Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমার মাকে ফিরিয়ে দাও

ছবি হাতে শিশুর আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

মায়ের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটি শিশু। টলটল করছে চোখের পানি। কিন্তু মায়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছে না। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। জানা গেছে, রূপগঞ্জের কারখানার ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তার মাকে। এরপর থেকেই মায়ের ছবি হাতে নিয়ে ঘুরছে সে। গতকাল স্বজনদের সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেও এসেছে ওই শিশুটি। এ সময় বাকরুদ্ধ শিশুটি মায়ের ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দীর্ঘক্ষণ। মাঝে মাঝে কান্না জড়িত কণ্ঠে তার মাকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজনের চোখেও পানি টলটল করছিল।

জানা গেছে, শিশুটির নাম নয়ন। তার মায়ের নাম নাজমা বেগম। সাত বছরের সন্তান নয়নকে নানির কাছে রেখে গত বৃহস্পতিবার সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় কাজে গিয়েছিলেন নাজমা বেগম। এরপর দু’দিন কেটে গেলেও আর ঘরে ফেরেনি নাজমা। তাই মাকে খুঁজতে নানির সঙ্গে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এসেছে।
নাজমা বেগম যেখানে কাজ করতেন, সেখানেই বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। ঘটনাস্থল থেকে ৪৮ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়। লাশগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে চেনার কোনো উপায় নেই। এ জন্য লাশ শনাক্তে মর্গ এলাকায় স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিচ্ছে সিআইডি। নয়নের মায়ের খোঁজে তার নানী কল্পনা ঢাকা মেডিকেল মর্গ এলাকায় স্থাপন করা সিআইডির বুথে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছেন।
সিআইডির বুথ থেকে বের হয়ে কল্পনা বলেন, ছেলেকে আমার কাছে রেখে নাজমা বৃহস্পতিবার সকালে কাজে যায়। এরপর সে আর ফিরে আসেনি। কারখানায় আগুন লাগার পর নয়নের মায়ের সঙ্গে আমাদের আর কথা হয়নি। এখন মেয়ের খোঁজে এখানে এসেছি। রক্ত দিয়েছি। এ সময় কল্পনার সঙ্গে আসা নয়নের ছল ছল দু’চোখ মাকে খুঁজে ফিরছিল।
অস্ফুট কণ্ঠে নয়ন বলে, আগে মা নিজ হাতে আমাকে ভাত খাইয়ে দিত। আজ (গতকাল) নানি খাইয়ে দিয়েছে। আমি মায়ের হাতে ভাত খেতে চাই। আমার মা কোথায় আছে জানি না। আমি মাকে চাই।
শুধু নয়ন নয়, তার মত শত শত মানুষ স্বজনদের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ধ্বংসস্তুপ থেকে ৪৮টি লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে ৪৮ লাশের মধ্যে ১৫টি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৮টি রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে। বাকি ২৫টি লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিশুর আকুতি

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ