Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বরেণ্য গীতিকার ফজল-এ-খোদা আর নেই

প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কালজয়ী কষ্ঠ শিল্পী মরহুম আবদুল জব্বারের কন্ঠে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতো। দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে দেশপ্রেমে প্রেরণা যোগাতো। সেই কালজয়ী গানের গীতিকার ফজল এ খোদা আর নেই। গতকাল রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রখ্যাত এই গীতিকার করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি ৩ পুত্র, স্ত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল নামাজে জানাজা শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ফজল এ খোদা পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তালিকাভুক্ত হন টেলিভিশনে। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের প্রতিষ্ঠাতা ফজল এ খোদা এদেশের শিল্পী সমাজের কাছে ‘মিতা ভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন।
ফজল এ খোদার লেখা বহু গান এদেশের কোটি কোটি সংগীতপ্রেমি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে-‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৭১-এ অসহযোগ অন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।

সংগীতাঙ্গনে ৫০ বছরের ক্যারিয়ারে ফজল-এ খোদা অসংখ্য দেশাত্মবোধক, আধুনিক, লোক সংগীত ও ইসলামী গান লিখেছেন। তার লেখা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০টি গানের তালিকায় ১২তম (দ্বাদশ) স্থান পায়। ফজল-এ-খোদার লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আরও রয়েছে-‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, ‘আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’ প্রভৃতি। সুরকার আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, অজিত রায়, দেবু ভট্টাচার্য, সত্য সাহা প্রমুখের মতো সঙ্গীতজ্ঞ তার লেখা গানে সুর করেছেন। কণ্ঠ দিয়েছেন বশীর আহমেদ, আবদুল জাব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথিন্দ্রনাথ রায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা।
মূলত ছড়া দিয়ে তার লেখালেখি শুরু। তার ছড়াগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি আর কবিতা গ্রন্থ ৫টি। এছাড়াও গান, নাটক, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তার সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা ৩৩টি।

ফজল এ খোদার স্ত্রী মাহমুদা সুলতানা ও বড় ছেলে ওয়াসিফ এ খোদা এবং পুত্রবধু করোনায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে মাহমুদা সুলতানা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ফজল এ খোদার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগটনের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফজল-এ-খোদা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ