পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকারকে বিপাকে ফেলতে উঠে পড়ে লেগেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের একটি চক্র। অজানা মহামারি করোনার শুরু থেকে সরকারকে বিতর্কিত করতে নানামুখী অপতৎপরতা চালাচ্ছে চক্রটি। মহামারি করোনায় জীবন বাজি রেখে গত প্রায় দেড় বছর ধরে চিকিৎসকরা দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। তাদেরকে পুরস্কার না দিয়ে বরং উস্কে দিতে বিতর্কিত বদলি আদেশ জারি করেছে আমলাদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট। সরকারের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের ক্ষোভ উস্কে দিতেই যাচাই-বাছাই ছাড়াই অসঙ্গতিপূর্ণ মৃত ও অবসরপ্রাপ্তদের বদলির আদেশ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বদলি-পদায়ন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যাচাই-বাছাই না করে মৃত-ও অবসরপ্রাপ্তদের বদলি এটা পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে এবং সরকারকে বিতর্কিত করতে এ ধরনের আদেশ দিয়েছে আমলারা। সরকারের ভেতরে থেকেই সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা। এ যেন শর্ষের ভেতরেই ভূত!। যদিও পরে তোপের মুখে এ আদেশ ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের বদলির আদেশ স্থগিত করে। স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. আবু রায়হান মিঞা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়।
একাধিক চিকিৎসক জানান, মন্ত্রণালয়ের এই বদলি আদেশ যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ ও তুঘলকি। সেখানে রয়েছে মৃত ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকের নাম। এমনকি মেডিক্যাল কলেজের বেসিক সাবজেক্টের অধ্যাপক, হƒদরোগ, চক্ষু, দন্তবিশেষজ্ঞের নামও রয়েছে। যাদেরকে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। যেখানে তাদের কোনো পদ নেই, এমনকি কোনো কাজও নেই। আমলাদের এমন সিদ্ধান্তে চিকিৎসক সমাজ একই সঙ্গে সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। তারা বলছেন, কোনো সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি এ ধরনের আদেশ জারি করতে পারে না। সারা দেশে যখন লকডাউন তখন আদেশ দিয়ে দুই দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজে দিন-রাত অনলাইনে ক্লাস চলে। শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করতে অধ্যাপকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এমন সময় এ ধরনের আদেশ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে তারা চিকিৎসকদের প্রতি চূড়ান্ত ‘কর্তৃত্ববাদী’ আচরণ হিসেবে দেখছেন দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি কিংবা পরিকল্পনা ছাড়াই এমন একটি সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতও এখন আমলাদের নিয়ন্ত্রণে। এখানে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। আর মহামারি ঠেকাতে যেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিচ্ছে, সেখানেও বড় গলদ আছে।
সূত্রমতে, গত ৪ ও ৫ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অন্তত ৪৮টি আদেশে ১ হাজার ২৩৯ জন চিকিৎসককে গতকাল বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। উপসচিব জাকিয়া পারভিনের স্বাক্ষরে এসব প্রজ্ঞাপনে তাদের পদায়ণ করা হয়। বদলিকৃত চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন, আরটিপিসিআর ল্যাবে, কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছেন এমন চিকিৎসকরাও রয়েছেন। এই ভুলে ভরা গণবদলি নিয়ে সমালোচনা হলে পরবর্তীতে এই বদলি স্থগিত করে আদেশ জারি করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
অবশ্য বদলি আদেশে স্বাক্ষর করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভগের উপসচিব জাকিয়া পারভিনের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃতদেরকে বদলির বিষয়টি জানতে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
চক্রটি গত বছর করোনার শুরুর দিকেও এ ধরণের বদলির মাধ্যমে সরকারকে বিতর্কে ফেলার চেষ্টা করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমলাদের এ অসাধু সিন্ডিকেটের এতোদিন নেতৃত্বে ছিলেন সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে বদলি হওয়া বিতর্কিত স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আব্দুল মান্নান। তিনি বদলি হয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে গেলেও এখনও তার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে স্বাস্থ্য খাত। এখনও স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটার দায়িত্বে আছেন ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা সিএমএসডি পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান। তিনি একজন বিএসএস প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব হলেও গত বছর ২ জুন চিকিৎসকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও ওই সময়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আব্দুল মান্নান প্রশাসন থেকে চিকিৎসকের পদে মোরশেদ জামানকে পদায়ন করেন। এর পর থেকে মোরশেদ জামান স্বাস্থ্যের সকল ক্রয়ে একক কর্তৃত্ব দেখাতে শুরু করে। কেনাকাটায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের এ সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারকে দিকনির্দেশনা দেয়া একজন প্রভাবশালী সচিব। স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আব্দুল মান্নানকে বদলি করা হলেও আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং প্রভাবশালী ওই সচিবের নির্দেশেই চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের সিন্ডিকেট।
সূত্রমতে, আবু হেনা মোরশেদ জামানকে গত বছরের ৩ জুন দায়িত্ব নিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য বিদায়ী বিতর্কিত স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আব্দুল মান্নানের সঙ্গে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারকে বিতর্কিত করতে করোনার শুরুর দিকে যারা দেশের ক্রান্তিকালে সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান করে মহামারি মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের সকলের বিল আটকে দেন। এতে ১৯৬টি প্যাকেজের ১ হাজার ২৮৫ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকার বিল আটকে যায়।
এসব বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আমলাতান্ত্রিকভাবে করা এই বদলি আদেশ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিপাকে ফেলতে করা হয়েছে। যখন দেশের চিকিৎসকরা বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, ১৫ মাসেরও বেশি সময় ছুটি ছাড়া দায়িত্ব পালন করছে, তখন এই আদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ, হীন উদ্দেশ্যমূলক এবং সরকারকে বিপাকে ফেলতে আমলারা এ কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ডা. আজিজ।
চিকিৎসকদের বদলি বা পদায়নের এই আদেশকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে অভিহিত করে কোডিভ-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এমন একটা গুবলেট পাকানো বদলি কাক্সিক্ষত না। দেশের এত বড় একটা খাত এভাবে চলতে পারে না। আমাদের তো লজ্জা লাগছে যে, মৃত একজন মানুষকেও আমাদের মন্ত্রণালয় পদায়ন করেছে। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসককে করেছে।
অধ্যাপক নজরুল আরও বলেন, ‘এখন তো আমার ভয় হচ্ছে। আমাদের দেশের অক্সিজেন প্রোডাকশন কতটুকু হচ্ছেÑ তার হিসাব ওরা রাখে কি-না। কয়েক দিন পর দেখা যাবে অক্সিজেন নেই। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিলাম; কিন্তু অক্সিজেন থাকল না। তখন কী হবে?’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ মনে করেন, যে পদ্ধতিতে চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছেÑ তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতেই এটা হতে পারত। তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসার জন্য মূলত দরকার হয় মেডিসিনের চিকিৎসক। এর সঙ্গে বক্ষব্যাধি কিংবা অ্যানেসথেসিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও যুক্ত হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোথায় কতজন চিকিৎসক দরকার তার একটি তালিকা করে দেখতে হতো কাদের পদায়ন করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।