পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : ভারতীয় সুতা আমদানীতে বাজার সয়লাব, অব্যাহত বিদ্যুৎ ঘাটতি, দক্ষ শ্রমিকের অভাবসহ আনুষঙ্গিক নানা সমস্যার কারণে মাদারীপুরের স্পিনিং মিলটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতি ব্যাপক আকার ধারণ করায় মিলটির উৎপাদন ব্যবস্থা দারুণভাবে ব্যাহত হওয়ায় লোকসানের বোঝার পরিমাণ বেড়ে মিলটি বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। লোকসানী এ প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের বোঝা বাড়াতে আগ্রহ না থাকলেও শুধু ব্যাংক লোন পরিশোধের আশায় অনিচ্ছাস্বত্তে¡ও কর্তৃপক্ষ মিলটির কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মিলটি ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর হলে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশিত হলেও সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে কার্যত এর নেতিবাচক ফল পরিলক্ষিত হচ্ছে। মিলটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের সাথে আলাপান্তে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদারীপুর স্পিনিং মিলটি মাদারীপুর টেক্সটাইল মিল নামে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সরকার মিলটি রাষ্ট্রয়াত্ব মিল হিসাবে পরিচালনা করতে থাকা অবস্থায় ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুরের ২ সহস্রাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এরপরে রাজনৈতিক অসন্তোষ, শ্রমিক ইউনিয়নের মজুরিভাতা নিয়ে বিদ্বেষমুলক মনোভাব, সরকারের পট পরিবর্তনে ক্রমে উৎপাদন কমে আসলে মিলটি ৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। টানা ২ বছর মিলটি বন্ধ থাকার পর ৯৫ সালে ভৈরবের বিশিষ্ট ধনকুবের মোঃ ইউসুব বাবু মিলটি ক্রয় করে মাদারীপুর স্পিনিং মিল নামে পুনরায় চালু করেন। তখন মিলের ২ সহস্্রাধিক শ্রমিক কর্মচারী কাজ করে। যার অধিকাংশ ছিলো মহিলা শ্রমিক। মিলটিতে তখন প্রতিমাসে ৯ থেকে ১০ লাখ কেজি সুতা তৈরী হতো। পরবর্তীতে তা ক্রমে অবনতি হয়ে প্রায় ৬ লাখ কেজিতে চলে আসে। মিলটি ব্যক্তি মালিকানায় চালুকরনের পর প্রায় ২০ বছরে শত কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ফান্ডে জমা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের ঘাটতিতো লেগে আছে। ফলে ক্রমেই উৎপাদন ব্যবস্থা কমে যাওয়ায় অনেক শ্রমিক এ মিলের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় শ্রমিক কমে গেছে। তবে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ভারতীয় সুতা আমদানীতে দেশীয় তৈরী সুতা বাজারে প্রতিযোগিতায় মার খাওয়ায় মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা কমে গেছে বলেও তিনি মনে করেন।
এদিকে মিলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আলী আকবর ভুইয়া বলেন, বর্তমানে মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হবার কারণ হচ্ছে দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও বিদ্যুতের চরম ঘাটতি। বিদ্যুত ঘাটতির কারণে মিলটির লোকসান হচ্ছে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন (বিটিএমসি) অধীনে পরিচালিত এ মিলে আগত নতুন শ্রমিকদের কমপক্ষে ৩হাজার টাকা বেতন দিয়ে শিক্ষানবিশ হিসাবে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ শেষ হলে প্রতি শ্রমিকের বেতন দেয়া ৫৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা। কিন্তু পারিবারিক কলহ বা বিশেষ সুবিধা পেয়ে শ্রমিকরা কোন অব্যাহতি পত্র না দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এ মিলের শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫শ’তে। দক্ষ শ্রমিক আহŸান করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও তেমন সারা পাওয়া যাচ্ছেনা, যাও পাওয়া যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ অদক্ষ শ্রমিক। মিলের এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে ক্রমেই মিলটি বন্ধ হবার অশনি শংকেত লক্ষ করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামালউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শিল্পায়নের দিক দিয়ে মাদারীপুর জেলা একদম পিছিয়ে। পদ্মাসেতু নির্মিত হলে মাদারীপুর জেলা একটি বাণিজ্যিক মডেল জেলাতে পরিণত হবার সম্ভাবনা দেখা যাছে। একমাত্র মাদারীপুর স্পিনিং মিল ও টেকেরহাটের মিল্কভিটা কোম্পানি ছাড়া আর কোন শিল্পকলকারখানা এখানে সচল নেই। এক্ষেত্রে মাদারীপুর জেলাকে শিল্পায়নের আয়তায় আনার লক্ষে সরকারের জরুরীভিত্তিতে বন্ধ হবার উপক্রম শিল্পকারখানাগুলোর দিকে নজরদারী বাড়ানো দরকার। সে বিবেচনায় জেলা প্রশাসন সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
এদিকে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি বলেন, বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে শ্রমিক অসন্তোষ, মালিকপক্ষের দ্বন্দের কারণে মাদারীপুরের এ আর হাওলাদার জুটমিলসহ একে একে শিল্পকলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর ভারতীয় সুতা আমদানীর কারণে দেশীয় তৈরী সুতার দাম বৃদ্ধি থাকায় প্রতিযোগিতামুলকভাবে বাজারে টিকতে পারছেনা। ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুত ঘাটতি একটি জাতীয় সমস্যা তবে এ এলাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটা কমে এসেছে। দেশবাসী দেশীয় তৈরী সুতা ও উৎপাদনকৃত বস্ত্র ব্যবহার করলে এ রুগ্নশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।