পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ফোরামেই নয়, সর্বত্রই এখন একই আলোচনা, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ কি লাগবেই? গতকাল শুক্রবার একটি বিয়েতে গিয়েছিলাম। সেখানে বলতে গেলে সকলেই বিয়ে-সাদীর আলোচনা, পাত্র কেমন হলো, কনে কেমন হলো, এসব কথা ছেড়ে দিয়ে পাক-ভারত সম্ভাব্য যুদ্ধের আলোচনায় মেতে উঠেছিলেন। গাড়ির ড্রাইভার এমনকি স্কুটার ড্রাইভারও প্রশ্ন করে, স্যার, ইন্ডিয়া- পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ কি লাগবে? লাগলে কে জিতবে? বাংলাদেশের হাল কি হবে? তাই দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের জ্বর বাংলাদেশের গায়েও উঠেছে। আরো অনেক প্রশ্ন আছে। যুদ্ধ লাগলে আমেরিকা কোন পক্ষ নেবে? রাশিয়া কোন পক্ষ নেবে? চীন, ইরান, তুরস্ক, সউদী আরব এবং সমগ্র ওআইসি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠলে তারা পাকিস্তানের পাশে কতদূর এগিয়ে আসবে? যুদ্ধ লাগলে কি সেটি লিমিটেড ওয়ার হবে, নাকি সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ নেবে? যদি সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ নেয় তাহলে সেটি কি চূড়ান্ত পরিণামে পারমাণবিক যুদ্ধে পর্যবসিত হবে? এ ধরনের হাজারটি প্রশ্ন। এ অবস্থায় আমার ধারণা কি? আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই প্রশ্ন করতে পারেন।
আদতেই কি যুদ্ধ লাগবে?
দুই দেশের মধ্যে টান টান উত্তেজনা সত্ত্বেও আমার মনে হচ্ছে না যে শেষমেশ দু’টি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। আমি বাংলাদেশের অন্ততপক্ষে ৯৫ শতাংশ মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারছি। এই যুদ্ধের ফলাফল তারা কি রকম দেখতে চান সে সম্পর্কেও আমার একটি পরিষ্কার ধারণা হয়েছে। তারপরও আমার মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত হয়তো যুদ্ধের আগুন নাও জ্বলে উঠতে পারে।
উভয় দেশের মিলিটারি ব্যালান্স
ইতোমধ্যেই আপনারা বাংলাদেশেরই দু-একটি কাগজে পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক শক্তির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেয়েছেন। ঐসব বর্ণনায় দেখেছেন যে, সামরিক বাহিনীতে জনবল, ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, জঙ্গিবিমান, বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই ভারতের যুদ্ধাস্ত্র পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া ভারতের অস্ত্রভা-ারে যেসব যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে তার অধিকাংশই সর্বাধুনিক। পাকিস্তানের যুদ্ধাস্ত্র সে তুলনায় ততখানি সর্বাধুনিক নয়। দুই-একটি উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন ভারতের টি-৯০ ট্যাংক। এগুলো রাশিয়া সরবরাহ করেছে। একেবারে লেটেস্ট। আরো রয়েছে টহলদার বিমান ‘অ্যাওয়াক’। নাম ‘ফ্যালকন’। এটির সাপ্লায়ার ইসরাইল। রাশিয়ার জঙ্গিবিমান ‘এসইউ-৩০’ এবং ‘এসইউ-৩৫’। আরো আছে রুশ জঙ্গিবিমান ‘মিগ-২৯’। রয়েছে ব্রহ্ম ক্ষেপণাস্ত্র। তাদের ‘অর্জুন ট্যাংক’ কিছুটা সেকেলে হলেও সংখ্যায় অনেক। রয়েছে দুইটি বিমানবাহী জাহাজ। নাম ‘বিক্রান্ত’ ও ‘বিক্রমাদিত্য’।
পাকিস্তানের অস্ত্রভা-ারে রয়েছে ট্যাংকের মধ্যে ‘আল-খালিদ’, ‘টি-৮০’। এগুলো কিছুটা মডার্ন। আরো আছে ‘পিটি-৭৬’ এবং ‘টি-৫৪/৫৫’ ট্যাংক। তবে এগুলো কিছুটা সেকেলে।
জঙ্গিবিমানের মধ্যে রয়েছে চীনা ‘জেএফ-১৭’, ‘অ্যাওয়াক’ এবং ‘জে-৭’। আর রয়েছে মার্কিন জঙ্গিবিমান ‘এফ-১৬’। পাকিস্তানের কোনো ডেস্ট্রয়ার নেই। নেই কোনো বিমানবাহী জাহাজ।
সুতরাং প্রচলিত অস্ত্রে বা কনভেনশনাল ডবধঢ়ড়হং-এর দিক দিয়ে পাকিস্তান ভারতের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই সম্ভাব্য যুদ্ধ যদি প্রচলিত অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে সেই যুদ্ধ ভারতের অনুকূলে এবং পাকিস্তানের প্রতিকূলে যাবে।
পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের আশঙ্কা
তাই বলে কি পাকিস্তান তার ভূখ- হারাবে? যদি তেমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি আদতেই হয় তাহলে পাকিস্তান তার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে। যদি তাই হয় তাহলে পরিস্থিতি ভারত ও পাকিস্তান উভয়েরই হাতের বাইরে চলে যাবে। তারপর কি হবে? উত্তর একটাই। আর সেটি হলো ‘ধুলায় অন্ধকার’।
আমেরিকা, চীন ও রাশিয়া
একটি যুগ ছিল যখন পাকিস্তান আমেরিকার সাথে অন্তত তিনটি সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল। তারপরও আমেরিকা ইন্দো-পাক যুদ্ধে কোনো সময় তার মিত্র পাকিস্তানের পক্ষে আসেনি। রাশিয়া সব সময় ভারতের পাশে ছিল। একাত্তর সালের বাংলাদেশ যুদ্ধে মার্কিন বিমানবাহী ‘সপ্তম নৌবহর’ যখন বঙ্গোপসাগরে এসেছিল তখন তার পিছে পিছে এসেছিল তৎকালীন সেভিয়েত (বর্তমানে রুশ) বিমানবাহী জাহাজ। একাত্তরের যুদ্ধেও আমেরিকা হস্তক্ষেপ করেনি। আমেরিকা বলেছিল যে, তাদের বিমানবাহী সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে এসেছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানকে বাঁচাতে। ইন্দিরা গান্ধী যেন পশ্চিম পাকিস্তানকেও গ্রাস না করেন সে জন্যই সেটি ইন্ডিয়ার ডেটারেন্ট হিসেবে এসেছিল।
পাকিস্তানের প্রতি চীনের সম্প্রতিক সমর্থন নিয়ে অনেকের মধ্যে উৎসাহ ও উল্লাসের একটি জজবা তৈরি হয়েছে। অতীতে গণচীন পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানালেও সেটি কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এর বাইরে সে আসতে পারেনি।
আমেরিকা এখন পর্যন্ত নন-কমিটাল, অর্থাৎ কোনো পক্ষকেই সমর্থন দেয়নি। রাশিয়া বিগত ৬৯ বছরে এবারই সর্বপ্রথম দুই শত সৈন্য এনে পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করছে। কিন্তু তার ফলে কি এ কথা বলা যাবে যে, রাশিয়া ভারতের ওপর থেকে তার প্রায় ৭০ বছরের বন্ধুত্বের হাত সংকুচিত করবে?
যুদ্ধের আশঙ্কা ও কূটনীতি
তারপরও কিছু করতে হলে এর মধ্যেই সেটি করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা। পাকিস্তান ভারতের পদানত হোক, এটি পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন চাইতে পারে না। কারণ পাক-চীন করিডোরে চীন ইতোমধ্যেই ৪৬ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে। বেলুচিস্তানের গোয়াদরে বানিয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর। পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন আমেরিকা এবং চীন উভয়ের কাছেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
ওপরে যতগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করলাম, যুদ্ধের দাবানল জ্বলে ওঠার আগে শুধু পাকিস্তান ও ভারত নয়Ñ আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনও ঐসব পয়েন্ট বিবেচনায় আনবে। দুইটি দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক হিসাবের চেয়ে ঐ পয়েন্টগুলো বিবেচনার প্রধান ফ্যাক্টর হবে বলে আমার মনে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।