পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : পাঁচ লাখ টাকার মোটরসাইকেল থাকার পরও নতুন মডেলের আরও দামি মোটরসাইকেল চেয়েছিল কিশোর মুগ্ধ। দিতে রাজি না হওয়ায় আগুন জ্বালিয়ে দেয় বাবা-মায়ের ঘরে! সেই আগুনে দগ্ধ বাবা এটিএম রফিকুল হুদা (৪৮) গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে গতকাল রোববার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ভাটারা ইউনিয়নের বাউসী চন্দনপুর গ্রামে। নেশার টাকা না পেয়ে ছেলে উমর আলী (২২) তার বাবা মমতাজ আলীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে বাবার মৃত্যু হয়। মাদকাসক্ত ছেলের এহেন নিষ্ঠুর কর্মকে সমাজ বিজ্ঞানীরা মোটেও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে দেখছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেন, নেশাসক্ত হয়ে একজন কিশোর বা যুবক যখন তার বাবা-মার উপর আক্রমণ করে, তখন সে তার শত্রুর উপরই আক্রমণ করে। বাবা কিংবা মা তখন তার কাছে আপন কেউ নন, তারা তখন শত্রু। সে হিসাবে নেশাসক্তদের এ ধরনের কাজকে অস্বাভাবিক বলা যায় না। সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আমানউল্লাহ বলেন, আমরা উন্নয়নের ডামাডোলে সামাজিক সঙ্গতি, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে এসেছি। আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেগুলোর অভাবেই এরকম ঘটনা সবে মাত্র শুরু। এক্ষুণি এ বিসয়ে সচেতন না হলে পরিকল্পিতভাবে এগুতে না পারলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
সদ্য এসএসসি পাশ করা ফরিদপুরের কিশোর মুগ্ধ তার বাবার কাছে নতুন মডেলের মোটর সাইকেলের আবদার করেছিল। যদিও তার প্রায় ৫ লাখ টাকা দামের একটা মোটর সাইকেল আছে। সমাজ বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন, একজন এসএসসি পাস করা কিশোরের কাছে ৫ লাখ টাকা দামের মোটর সাইকেল থাকবে কেন? ৫ লাখ টাকার মোটর সাইকেল কিনে দেয়ার আগে মুগ্ধকে কেন বোঝানো হলো না যে, এটা তোমার জন্য নয়। এ বিষয়ে তার অভিভাবককে আগেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সন্তানদের বিলাসী জিনিসপত্র ব্যবহারের বিষয়ে অভিভাবকেরা আগে থেকে সতর্ক না হলে সন্তানের মানসিক বৈকল্য দেখা দিতেই পারে। এর সাথে সন্তান যদি হয় মাদকাসক্ত তা হলে তো আর কথাই নেই। কিশোর মুগ্ধ তার বাবা-মার ঘরে আগুন দেয়ার কয়েকদিন আগে (ঈদের দিন রাতে) তার ফেসবুকে লিখেছিল, ‘পৃথিবীতে নিজে ভালো থাকতে হলে স্বার্থপর হতে হবে। আর অন্যকে ভালো রাখতে গেলে নিঃস্বার্থ হতে হবে এটাই সত্য।’
১৬ বছরের কিশোর মুগ্ধ’র ৫ লাখ টাকা মূল্যের মোটর সাইকেল থাকার পরেও সে আরও দামী মোটর সাইকেলের জন্য বায়না ধরার কারণ ব্যাখ্যা করে সমাজ বিজ্ঞানী আমানউল্লাহ বলেন, আমাদের দেশে এখন দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়ন হচ্ছে। সমাজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে বাবা-মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সমাজ পরিবর্তনের এই ধারায় সঠিকভাবে এগুতে হয়। এজন্য পরিবার বা সমাজের চেয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বেশি। আমি তো রাষ্ট্র, সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ কারো মধ্যে সেই দায়িত্ববোধ দেখছি না।
জানা গেছে, ধনী বাবার সন্তান মুগ্ধ মাদকাসক্ত ছিল। মাদকের টাকার জন্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হয়েও সে গরীবের দোকানে চুরি করতেও দ্বিধা করেনি। নিহত এটিএম রফিকুল হুদার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাবা-মার কাছে থেকেও মুগ্ধ জোর করে নেশার টাকা আদায় করে ছাড়তো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেশাজাতীয় দ্রব্য বা মাদকই এখন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে শেষ করে ফেলছে। তাদেরকে ধ্বংসের পাশাপাশি সমাজকেও কলুসিত করছে। বিশেষ করে মরণনেশা ইয়াবা এখন সারাদেশের আনাচে-কানাচে পাওয়া যায় বলে অনেকেই এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে মুগ্ধ’র মতো বিত্তশালীদের সন্তানেরা শুধু অঘটন ঘটিয়ে চলছে তা নয়। এর বাইরে মধ্যবিত্ত বা গরীবের সন্তানেরাও এরকম ঘটনা ঘটাচ্ছে। জামালপুরের গতকালের ঘটনাই তা প্রমাণ করে। প্রফেসর ড. আমানউল্লাহ বলেন, মাদক এখন মুড়িমুরকীর মতো যেখানে সেখানে পাওয়া যায়। মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ায় নেশাসক্তদের সাথে ব্যবসায়ী ও বেড়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক সবাই মাদক কিনতে পারছে। তিনি বলেন, মাদকের বিস্তার রোধ করার জন্য রাষ্ট্রকে প্রথমে আন্তরিক হতে হবে। এরপর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকের বিস্তারের জন্য টিভি মিডিয়াকে অনেকাংশে দায়ী করে তিনি বলেন, মাদক নিয়ে অনুষ্ঠান, খবর প্রচার আমাদের মিডিয়াগুলোর কাছে অনেকটা ফ্যাশনের মতো হয়ে গেছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। এজন্য টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে ফিল্টারিং থাকা দরকার। ড. আমানউল্লাহ বলেন, সিঙ্গাপুরে যেখানে মাত্র ৫টি চ্যানেল, অস্ট্রেলিয়াতে ৭টি, কানাডায় ৬টি সেখানে আমাদের দেশে এতো টিভি চ্যানেলের প্রয়োজন কী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।