Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তবুও বাড়ছে আমান ফিডের শেয়ার দর

উৎপাদনে শ্লথ, আছে ঋণ খেলাপি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

অস্বাভাবিক লাফিয়ে লাফিয়ে আমান ফিড লিমিটেডের শেয়ার দর। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত খাদ্য এবং আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানিটি তাদের খেলাপি ঋণও শোধ করতে পারেনি। কবে নাগাদ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তারও কোনও ঠিক নেই। কোম্পানিটির উৎপাদনেও তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। তবুও কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পযালোচনা করলে দেখা যায়, কোম্পানিটির গত বছরের চেয়ে এ বছর শেয়ার প্রতি আয় কমেছে। কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধ না করতে পারা, আয় কমে যাওয়া এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ার পরও কোম্পানিটির শেয়ার দর কেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির চিপ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) নির্মল চন্দ্র বলেন, করোনাকালীন বেশিরভাগ কোম্পানি আয় করতে পারেনি। সে তুলনায় আমান ফিডের ব্যবসা একেবারে খারাপ না। আর আমান ফিড নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের ভালো কিছু দিয়ে আসছে।

ঋন খেলাপির বিষয়ে নির্মল চন্দ্র বলেন, আমাদের এবি ব্যাংকের সাথে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে নতুন করে আবারও সময় নেয়ার কথা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি। বাকি অর্থ পরিশোধের জন্য ব্যাংকের থেকে সময় নেয়ার চেষ্টা করতেছি। তবে কত সময়ের জন্য ব্যাংক বরাবর আবেদন করা হচ্ছে তা তিনি এখনই বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করায় ব্যাংকের সঙ্গে এখন আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অগ্রগতি পাচ্ছে। শেয়ার দর বৃদ্ধির কোনও সংবেদনশীল তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে ডিএসই বরাবর জানানো হয়েছে। তবে আমাদের ব্যবসা যে খারাপ যাচ্ছে তাও কিন্তু নয়।
কোম্পানিটির শেয়ার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৮০ টাকা বা ১৪০ শতাংশ। তিন মাস আগে তাদের শেয়ার দর ছিলো ২৭ দশমিক ৮০ টাকা। যা বেড়ে বর্তমানে অবস্থান করছে ৬৬ দশমিক ৬০ টাকায়। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেনও হয় ৬৬ দশমিক ৬০ টাকায়।

২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষনা করে এর মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ এবং ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বোনাস। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিলো ২ দশমিক ৭১ টাকা।

এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের কাছে সময় চেয়েছি। প্রথম কিস্তি পরিশোধের ফলে ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নতুন করে যে সময় চেয়েছি তা এখনও পাইনি। কিস্তি পরিশোধের নতুন সময় পেলে আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম জানিয়ে দেবো।

এর আগে আমান ফিড লিমিটেডকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল আদালত। এই সময়ের মধ্যে প্রতি মাসে কিস্তি হিসেবে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করতে হবে। বকেয়া ঋণের কারণে জমি ও কারখানা নিলামে তোলার বিরুদ্ধে আমান ফিডের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি নিলাম স্থগিত রাখার কথা বলেছে হাইকোর্ট।

আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যদি আমান ফিড প্রথম কিস্তি অক্টোবর মাসের মধ্যে না পরিশোধ করে তবে এবি ব্যাংক ফের আমান ফিডের জমি ও কারখানা নিলামে তুলতে পারবে। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে প্রথম কিস্তি জানুয়ারিতে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য আবার নতুন করে সময় চেয়ে ব্যাংক বরাবর আবেদন করেছে।

গত বছরের ৭ আগস্ট এবি ব্যাংক লিমিটেড আমান ফিডের জমি নিলামে তোলার বিষয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আমান ফিডের কাছে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঋণ ও সুদসহ মোট ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওনা এবি ব্যাংকের। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটির সিরাজগঞ্জে কারখানা, জমি ও গাজীপুরের জমির মূল্যমান আসে ৭০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, বিবিধ খাতের কোম্পানি আমান ফিড লিমিটেড ২০১৫ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে ২৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৬ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করা হয় বিনিয়োগকারীদের কাছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমান ফিড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ