পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকই খেলাপী
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাঝে সবচেয়ে সব কম সময়ে বেশি খেলাপি ঋণের পাহাড় জমেছে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের পরই খেলাপি ঋণের পরিমান এই ব্যাংকে। চলতি বছরের জুন শেষে বিডিবিএলের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৫৭ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। এ হিসাবে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৫০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
যাচাই-বাছাই ছাড়া নির্ধারিত হারে কমিশন নিয়ে ঋণ প্রদান করার ফলে ব্যাংকটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ শিল্পব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণসংস্থা (বিএসআরএস) একীভূত করে গঠন করা বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড। একীভূত করার একমাস পরই ব্যাংকটির দায়িত্ব নেন তৎকালীন জনতা ব্যাংকের ডিএমডি ড. জিল্লুর রহমান।
তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই অযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের ঋণ দেয়া শুরু করেন। তার সময়কালে বিতরণকৃত কোনো ঋণের বিপরীতে রাখা হয়নি পর্যাপ্ত জামানত। যেগুলো কাগুজে জামানত রাখা হয়েছে বর্তমানে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংকটির বর্তমান নীতি-নির্ধারকরা। তার বিতরণকৃত প্রত্যেকটি ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির এক মহাব্যবস্থাপক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ মহাব্যবস্থাপক জানান, ড. জিল্লুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার সময় ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ড. জিল্লুর রহমানের বিদায় নেয়ার সময় ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিশনের বিনিময়ে ভূঁইফোঁড় কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার কারণেই ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ড. জিল্লুর রহমান শুধু ঋণের কমিশন নিয়েই ক্ষান্ত হননি, ব্যাংকটি যেন কোনো দিন না দাঁড়ায় সেজন্য তিনি তার আমলে যতগুলো নিয়োগ দিয়ে সবই টাকার বিনিময়ে। মোট কথা বিডিবিএল এখন মেধাশূন্য অবস্থায় আছে। তার কারণে বিডিবিএল এখন ডুবছে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ড. জিল্লুর রহমানকে ফোন দেয়া হলে তিনি রিপোর্টারের নাম শুনেই ফোন কেটে দেন।
বিডিবিএল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১২ সালের ২৩ মে এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টস লিমিটেডকে ১৩৬ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে বিডিবিএল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর পুরোটাই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। একই বছরের ২১ মে আলোচিত ব্যাংক মাফিয়া টিপু সুলতানের মালিকানাধীন ঢাকা ট্রেডিং হাউজের নামে ৫৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৪২ কোটি ৭ লাখ টাকাই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৫ মার্চ নর্থ বেঙ্গল এগ্রো কনসার্নকে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ দেয় বিডিবিএল। ঋণ বিতরণের পর এক টাকাও ফেরত পায়নি ব্যাংকটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিডিবিএলের পাওনা ২৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ টাকার পুরোটাই মন্দমানের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর টাটকা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ২০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকটি। গত পাঁচ বছওে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এক টাকাও উদ্ধার করতে পারেনি বিডিবিএল। সুদসহ প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এছাড়াও টিপু সুলতানের মালিকানাধীন টিআর স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৪৮ লাখ, নর্থ বেঙ্গল পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেডের কাছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, বগুড়া মাল্টিপারপাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে ৯ কোটি ৮৫ লাখ, স্টার ৫০ ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক লিমিটেডের কাছে ৫ কোটি ৭৪ লাখ, নির্মাণ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের কাছে ৩ কোটি, নকশা ফার্নিচারের কাছে ৬ কোটি, ক্রিসেন্ট রাইস মিলসের কাছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ, হাজি তারা মিয়া পোলট্রি ফার্মের কাছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ও মাহসালিম ইস্পাত লিমিটেডের কাছে পাওনা ৪ কোটি টাকা। এসব ঋণেরও অধিকাংশ মন্দমানে খেলাপি হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির অন্য আরেকজন একজন মহাব্যবস্থাপক বলেন, দায়িত্ব পালনকালে ড. জিল্লুর রহমান মোট অংকের কমিশনের বিনিময়ে কিছু অখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানকে বৃহৎ অংকের ঋণ দিয়েছেন। তার বিতরণ করা ঋণ আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ঋণের বিপরীতে যে সম্পদ জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে, তারও কোন অস্তিত্ব নেই। তিনি আরেক বাচ্চু হিসেবে ব্যাংকটিকে খাদেও কিনারে ফেলে দিয়েছেন। তার এসকল কাজের সহযোগী হিসাবে তৎকালীন কাওরান বাজার শাখার ম্যানেজার খালিদ হোসেন, রংপুর শাখার ম্যানেজার মুনসুর হোসেন কোটি টাকা কামিয়ে গেলেও অযথা বিপদে পড়েছেন ব্যাংকটির সবচেয়ে নিরপরাধ এবং সৎ হিসাবে পরিচিত নুরুর রহমান কাদেরী। তিনি থাকালীন সময়ে যত মুনাফা দেখিয়েছেন সবই ছিল শুভাঙ্করে ফাকি। জানতে চাইলে বিডিবিএলের বর্তমান এমডি মঞ্জুর আহমেদ বলেন, অফিস টাইমে ফোন দিলে বেটার হবে। আমি এখন দাতের ডাক্তারের চেম্বারে। বিডিবিএল একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও শিল্প পুঁজির জোগানদানকারী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। এর মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ও মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা। ড. জিল্লুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় ২০১০ সালে ব্যাংকটির শাখা ছিল ১৭টি। পাঁচ বছরে তিনি বিডিবিএলের শাখা ৩৮টিতে উন্নীত করেছেন। কিন্তু শাখাগুলোর মধ্যে ২৫টিই লোকসানিতে পরিণত হয়েছে। অথচ ব্যাংকটির চলতি বছর লোকসানি শাখা তিনটিতে নামিয়ে আনার কথা ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।