Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিনে টাইলস মিস্ত্রি রাতে ভয়ঙ্কর অপরাধী!

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৭ এএম

মো. রানা ওরফে হৃদয় ও উজ্জ্বল আলী। পেশায় তারা টাইলস মিস্ত্রি। দুজনের বাড়িই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। রাজধানীর বসুন্ধরা ও ভাটারা এলাকায় তারা দিনে মিস্ত্রি কাজ নেন। এর আড়ালে তারা মূলত ওই এলাকা রেকি করেন। পরে সুবিধাজনক স্থানে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটান। গত ১২ মে সন্ধ্যায় যমুনা ফিউচার পার্কের দক্ষিণ আউটগেট থেকে বসুন্ধরার আফরোজা রোডে যাওয়ার জন্য ভাড়ায় একটি মোটরবাইকে ওঠেন তারা। ভাড়া ঠিক হয় ৭০ টাকা। মোটরবাইক চালকের নাম আব্দুর রশিদ।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে নেওয়া হয় ৩০০ ফিট পূর্বাচলের রোডে। সেখানে নিয়ে রশিদের মাথা, হাঁটু, উরু এবং গোড়ালিতে এলোপাথাড়ি হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। সুইচ গিয়ার দিয়ে সজোরে আঘাত করা হয় শরীরে। পরে তাকে খালে ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান রানা-উজ্জ্বলরা। এই ভয়ংকর অমানবিক কাজটি করার সময় সঙ্গে ছিলেন চক্রের আরও একজন। ওই ঘটনার পরই খিলক্ষেত থানার পুলিশ ভিকটিমকে খাল থেকে উদ্ধার করে দ্রুত টঙ্গীর আহসানুল্লাহ মাস্টার হসপিটালে ভর্তি করে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ভিকটিম খিলক্ষেত থানায় ছিনতাই ও দস্যুতা ধারায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও ডিজিটালি বিশ্লেষণ শেষে গত মঙ্গলবার বসুন্ধরা এবং মিরপুর ১৪ নাম্বার এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত রানা ও উজ্জ্বল আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেখানো স্থান থেকে গোয়েন্দা পুলিশ হৃদয়-উজ্জ্বলের ব্যবহৃত পুঁতে রাখা চাপাতি এবং হাতুড়ি মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করে।
গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ভিকটিম আব্দুর রশিদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী এলাকায়। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফটম্যান ও ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজের পাশাপাশি নিজের পালসার মোটরসাইকেলে পাঠাও-এ রাইড শেয়ার করেন। গত ১২ মে সন্ধ্যায় আব্দুর রশিদকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে ৭০ টাকায় ভাড়া করেন রানা। গন্তব্য বসুন্ধরার আফরোজার রোড। তারা বাইকার আব্দুর রশিদকে নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মধ্যে ঘুরতে থাকেন। রশিদ এরপর ৭০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা ভাড়া দাবি করলে আরোহী রাজি হন। আরোহী যুবক বাইকার আব্দুর রশিদকে নিয়ে যান ৩০০ ফিট পূর্বাচলগামী এক্সপ্রেস ওয়ের অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পশ্চিম পাশে। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন অন্য যুবক। যুবকদের একজন ১০০০ টাকার নোট দেখিয়ে ভাড়া দিতে চাইলে বাইকার রশিদ খুচরা নাই বলে জানান।
তিনজন যুবক খুচরা টাকা খোঁজাখুঁজি করার একটা পর্যায়ে বাইকার রশিদের মাথায়, হাঁটু, উরু এবং গোড়ালিতে এলোপাথাড়ি হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এক পর্যায়ে আব্দুর রশিদ মাটিতে পড়ে যান। তখন তিন ছিনতাইকারী যুবকের একজন চাপাতি দেখিয়ে আব্দুর রশিদকে চুপ থাকতে বলেন। অন্যজন সুইচগিয়ার দিয়ে রশিদের গলা কাটতে যান। আব্দুর রশিদ ভয়ে চিৎকার করেন। কিন্তু পাশ দিয়েই যেতে থাকা শত শত চলন্ত গাড়ির কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না। গলা কাটতে না পেরে ছিনতাইকারী যুবকরা আব্দুর রশিদের পিঠের বাম পাশে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ধারালো সুইচ গিয়ার দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। নিস্তেজ হয়ে পড়লে তিন ছিনতাইকারী রশিদ মারা গেছেন ভেবে ৩০০ ফিট রাস্তার পাশে খালে ফেলে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যান।
মশিউর রহমান আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত গ্রেফতার রানা ও উজ্জ্বল পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। তারা ফেনসিডিলে আসক্ত। টাইলস মিস্ত্রির কাজের আড়ালে তারা ইতোপূর্বেও বিভিন্ন এলাকা রেকি করে ও সুবিধা মতো চুরি ছিনতাই চালিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। পাঠাও এর একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্য তারা একাধিকবার বসুন্ধরা এবং পূর্বাচলগামী এক্সপ্রেসওয়ে রেকি করেছেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি তারা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা নিয়ে নয়ন নামে দালালের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িত অপর আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ডিসি মশিউর রহমান।



 

Show all comments
  • salman ৮ জুলাই, ২০২১, ৬:৫৯ এএম says : 0
    2 ta k CROSS FIRE kore daw. ad'er bachar odhikar nai
    Total Reply(0) Reply
  • abul kalam ৮ জুলাই, ২০২১, ৩:০৯ পিএম says : 0
    এদের কমপক্ষে ফাঁসি দেওয়া হোক~
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়ঙ্কর অপরাধী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ