পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : একের পর এক প্রকৃতিক দুর্যোগসহ প্রাণী সম্পদ খাতে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার সাথে জনবল সংকট সত্ত্বেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গবাদী পশুর সম্প্রসারণ কার্যক্রম আশার আলো দেখাচ্ছে। বিগত দু’টি কোরবানীর ঈদ ছাড়াও ঈদ উল ফিতরের সময় সম্পূর্ণ দেশীয় গরু-ছাগল ও খাসীর ওপর নির্ভরশীল হয়েই বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল দক্ষিণাঞ্চলে। দম যতটা বৃদ্ধি পায় তা সাধারণ মূল্যস্ফীতির সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলে দাবী ওয়াকিবহাল মহলের। উপরন্তু সম্পূর্ণ নিজস্ব পশু সম্পদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিগত দু’বছরে ৪টি বড় ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রাণী সম্পদ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞগণ।
নিকট অতীতেও ভারতীয় গরু ছাড়া ঈদ উল আজহায় কোরবানী উদযাপনকে অনেকেই কল্পনা বিলাস মনে করলেও গত দু’বছরে তা বাস্তব সত্যে পরিণত হয়েছে। চলতি বছর ঈদ উল আজহায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় সোয়া ৩ লক্ষাধিক গরু কোরবানী হয়েছে। এসময় ছাগল ও খাসী কোরবানী হয়েছে আরো প্রায় আড়াই লাখ। গত বছরও প্রায় সমসংখ্যক পশু কোরবানী হয় দক্ষিণাঞ্চলে। আর এসব পশুর প্রায় পুরোটাই দেশীয় বলে দাবী করেছেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মীগণসহ সাধারণ মানুষও।
প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ৭ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে গরুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ। বর্তমানে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলায় ২৪ লাখ ৩০ হাজারের মত গরু লালন পালন হচ্ছে। যা ২০০৭ সালে ছিল ১৯ লাখ ৭৫ হাজারের মত। আর ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৯৩ হাজার। অপরদিকে বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে মহিষের সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজারের মত। যা ২০১০ সালে কিছুটা বেশী ছিল, ২.৬২লাখ । তবে এ সংখ্যা ২০০৭ সালে ছিল ২.৭৭ লাখ।
নানা প্রকৃতিক দুর্যোগসহ কৃত্রিম প্রজননে মহিষের সফলতার হার সন্তোষজনক না হওয়ায় এ সংখ্যা বৃদ্ধি না পেলেও দক্ষিণাঞ্চলে ছাগলের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের মতে, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখের কাছাকাছি। যা ২০১০ সালে ছিল ৭ লাখের মত এবং ২০০৭ সালে ৬ লাখ ৮ হাজারের কিছু বেশী। সে হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে গত ৯ বছরে ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ লাখ।
তবে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াল ‘সিডর’এ দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলাগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার গরু, ৭ হাজার মহিষ, ৪১ হাজার ছাগল ও প্রায় ১৯ লাখ হাঁস-মুরগীর মৃত্যু ঘটে। সিডরের তা-বে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় প্রাণী সম্পদ সেক্টরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। সরকারী হিসেব মতে, সিডরে বরিশাল বিভাগের প্রায় ৩ হাজার হাঁস-মুরগীর খামার ছাড়াও প্রায় ৪শ’ গবাদী পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঐ ঝড়ের তা-বে শুধুমাত্র পশু খাদ্য বিনষ্ট হয় প্রায় ১৫ হাজার টনের মত। অপরদিকে ২০০৯-এর ২৫ সেপ্টেম্বর ‘আইলা’র জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আরো ১০ সহস্রাধিক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ছাড়াও প্রায় ১ লাখ হাঁস-মুরগীর মৃত্যু ঘটে বলে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের হিসাবে বলা হয়েছিল। সিডর ও আইলার তা-বে বিনষ্ট খাবার এবং গবাদী পশু ও হাঁস-মুরগীসহ প্রাণী সম্পদ সেক্টরে সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় দু’শ’ কোটি টাকার মত। যার বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশী বলে দাবী খামার মালিকদের। কিন্তু সে ক্ষতি পুনর্বাসনে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণী সম্পদ খাত মারাত্মক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। যা আজো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
সিডর ও আইলার তা-বের পরে ‘এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা’ বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ সেক্টরে আরেকটি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৭-এর ১৫ নভেম্বরের সিডরের তা-বের পর পরই ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্পও রক্ষা পায়নি। এর ফলে ২০০৮ সালে প্রায় ৩২ হাজার হাঁস-মুরগীসহ প্রায় ১ লাখ ডিম এবং ২০১১ সালে আরো প্রায় ৩০ হাজার মুরগী ও প্রায় ২৫ হাজার ডিম ধ্বংস করে ফেলা হয়। ২০০৭-এর শেষভাগ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রাণী সম্পদ খাতে এ সংক্রামক ব্যাধি পোল্ট্রি শিল্পকে কয়েক দফায় চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। সব মিলিয়ে সিডর, আইলা ও মহাশেনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু’র কারণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণী সম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল হাজার কোটি টাকার মত। তবে এসব দুর্যোগ থেকে উত্তরণে তেমন কোন পরিকল্পিত পুনর্বাসন কার্যক্রমও ছিলনা। ফলে গবাদী পশু খাতের খামারী ও কৃষকগণ সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও দক্ষিণাঞ্চলের পোল্ট্রি শিল্প এখনো বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
গত দু’টি বছর ভারতীয় গরু বিহীন কোরবানী ও ঈদ উল ফিতর উদযাপনের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে গরু খামারী ও কৃষকদের মধ্যে আস্থা আরো বেড়েছে। এমনকি গরুর ভাল দাম পেয়ে কৃষকসহ খামারীগণ লাভবানও হয়েছেন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণী সম্পদ খাতের আরো সম্প্রসারণসহ এ সেক্টরের প্রতি কৃষক ও খামারীদের আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নতমানের গাভী এবং ষাঁড় উৎপাদনে কৃত্রিম প্রজননসহ এর বিজ্ঞান সম্মত লালন পালনে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও সব ধরনের সেবা মানুষের দোরগোরায় পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবহাল মহল। গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় ৮৮ হাজার গাভীকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নতমানের বাছুর উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৫১ হাজার ১৬টি। আর এ থেকে বাছুর উৎপাদনের সংখ্যা মাত্র ১৯ হাজার ১৮৩। কৃত্রিম প্রজনের পাশাপাশি এর বিজ্ঞানভিত্তিক লালন পালনে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের ভূমিকা আরো জোরদার করণের দাবী করেছেন একাধিক খামার মালিকসহ কৃষকগণও।
তবে জনবল সংকটের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কার্যক্রম যথেষ্ট ব্যাহত হচ্ছে। এ বিভাগের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ৫৩৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১৫৫টিই শূন্য পড়ে আছে। ৪২টির মধ্যে ২১টিতেই কোন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নেই। ১৬টি উপজেলায় কোন ভেটেরিনারী সার্জন পর্যন্ত নেই। বিভাগের ৬ জেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে ছয়জন ভেটেরিনারী সার্জনের মধ্যে আছেন মাত্র ১জন। ৪০টি উপজেলা লাইভস্টক এসিস্টেন্ট পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৪জন। ৩৬টি পদেই কোন জনবল নেই।
তবে এসব বিষয়ে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগের প্রধান নির্বাহী ও উপ-পরিচালক মানবেন্দ্র লাল সাহার সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকলেও তা মেনেই প্রতিটি কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের চেষ্টাসহ কৃষক ও খামারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই দক্ষিণাঞ্চলের গবাদী পশুর সংখ্যা বাড়ছে বলেও তিনি জানান। জনবল সংকটের বিষয়টি অধিদফতর সহ মন্ত্রণালয় অবগত আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝে মাঝেই এখানে নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তবে অবসর গ্রহণসহ নানা কারণে কিছু পদ শূন্য হয়ে গেলেও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই কাজ করছি বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।