Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রবাসী শ্রমিকরা পর্যুদস্ত

টিকা নিবন্ধনে ভোগান্তির শেষ নেই কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, খামখেয়ালিপনা চরমে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের রিজার্ভ বাড়ানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স। করোনার অতিমারিতে গার্মেন্টস খোলা রেখে সহায়তা করা হলেও প্রবাসী শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রথম বিমানের টিকিট নিয়ে ঝামেলায় পড়ে বিক্ষোভ করেছে দেশে আটকে পড়া প্রবাসী শ্রমিকরা। অতপর তাদের বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এখন টিকার নিবন্ধন করতে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ টিকা নেয়ার জন্য এক যায়গায় নিবন্ধন করলেও প্রবাসী শ্রমিকদের দুই যায়গায় নিবন্ধন করতে হচ্ছে।
সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিকে প্রবাসী শ্রমিকদের করোনার টিকা দেয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু প্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং খামখেয়ালির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন টিকা নিয়ে বিদেশ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া প্রবাসী শ্রমিকরা। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী সঙ্কট সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সমস্যা রয়ে গেছে। ফলে গত দু’দিন ধরে প্রবাসী শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে ফিরে যাচ্ছেন এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মরত দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ জন্য দায়ী করছেন। তাদের বক্তব্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও এই কর্মকর্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেননি; আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফাইল চাপা রেখেছেন। এখন সার্ভার নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস রূপা বলেন, আমাদের একটা ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট আছে, সেখানে বলা আছে শনিবার শুধু যারা দোহার উপজেলার তারাই আসবেন। আমরা তারিখ অনুযায়ী ভাগ করে দিয়েছে। ঢাকা জেলার কোন কোন উপজেলা, এরপর সিটি করপোরেশন এলাকা কবে কখন নিবন্ধন করা হবে। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপপরিচালক মো. জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, এমআরপি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীদের নগদ বা বিকাশে (মোবাইল ব্যাংকিং) সরকারের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার কথা। সার্ভারের জটিলতা সমাধানে আমাদের যে টেকনিক্যাল সাপোর্ট রয়েছে, তাদের অবহিত করেছি।
মূলত প্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের খামখেয়ালি ও অদক্ষতার কারণে টিকা নিবন্ধনের প্রথম দিনেই অব্যবস্থাপনার শিকার হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সার্ভার জটিলতার অজুহাত তোলা হয়। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রথম দিনেই প্রবাসীদের টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে অনেক বিদেশগামী শ্রমিক। কর্তৃপক্ষ বলছে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু শ্রমিকদের অনেকে বলেছেন, যথাসময়ে টিকা নিয়ে বিদেশ যেতে না পারলে চাকরি চলে যাবে।
প্রথম দিন প্রবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভের পর ২ জুলাই টিকা দেয়ার নিবন্ধন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। প্রতিশ্রুত ঘোষণা অনুযায়ী প্রবাসীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনতে প্রতি জেলায় জনশক্তি অফিসে শুক্রবার (২ জুলাই) থেকে রেজিস্ট্রেশনের সময় দেয় সরকার। সকাল ৯টায় নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসি সার্ভারে দেখা দেয় জটিলতা।
পাসপোর্ট ও ভিসার কপি দিয়ে সার্ভারে নিবন্ধনের জন্য ২০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পে করার সময় স্থগিত হয় সার্ভারের কার্যক্রম। শুরু হয় উপস্থিত বিদেশগামীদের হট্টগোল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সরোয়ার আলম দুপুরের দিকে প্রবাসী ভবনে নিবন্ধনের জন্য জড়ো হওয়া বিদেশগামী কর্মীদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা শান্ত হোন। সার্ভার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আজ শনিবার থেকে সারা দেশের ৯টি টিটিসি, ১টি মেরিন টেকনোলজি বন্দর সোনাকান্দাসহ ৫৩টি জেলা জনশক্তি কর্মসংস্থান অফিসে করোনা টিকা গ্রহণের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে চট্টগ্রামেও জটিলতা দেখা দেয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েন প্রবাসীরা। এ ছাড়া ভিসার মেয়াদ দু-একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়।
টিকা নিবন্ধন করতে আসা এক প্রবাসী কর্মী বলেন, বিএমইটির (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) রেজিস্ট্রেশনের আরো এক মাস মেয়াদ আছে। টিকা নিবন্ধন করতে আসলে, এখান থেকে জানানো হলো, যাদের বিএমইটির রেজিস্ট্রেশন আছে তারা চলে যান। অব্যবস্থাপনার শিকার প্রবাসী কর্মীরা বলেন, এখানে এসে দেখলাম অফিসের কোনো ব্যবস্থাপনাই ঠিক নেই। বুঝছি না কি করব। একজনের কাছে গেলে অন্যজনকে দেখিয়ে দেন। সে আবার আরেকজনের কাছে যেতে বলেন। স্পষ্ট করে বলছেন না, কি করতে হবে।
তারা বলছেন, অনেকেরই ভিসার মেয়াদ আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো আছে। এখন যদি গন্তব্যে যেতে না পারে, তাহলে তাদের চাকরি থাকবে না। এ অবস্থায় দ্রুত সার্ভার সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সার্ভার জটিলতা কেটে গেলে কুয়েত ও সউদী প্রবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হবে বলে জানায় জনশক্তি অফিস। এ ছাড়াও প্রবাসী অ্যাপেও নিবন্ধন করা যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবাসী শ্রমিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ