পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নগদ প্রণোদনা ও করোনায় বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের কারণে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। পাশাপাশি মহামারিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে প্রবাসীরা জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। শুধু গত জুন মাসেই তারা পাঠিয়েছেন ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রতি মাসেই আগের বছরের একই মাসের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বছরের ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসেই ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে ২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার করে এসেছে। মহামারির এই বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে; ওই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা এক মাসের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে মে মাসে, ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা পড়ে। ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর আর রেমিট্যান্স কমেনি; প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়েছে।
অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচকের এই উল্লম্ফন মহামারি মোকাবিলা করতে সরকারকে ‘সাহস জুগিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে; কল্পনারও বাইরে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা এই কঠিন সময়ে বেশি বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। আমি আবারও এই ভাই-বোনদের কৃতজ্ঞতা জানাই; ধন্যবাদ জানাই।’ রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে ২ শতাংশ প্রণোদনা অবদান রেখেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১২ বছর আগে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। আমাদের সরকারের সময়ে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে এখন ২৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। এই অর্জন নিঃসন্দেহে আর একটি অনন্য ঐতিহাসিক রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা সরকারি ৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে ৬১০ কোটি ৬২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকে এসেছে ৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বেসরকারি ৩৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৮১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৮ ব্যাংকে এসেছে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে একক ব্যাংক হিসেবে সব চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। ব্যাংকটিতে ৭৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮২ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে অগ্রণী ব্যাংকে। ২৪৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এনে তৃতীয় অবস্থানে আছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকে এসেছে ১৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলের প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে ওই অংক ছিল এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে।
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে ২০২০ সাল শেষে দেখা যায়, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর অর্থবছরের হিসাবে রেমিট্যান্স বাড়ল আরও বেশি: ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
রেমিট্যান্স বাড়ার প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ-উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামরির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি বিশেষ তিনটি কারণে রেমিট্যান্স বেশি পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে প্রথমটি হলো- মহামারিতে অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়েছেন আবার অনেকের কাজ হারানোর সম্ভাবনা আছে; তাই তাদের সঞ্চিত অর্থ যা ছিল তা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় হচ্ছে- সরকারের পক্ষ থেকে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে অনেকে হুন্ডি না করে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন। এছাড়া করোনার কারণে বিদেশে যাতায়াত কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারনেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে এটি ধরে রাখতে হলে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনও আমরা যেসব দেশে লোক পাঠাই সেখানকার অবস্থা যদি উন্নতি না হয় তাহলে আগামীতে সেখানে প্রবাসী আয় কমে যাবে। তাই দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর জোর দিতে হবে। যাতে প্রবাসে শ্রমিকরা বেশি টাকা আয় করতে পারেন। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আমাদের কুটনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
রিজার্ভ ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার ॥ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে। গতকাল দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। তবে ৪ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এক মাসেরও কম সময়ে ১ জুন তা ফের ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসেরও কম সময়ে ২৯ জুন তা আরও বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এক সপ্তাহে অর্থনীতির এই সূচক আরও বেড়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।