Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেড় বছরেও ঢাকার দুই সিটিতে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়নি

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : দেড় বছরেও ঢাকার দুই সিটিতে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়নি। নির্বাচিত মেয়ররা দেশের বাইরে গেলে তাৎক্ষণিক মৌখিক আদেশেই তাদের পছন্দের একজনকে দেয়া হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত কাজে ঢাকার দুই মেয়র কয়েক দফায় বিদেশ সফরে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহার আগে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ফিরে আসেন ৯ সেপ্টেম্বর। তাঁর অনুপস্থিতে সিটি কর্পোরেশনের রুটিন কাজের দায়িত্ব পালন করেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহুল ইসলাম। ঈদের পরে গত ১৬ সেপ্টম্বর দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যান। গতকাল শনিবার রাতে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে এবারও মৌখিকভাবে অলিখিত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে যান। এবার দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের ০৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র থাকার কথা। কিন্তু ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে তিনজন প্যানেল মেয়র হিসেবে মনোনীত করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুই মেয়র মরহুম মোহাম্মদ হানিফ ও সাদেক হোসেন খোকা দায়িত্বে থাকাকালে প্যানেল মেয়র ব্যবস্থা ছিল। তারা বিদেশ সফরে গেলে ভারপ্রাপ্ত মেয়ররা বসতেন মেয়রের মূল রুমে। এখন করা হচ্ছে উল্টো কাজ।
সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্যানেল মেয়র নেই। এ কারণে মেয়ররা বিদেশ সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে বিশ্বস্ত একজন কাউন্সিলরকে রুটিন ওয়ার্ক করার দায়িত্ব দিয়ে যান মাত্র। মেয়র যে ক’দিন দেশের বাইরে থাকেন, ততদিন ভারপ্রাপ্ত মেয়র রুটিন ওয়ার্ক চালিয়ে যান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে লিখিত দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু একদেড় বছরেও তা মানা হয়নি। নিয়মবহির্ভূতভাবে এমনিতেই মেয়র দেশে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেয়রের দায়িত্বও শেষ হয়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দেশে গতকাল শনিবার রাতে দেশে ফিরার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত মৌখিক নির্দেশেই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন। সিরাজুল ইসলাম ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগরভবন আসেন প্রতিদিন সকাল দশটায়। বসেন মেয়রের অফিস রুমের পাশে মিটিং রুমে। সেখানে বসেই এলাকার খবর নিচ্ছেন। আর ভাপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ায় তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
প্রসঙ্গত, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ২০১৫ সালের মে মাসে। এরপর প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়নি। এ কারণে মেয়রদ্বয় দেশের বাহিরে গেলে মৌখিক নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত মেয়র সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্বর্তীকালীন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও কর্পোশেনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও একই সময় দেশের বাইরে রয়েছে। বিশেষ করে মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (প্রনিক) ও মেয়রের পিএস দেশের বাইরে অবস্থান করায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রমে।
ডিএসসিসির সচিবের দফতরের সূত্র মতে, এবারই এই প্রথম সংস্থার মেয়রসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা দেশের বাইরে সফরে গেছেন। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে গেছেন। ২২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা থাকলেও ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মেয়রের দেশে ফিরছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল আমেরিকায় (যুক্তরাষ্ট্রে) অবস্থান করছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। মেয়রের পিএস কবির মাহমুদ গত ১৫ সেপ্টেম্বর চীন সফরে যান। আজ রোববার তার কর্মক্ষেত্রে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। যান্ত্রিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান গত ১৫ সেপ্টম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আগামী ৩ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
তাদের অনুপস্থিতে ডিএসসিসির দাপ্তরিক এবং বিভিন্ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র প্রতিটি দফতরে পড়ে রয়েছে। অর্থাৎ নীতি-নির্ধারণী সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।
তবে দক্ষিণ সিটির ০৬ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি শুধুমাত্র রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন। লোকজন নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন আর নগরভবনে মেয়র দফতরে আসা যাওয়া পর্যন্তই তার কাজ।
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিটি দফতরেই নথিপত্র জমে রয়েছে। মেয়র এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেশে না থাকলে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজকর্ম হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেড় বছরেও ঢাকার দুই সিটিতে প্যানেল মেয়র নির্বাচন হয়নি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ