পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : কাশ্মীরের স্বাধিকার আন্দোলনকে ইস্যু করে ভারত-পাকিস্তানে রণদামামা বাজছে। দুই দেশের সীমান্তে কার্যত যুদ্ধপ্রস্তুতি। যুদ্ধে কার শক্তি বেশি এ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় চলছে হুলুস্থুল প্রচারণা। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তপ্ত; অথচ মানুষ মরছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। কাশ্মীরের উরি সেনা ছাউনিতে হামলায় ভারতের সৈন্যের মৃত্যুতে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা দুঃখ প্রকাশ করে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিত্যদিন মিডিয়ায় এ নিয়ে পাকিস্তানের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা হচ্ছে, অথচ সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশী মারা যাওয়ার পর তাদের প্রতিবাদ দূরের কথা দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে তিনজন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছে বিএসএফের গুলিতে। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের নাগরিকদের মোদি সরকার এবং আমাদের বুদ্ধিজীবী-সুশীলরা কি একই দৃষ্টিতে দেখেন? বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী হত্যায় ভারতের বুদ্ধিজীবীরাও ক্ষুব্ধ। অথচ আমাদের দেশপ্রেমী বুদ্ধিজীবী ও সুশীলরা?
১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সীমান্তে একের পর এক বাংলাদেশী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের কি লজ্জা দিয়েছে? ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার ও দিল্লির প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী শ্রুতি পাট্টনায়েক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের পর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী হত্যার খবর কাম্য নয়। এ ধরনের খবর শুনে ভারতীয়রা আহতবোধ করেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বাস্তবতায় ভারতে ‘ধারণাগত ঘাটতি’ আছে। দু’দেশের যদি এতই বন্ধুত্ব তাহলে গুলি কেন? সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের বুদ্ধিজীবীদের এই উপলব্ধি; অথচ আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা?
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একের পর এক বাংলাদেশী হত্যা প্রসঙ্গে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। লিখেছেন, ‘আমরা কোনোদিন শুনি না পাকিস্তান সীমান্তে ভারত গুলি করেছে নিরীহ কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে। কাশ্মীরে ১৮ জন সৈন্যকে মেরে ফেরার পরও কেবল হম্বিতম্বি ভারতের। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করার মুরোদ নেই। অথচ সীমান্তে ‘বন্ধু’ রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিককে দেখলেই তাদের ‘বীর বাহিনীর’ গুলি! আমার স্ত্রী (অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মরহুম হুমায়ূন আহমেদের মেয়েকে বিয়ে করেছেন) কাল অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, ভারত কেন গুলি করে শুধু বাংলাদেশের মানুষকে? আমি বললাম, নিশ্চয়ই কুত্তা-বিড়াল ভাবে আমাদের। জানে হাজারে হাজারে মেরে ফেললেও এদের সরকারের কিছুই আসে-যায় না। জানে এটাই একমাত্র দেশ যেখানে সুশীল সমাজ আসলে নেড়ি কুকুর জাতীয় কিছু। দিনরাত জুতার বাড়ি মেরে একটু উচ্ছিষ্ট (সামান্য ব্যবসা, পদক, পুরস্কার বা বিনা পয়সায় ভারত ভ্রমণ) ছুড়ে ফেললেই এ জাতির বিবেকরা জিহ্বা বের করে চাটতে থাকে তাদের! অথচ এই জাতিই একদিন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল! প্রশ্ন হচ্ছে বিবেক-প্রজাতিরা কি আসলেই তখন যুদ্ধ করেছিল, নাকি সত্যিই কেবল আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিল? যুদ্ধ করলে কখনো এমন নেড়ি কুকুর হওয়া কি সম্ভব?’
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে আসিফ নজরুলদের মতো বিবেকবান (যারা সরকার বা রাজনৈতিক দলের উচ্ছিষ্টলোভী নন) বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানে সুশীল বুদ্ধিজীবীদের কেউ উচ্ছিষ্ট ভোগে ব্যস্ত; আবার কেউ ভবিষ্যতে উচ্ছিষ্ট খাবেন এ স্বপ্নে বিভোর। যার জন্য সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবনা নেই তাদের। আসিফ নজরুলদের মতো যারা স্পষ্টভাষী তাদের আমজনতা সাধুবাদ জানান অন্তর থেকে। সে আওয়াজ ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছে না। কারণ সাধারণ মানুষের কথা প্রকাশ বা প্রচারের মাধ্যম সংকুচিত। তোষামোদীতে ব্যস্ত প্রিন্ট ও টিভি মিডিয়া এখন কার্যত ‘প্রচার মাধ্যমে’ পরিণত হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে চীন, পাকিস্তান ও নেপালের সীমান্ত রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার। এটা বিশে^র দুই রাষ্ট্রের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত প্রায়ই রক্তাক্ত হচ্ছে। সে রক্ত বাংলাদেশের নাগরিকের। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একতরফাভাবে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাচ্ছে। সীমান্তে এ হত্যা থামছেই না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে গত সপ্তাহে তিন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। বিএসএফের হাতে সীমান্তে নিরীহ মানুষের হত্যার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। অথচ দুই দেশের শাসকরা দাবি করছেন, সীমান্তে হত্যাকা- শূন্যের কোঠায় আনা হবে। মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পাঁচ বছর ২৩৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। ২০১৬ সালে এ হত্যার সংখ্যা প্রায় ৩০। শুধু কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তেই বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জন।
‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক : অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, অ্যাডভোকেসি ও গভর্ন্যান্স (আইপিএজি)। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ডেইলি স্টার অফিসে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে আমাদের সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সম্পাদক, বরেণ্য সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবিদ, পানি বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যেমন অংশ নেন, তেমনি ভারতের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, সম্পাদক, সাংবাদিক ও গবেষক অংশগ্রহণ করেন। প্রবীণ অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব যে উচ্চতায় ওঠা উচিত ছিল ৪৪ বছরেও তা হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমান দু’দেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্বীকার করেন, ভারত অনেককিছু পেলেও বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের প্রাপ্তি কম। পানি পাইনি। ট্র্যানজিট দেয়া আমাদের জন্য লাভজনক হয়নি। সীমান্ত হত্যা নিয়েও তারা কথা বলেন। আমাদের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী সীমান্তে হত্যার চিত্র তুলে ধরে পানি সংকট ও রামপাল ইস্যুতে বাংলাদেশের ‘সর্বনাশের চিত্র’ তুলে ধরেন। তবে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গবেষক, বিদ্যুৎ-পানি-পরিবেশ বিশারদ (ড. আইনুর নিশাত, ম. তামিমসহ কয়েকজন) স্পষ্ট করে বলেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যারা বিরোধিতা করছেন অন্য কোথাও হলেও তারা তাই-ই করতেন। ‘বিরোধিতা’ করা তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। তিস্তার পানি প্রসঙ্গে না বললেও সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে তারা পরোক্ষভাবে গরু চোলাচালানিকে দায়ী করেন। অথচ ওই অনুষ্ঠানেই ভারতের বুদ্ধিজীবীরা সীমান্ত হত্যার জন্য দায়ী করেন ভারতকেই।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দিল্লিভিত্তিক দ্য ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের (আইডিএসএ) শ্রুতি পট্টনায়েক বলেন, সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে হলে সমন্বিত টহল জোরদার করতে হবে। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফের প্রাণঘাতী বুলেটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বুলেট ব্যবহার করতে হবে। হত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। দ্য হিন্দু পত্রিকার কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার বলেন, সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী হত্যা কমেনি। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রায় বাংলাদেশের লোকজনকে হত্যার কথা শুনে ভারতীয়রা অবাক হন। তারাও প্রশ্ন করেন, এভাবে সীমান্তে মানুষ মারা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বাস্তবতা নিয়ে ভারতে ধারণাগত ঘাটতি আছে। এটা বন্ধুত্বের নিদর্শন নয়।
সীমান্তে মানুষ হত্যার দিক দিয়ে যেসব দেশের সীমান্তরক্ষীদের ব্যাপারে দুনিয়াজুড়ে বদনাম তার মধ্যে বিএসএফ অন্যতম। এরা যে শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের খুন করে তা নয়; নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যার রেকর্ডও তাদের কম নয়। বিএসএফকে বিশে^র অনেক মানবাধিকার সংগঠন ‘ট্রিগার হ্যাপি’ বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এরপরও কোনোভাবেই বিএসএফের হত্যাকা- থামছে না। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সবচেয়ে উত্তেজনাকর। কিন্তু বিএসএফের হাতে খুব কমই পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান সীমান্তরক্ষীদের হাতেও ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা বিরল। আর চীন সীমান্তে বিএসএফ কি যখন-তখন গুলি চালানোর ক্ষমতা রাখে? চীন-পাকিস্তান সীমান্তে বিএসএফ আতঙ্কে থাকে; অথচ বাংলাদেশ সীমান্তে তারা বাহাদুর! সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফের মধ্যে এত মানসিক ঝোঁক কেন? মূলত হত্যার পর কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না, এমন ধারণা থেকেই তারা হত্যাকা- চালায়। অথচ পাকিস্তান বা চীন সীমান্তে গুলি চালালেই বিএসএফকে উল্টো চরম মূল্য দিতে হয়। ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যারা মারা যাচ্ছে তারা সবাই গরু চোরাকারবারি। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা গরু চোরাকারবারি; কিন্তু বিএসএফের এভাবে মানুষ হত্যার কি অধিকার আছে? আন্তর্জাতিক আইন কী বলে? আমেরিকার মতো ক্ষমতাধর দেশও কি মেক্সিকোর সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের হত্যা করে? সীমান্তে বিএসএফের বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকা-ের দায় কার? ২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষীদের বৈঠকে ভারত প্রতিশ্রুতি দেয়, সীমান্তে কোনো ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি; বরং প্রতি বছর বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করেই চলছে। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। সীমান্তে একের পর এক বাংলাদেশী হত্যাকা- কি বন্ধুত্বের নিদর্শন? বিএসএফের হাতে সীমান্তের বাংলাদেশীদের হত্যাকা- নিয়ে ভারতের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল বিবেকবানরা অন্তরের যাতনাবোধ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন; অথচ আমাদের বুদ্ধিজীবীদের থাকেন ‘খামোশ’। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের নীরবতার মাজেজা কী? তাহলে কি অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কথাই যথার্থ?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।