পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : উদ্দেশ্য সত্যিই মহৎ। কেজিতে ১২ টাকা ভর্তুকি দিয়ে দেশের গরিব মানুষের জন্য ওএমএসের মাধ্যমে ১৭ টাকা দওে আটা বিক্রি করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অথচ সে আটা গরিব মানুষের পেটে নয়; যাচ্ছে ডিলারদের পেটে। খোলা বাজারে কোথাও ১৭ টাকা দরে আটা বিক্রি হচ্ছে না। খাদ্য অধিদপ্তরের মিল থেকে ডিলাররাই ১৭ টাকায় টনকে টন আটা কিনলেও খোলাবাজারে ছাড়ছে না। তারা বিক্রি করছে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানে। গরিবের জন্য দেয়া সরকারের আটা যাচ্ছে ডিলারদের পেটে। এতে সরকারের নেয়া মহৎ উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন না শ্রমিক-মজুর শ্রেণির মানুষ।
সূত্র মতে, সরকার দেশের শ্রমিক, দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু ডিলারও নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ডিলাররা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ফ্লাওয়ার মিল থেকে আটা নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি না করে তা দেশের আটা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করছে। তাই সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের নেয়া মহৎ উদ্যোগ ওএমএস’র আটা বিক্রির কোনো সুফলই পাচ্ছে না ভোক্তারা। অথচ মিল থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আটা চলে যাচ্ছে, ভোক্তারা পাচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ডিলার সরকার দলীয় সমর্থক। তাই তারা সিন্ডিকেট করে এই আটা খোলা বাজারে বিক্রি না করে আটা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য প্রতি কেজি আটায় ১২ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রতি কেজি আটা ২৯ টাকা দরে ক্রয় করে তা ১৭ টাকায় ওএমএস’র মাধ্যমে বিক্রির জন্য নির্ধারণ করেছে। সূত্র মতে, বছরব্যাপী দেশের বিভিন্ন জেলায় ওএমএস’র মাধ্যমে আটা বিক্রি চলমান ছিল। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর সরকার আবারও সাধারণ মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে আটা পৌঁছে দিতে সম্প্রতি ওএমএস’র মাধ্যমে আটা বিক্রির কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু সরকারের এ উদ্যোগের সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপ প্রতিদিন বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ট্রাকে করে ওএমএস’র আটা বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়েনি এ প্রতিবেদকের। এমনকি কোনো দোকানেও ওএমএস’র এই আটা বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ শাখার গত ৪ সেপ্টেম্বরের এক পরিপত্র অনুযায়ী রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সকল জেলা শহরে ওএমএস খাতে আটা বিক্রয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেয়। যা ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হয়। এক্ষেত্রে চলমান ঢাকা মহানগর, তেজগাঁও সার্কেল (কেরানীগঞ্জ), খুলনা মহানগর (পার্শ্ববর্তী রূপসা ও ফুলতলা উপজেলাসহ) ও ৪টি শ্রমঘন জেলার (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা) পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে ডিলার প্রতি দৈনিক ২ মেট্রিক টন করে ওএমএস খাতে আটা বিক্রি অনুমোদন দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. নুরুল ইসলাম শেখ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় অনুমোদিত ডিলারের সংখ্যা ২৯৪টি। যারা প্রতিদিন ২ মেট্রিক টন করে আটা বরাদ্দ পান। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ডিলাররা ৫৮৮ মেট্রিক টন আটা নেন। একই সঙ্গে মাসে আটা বরাদ্দ পাচ্ছেন ১৫ হাজার ২শ’ ৮৮ টন। অথচ রাজধানীসহ সারাদেশে এই আটার এক ছটাকও ডিলাররা বিক্রি করছেন না। অথচ ঢাকা মহানগরে ১২০ জন ডিলার রয়েছে। যারা প্রতিদিন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ফ্লাওয়ার মিল থেকে শনিবার বাদে ২ মেট্রিক টন করে আটা সংগ্রহ করছেন। ঢাকা মহানগর ছাড়া তেজগাঁও সার্কেল (কেরানীগঞ্জসহ) ৩০ জন ডিলার, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (রূপগঞ্জসহ) ২৫ জন ডিলার, ঢাকা জেলা (সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই) ২৪ জন ডিলার, গাজীপুর জেলায় (শ্রমঘন এলাকা) ৩০ জন ডিলার, নরসিংদী জেলায় (শ্রমঘন এলাকা) ১৫ জন ডিলার, খুলনা বিভাগীয় শহরে ৪০ জন ডিলার এবং খুলনা মহানগরের পার্শ্ববর্তী রূপসা ও ফুলতলা উপজেলায় ১০ জন ডিলার প্রতিদিন ওএমএস’র আটা নিচ্ছেন।
সূত্র মতে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরের বাজেটে প্রতি কেজি আটার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ টাকা। সরকার এক্ষেত্রে ১২ টাকা ভর্তুকি দিয়ে সাধারণ মানুষকে মাত্র ১৭ টাকায় আটা প্রদানের উদ্যোগ নেয়। অথচ ডিলাররা প্রতিদিন এই আটা তুলে নিয়ে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর কাছে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
এদিকে স্বল্প মূল্যে ওএমএস’র চলমান আটা বিক্রিতে অনিয়ম চললেও সরকার বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের জন্য প্রতি মাসে আরও ১৭ হাজার ৬শ’২ মেট্রিক টন আটা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগীয় শহর এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, বি-বাড়ীয়া জেলা, ৯ ওয়ার্ডবিশিষ্ট পৌরসভায় (৩৭টি) ৯ জন করে ডিলার, ৯ ওয়ার্ডের ঊর্ধ্বে পৌরসভা সম্বলিত জেলা সদরে (১৫টি) ১২ জন করে মোট ৬৭৭ জন ডিলারকে প্রতিদিন ১ টন করে আটা পাবে। মাসিক হিসেবে যার পরিমাণ ১৭ হাজার ৬শ’২ মেট্রিক টন আটা। ডিলাররা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ফ্লাওয়ার মিল থেকে প্রতিদিন (শনিবার বাদে) ১ টন আটা নিয়ে তা ট্রাকে করে খোলা বাজারে বিক্রি করবেন। ইতোমধ্যে এই আটা নিয়ে ডিলার এবং বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চুক্তি হয়েছে খোলা বাজারে বিক্রি না করে তাদেরকে দেয়ার জন্য।
ভোক্তাদের আটা ডিলারদের লুটে খাওয়া সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি প্রতিষ্ঠান খাদ্য অধিপ্তরের পরিচালক (সরবরাহ) সুকুমার চন্দ্র রায় ইনকিলাবকে বলেন, ট্রাক দিয়ে আটা বিক্রিতে ডিলারদের খরচ না পোষানোয় দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জেনেছি। তাহলে ভোক্তারা দোকানেও আটা পাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনেকদিন সরাসরি এই কার্যক্রমের দায়িত্বে না থাকায় সঠিকভাবে বলতে পারছি না বর্তমান অবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।