Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড়

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২১, ১০:৫২ পিএম

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। প্রকল্পটির অধীনে গত জানুয়ারি এবং জুন মাসে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়৷ এরইমধ্যে দেশের কয়েকটি এলাকায় এসব ঘর ধ্বসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। উদ্বোধনের অল্প সময়ের ব্যবধানে ভেঙে পড়া এসব ঘরের ছবি-ভিডিও প্রতিনিয়ত ভাসছে সামাজিক মাধ্যমে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মান নিয়ে এমন অভিযোগের শেষ নাই। কোনো কোনো এলাকায় নতুন মাটি ভরাট করে ঘর বানানোর কারণে তা ধসে পড়ছে৷ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সরকারি খাস জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে৷ আয়তন ৪০০ বর্গফুট৷

সেমিপাকা এই ঘরগুলোর প্রতিটি তৈরি করতে প্রথম পর্যায়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে খরচ হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পর্যায়ে দুই লাখ টাকা৷ প্রতিটি পরিবারকে দুই শতাংশ জমিসহ এই ঘর দেয়া হয়৷

আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘ছাত্রজীবনে দেখতাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত বাসের গায়ে লেখা থাকতো অমুক প্রেসিডেন্টের, তমুক প্রধানমন্ত্রীর উপহার। একবার এক শিক্ষক এ বিষয়ে একজন সরকারপ্রধানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, স্যার এই টাকা তো রাষ্ট্রের, জনগণের। তাহলে উনার উপহার কি করে হয়? উনার ব্যক্তিগত সম্পদের টাকা থেকে দেয়া না হলে? স্যার আমার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, এই প্রথম তুমি এরকম প্রশ্ন করলে। আমার দৃষ্টিতে মুজিববর্ষের সবচেয়ে ভালো কাজ, প্রশংসনীয় কাজ ছিল গৃহহীনদের গৃহদান। লক্ষাধিক গৃহহীন মানুষকে গৃহদান শুধু দুনিয়াবি নয়, আখিরাতের বিচারেও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার সর্বোত্তম পন্থা ছিল। আশ্রয়হীন মানুষগুলো বছরের পর বছর এই ঘরে বসবাস করলে তার সাওয়াব বঙ্গবন্ধুর নামে সদকা হিসেবে জমা হতো। কিন্তু চোরের দল সেই শুভ উদ্যোগটিও বিতর্কিত করে ফেললো। আমি অবাক হয়ে যাই যারা বঙ্গবন্ধুর চেতনার কথা বলে, স্বপ্নের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে, তারা একবারও বঙ্গবন্ধুর সম্মানের কথা ভাবলো না, প্রধানমন্ত্রীর ভাবমর্যাদার কথা ভাবলো না!!গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া দরজা জানালা কিছু নাই..।’’

শাহরিয়ার কামাল জিসান লিখেছেন, ‘‘দুর্নীতির ভয়াবহ মহামারিতে আক্রান্ত বাংলাদেশকে বাচাতে চাইলে যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ স্বাধীন, সশস্ত্র, সামরিক বাহিনীর মত প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন জরুরী। যাদের প্রধানমন্ত্রীর ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হবেনা। ভুলে যাবেননা চোর- ডাকাতে ভর্তি রাজ্যে শক্তিশালী পাহারাদার ছাড়া কোন কিছুরই সুরক্ষা দেওয়া সম্ভবনা।’’

তারিক তনয় লিখেছেন, ‘‘সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকেও আমরা ২ টি আশ্রয় প্রকল্পের কাজ করেছি। একটা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন(৬ মাস আগে হস্তান্তর করেছি) এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায়(২ বছর আগে হস্তান্তর করেছি)। আল্লাহর রহমতে এখনো কিছু হয়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা সকলেই বিব্রতবোধ করি। আবার পরবর্তী কাজেও বিরূপ প্রভাব পারে। তাই সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত ও বিচার প্রার্থনা করছি।’’

দুর্নীতিবাজদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে জন রাসেল লিখেছেন, ‘‘আইনের শাসনের অভাব, সরকারি চাকুরীজীবীরা জানে তারা যতই দুর্নীতি করুক, তাদের কোন বিচার হবে না, তাদের সর্বচ্ছ শাস্তি হলো বদলি হওয়া, আর যারা রাজনীতি করে, তাড়াও জানে তাদের কোন বিচার হবেনা। এই জন্য এই অনিয়মগুলো হয়। দুর্নীতির সর্বচ্চ শাস্তি হতে হবে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মিনিমাম ২০ বছরের জেল।’’

মহি উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতারা যেমন জনগণের ভোট ডাকাতি করে এমপি মন্ত্রী!! তেমনি আমলারা জাতির টাকা ডাকাতি করে পয়সা ওয়ালা হচ্ছে।। কারো দোষ নাই যেই দেশে রাজনৈতিক নেতারা রাতে চুরি করে সেই দেশে৷ আমলা বা অন্যরা দিনে চুরি করবে!’’

আমিনুর রহামান লিখেছেন, ‘‘প্রশাসনের লোকজনই দুর্নীতির সাথে বেশি জড়িত। তারা টাকা আত্মসাৎ করার জন্য কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে বা না জানিয়ে নিজ দায়িত্বে নিম্ন মানের কাজ করিয়েছেন। ভরেছেন নিজের পকেট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পেই যদি এমন দুর্নীতি হয়, তবে অন্যান্য প্রকল্পে যেমন রাজস্ব, এডিপি, থোক বরাদ্দে মাঠ পর্যায়ে কি যে ভয়াবহ দুর্নীতি হচ্ছে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে তা উঠে আসবে।’’

আলমগীর ভুঁইয়া লিখেছেন, ‘‘যারা দায়িত্বে থেকে কাজ করেছেন, সেই চোরদের ধরে জনসমক্ষে কঠিন ধোলাই দেওয়া দরকার। কোট টাই পরে গরীবের একমাত্র আবাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে যারা দুর্নীতি করে সরকারের আসল মহৎ উদ্দেশ্যকে যারা বানচাল করেছে, সে সকল চোর বাটপার টাউটদের বরখাস্ত করা উচিত ও জনগণের কাঠগড়ায় দাড় করানো উচিত তাদের ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত যাতে তাদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে বয়কট করা যায়।। তারা কোন মানুষের মধ্যে পড়েনা তারা হিংস্র জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্টতর।’’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ