হতে পারে না। আমরা যখন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ছিলাম, এর পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের প্রথমদিকে এধরনের নিয়ম ছিল। পরাধীন দেশের সেই নিয়ম স্বাধীন দেশে হয় না। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে যোগ্যপ্রার্থীদের বাদ দিয়ে দলীয়করণের একটা সুযোগ তৈরি করে দেয়া হবে। যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তারা কেবল তাদের মতাদর্শের লোকদেরকে নিয়োগ দেবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে মেধাবীরা। পৃথিবীর কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেরিফিকেশন এবং লিখিত পরীক্ষার কোন নিয়ম নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চার বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে শীর্ষ স্থান অর্জন করেই একজন শিক্ষার্থী শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী হয়। সেখানে আবার নতুন করে পরীক্ষা নিলে আগের ফলাফলকে অবমূল্যায়ন করা হবে। এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন হলে সার্বিকভাবে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সচ্ছতার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। নিয়োগের আগে তাদের একাডেমিক রেজাল্ট মূল্যায়ন করা হয়। এরপর ভাইভার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। পৃথক নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব দুটি নিয়োগ কমিটি কাজ করে তারাই যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করে। পুলিশের ভেরিফিকেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে শীর্ষ স্থানে থাকা শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। এসব শিক্ষার্থীদের তাদের শিক্ষকরা ভালোভাবেই চেনেন। তারা একই বিভাগে শিক্ষকদের অধীনে ৫ থেকে ৭ বছর পড়াশোনা করে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই নিয়োগ দেয়া হয়। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটার খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন। তবে নির্দেশনার কপি হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত তুলে ধরার কথা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা ও পুলিশের ভেরিফিকেশন হাস্যকর বিষয় ছাড়া কিছু নয়। পৃথিবীর কোন দেশে এই ধরনের নিয়ম আছে বলে আমার জানা নেই। জঙ্গিবাদ দমনে যদি এই ধরেনর নিয়ম করা হয়, আমি বলব অন্য পন্থায়ও করা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম শিক্ষক নিয়োগে এধরনের নির্দেশনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী নয়, দলীয় কর্মী নিয়োগের জন্য এধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র নয়, রাজনীতি চর্চা কেন্দ্র ও দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে মেধা না দেখে বরং দেখা হবে প্রার্থী আওয়ামী লীগের কর্মী কিনা, রাজনীতি করে কিনা। তাদের পছন্দ হলে নিয়োগ পাবে না হলে পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সাবেক নেতা বলেন, আমলা নিয়োগে এটি হয়, শিক্ষক নিয়োগ নয়। তিনি বলেন, যদি মেধাবীদের নিয়োগের জন্য করা হতো তাহলে বলা হতো মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নয়, একটি সুপারিশ দিয়েছে। কমিশনের মতে, নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটই নেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দেশে বর্তমানে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এর ৩৭টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সরকারী-বেসরকারী সব বিশ্ববিদ্যালয় দেখভালের দায়িত্ব ইউজিসির।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • হাসান মেহেদি ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৫ পিএম says : 0
    পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা নেয়া ও পুলিশের ভেরিফিকেশনের প্রস্তাব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সালমান ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৮ পিএম says : 0
    এতে মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন, আবিষ্কার, প্রকাশনা হ্রাস পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Laboni ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:২২ পিএম says : 0
    thanks to the daily inqilab
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেধাহীনের শঙ্কা

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ