Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আ’লীগ নয় অন্য কেউ অন্যভাবে দেশ চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ দেশে ভারতের সুজাতা সিং মার্কা নির্বাচন চাই না -শফিউল আলম প্রধান
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ নয়, অন্য কেউ অন্য কোনোভাবে দেশ চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে, আওয়ামী লীগ দেশ চালাচ্ছে, সরকার পরিচালনা করছে? আওয়ামী লীগ রাজনীতি করছে? আমার মনে হয় না। তারা অন্তর থেকে বলবেন যে না তারা দেশ চালাচ্ছেন না, অন্য কেউ অন্য কোনোভাবে এ দেশ পরিচালনা করছে। একই সভায় জাগপার শফিউল আলম প্রধান বলেন, ভারতের সুজাতা সিং মার্কা নির্বাচন আমরা চাই না, গণতন্ত্র ফিরে চাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে জাতীয় সংসদকে সত্যিকার অর্থেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল করতে হলে আমরা অবিলম্বে একটি নির্বাচন চেয়েছি। আমরা কিন্তু কখনো বলিনিÑমধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচন (২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন) তো মানি না। সুতরাং নতুন নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচন কীভাবে হবে? অবশ্যই নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হতে হবে। আর ওই নির্বাচন পরিচালনা করবে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নতুন ইসি গঠনে ‘সার্চ কমিটি’ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই কমিশন গঠন করতে আপনাদের নির্বাচিত সার্চ কমিটি নয়, জনগণের নির্বাচিত সার্চ কমিটি দ্বারা সেই কমিশন গঠন করতে হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিকে সেটা করতে হবে। অন্যথায় আপনারা যেই উদ্যোগই গ্রহণ করেন না কেন, সেই উদ্যোগ জনগণ সমর্থন করবে না।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। ৫ সদস্যের নতুন কমিশন নিয়োগে আগের বারের মতো এবারও ‘সার্চ কমিটি’ করা হচ্ছে বলে ইতোমধ্যে আভাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জোট বাঁধো’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সেটা শুধু নয়, আজকে আমরা অন্ধকার গহ্বরের মধ্যে পড়েছি। এই সরকার আমাদের সেই অন্ধকারে গহ্বরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সেই অন্ধকারের গহ্বরের শেষের দিকে, টানেলের শেষের দিকে যে আলো, সেই আলো খুঁজে বের করতে হবে। জনগণকে সংগঠিত করে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনতে হবে, জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার বিরাজনীতিকরণের কাজ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে অবৈধ ‘মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন’ সরকার বিরাজনীতিকরণের কাজ শুরু করেছিল, তাদের সেই অসম্পূর্ণ কাজটি এখন করে চলেছে আওয়ামী লীগের সরকার। অর্থাৎ তারা বিরাজনীতিকরণ করছে। আমরা দেখেছি, তারা সচেতনভাবে দেশে যাতে গণতন্ত্র না থাকে, সেজন্য কাজ করে চলেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাথে যাদের সম্পর্ক ছিল, যে দলটি দীর্ঘকাল এদেশের মানুষের সঙ্গে থেকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে, ৬৫ বছরের বেশি যে দলটির বয়স, সেই দলটি কীভাবে আজকে দেশের প্রতিটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। আজকে জনগণ ভোট দিতে পারে না, কথা বলার অধিকার, সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন সরকার ‘নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘতর’ করতে দমননীতি অনুসরণ করে বিএনপিকে ‘নির্মূল’ করার কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারে না। তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, মুখে বলে, প্রয়োজনের জন্য গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসে, তারপরে সমস্ত কিছু ভুলে যায়।
জঙ্গিবাদকে ‘ভয়াবহ দানব’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই জঙ্গিবাদ, এই দানব আওয়ামী লীগের প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠেছে। তারা ক্ষুদ্র সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে।
দেশের পত্র-পত্রিকায় আসছে, যেসব জঙ্গি ধরা পড়ছে, তারা সব আওয়ামী পরিবারের ছেলে। যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তা আওয়ামী লীগের নেতার বাড়ি বলে ধরা পড়ছে। আরো কথা আছে, যাদের জঙ্গি বলে ধরছেন, তাদের সঠিক তদন্ত করা হচ্ছে না কেন? তাদের আদালতে সোপর্দ করে সঠিক সত্যটি উৎঘাটন করা হচ্ছে না কেনÑএই প্রশ্নগুলো এসে যাচ্ছে ইতোমধ্যেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কিন্তু তারা বাঁচিয়ে রাখেনি। ক্রসফায়ারে মারা গেছে, চলছে। এটার কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলে আমরা নাকি জঙ্গিদের জন্য মায়াকান্না কাঁদছি। না, আমরা চাই, জঙ্গিবাদ যারা করছে, তাদের শেকড় ধরে টেনে ফেলা হোক। আমরা জঙ্গিবাদকে সব সময় ঘৃণা করেছি শুধু নয়, এর বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি।
চলমান দশম সংসদকে জনপ্রতিনিধিত্বহীন সংসদ অভিহিত করে সেখানে রামপাল বিদ্যুৎ, তিস্তা নদীর পানি সমস্যা, সীমান্ত হত্যাকা-সহ জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় না বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া বাংলাদেশ বাঁচবে না। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, ভারতের সুজাতা সিং (সাবেক পররাষ্ট্র সচিব) যেভাবে ঢাকায় এসে নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে গেছেন, সেই মার্কা নির্বাচন আমরা চাই না।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে যাতে আমার দেশের ছেলেমেয়েরা ভারতে শিক্ষা নিতে যায়। একইভাবে গার্মেন্টস শিল্পকেও ধ্বংস করা হয়েছে।
কাশ্মীরের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেখানে ৫০ লাখ মানুষ। তার মধ্যে শিশু-মহিলা ৩০ লাখ। বাকি ২০ লাখ লোক নিজেদের শৃঙ্খলমুক্ত করতে লড়াই-সংগ্রাম করছে। এই ২০ লাখ মানুষকে ভারত সরকার পোশাকে এবং সাদা পোশাকের ৮ লাখ সৈন্য দিয়ে দামিয়ে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে আওয়ামী লীগ দমিয়ে রাখতে পারবে না। বিরাজমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
আলোচনা সভায় জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সহসভাপতি মহিউদ্দিন বাবুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ’লীগ নয় অন্য কেউ অন্যভাবে দেশ চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ