Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রীষ্ম ও বসন্তের আবহ দক্ষিণাঞ্চলে

প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিনে শরতের প্রায় শেষভাগে এসে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো গ্রীষ্ম আর বসন্তের আবহ বিরাজ করছে। তাপমাত্রার পারদ এখনো ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে পীঠে ঘোরাফেরা করছে। আবার কখনো নাতি শীতষ্ণ আবহাওয়াও লক্ষ্যনীয়। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে আজও আকাশ মেঘলাসহ আগামীকাল ও এর পরের দিন হালকা থেকে মাঝারী মাত্রার কিছুটা বৃষ্টিপাতের প্রবণতার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরগুরোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেতও দেখাতে বলা হয়েছে।
বরিশাল অঞ্চলে গত মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পরে চলতি মাসে বৃষ্টির উপস্থিতি এখনো যথেষ্ট কম। তবে বঙ্গোপসাগরে বিরাজমান লঘুচাপের প্রভাবে গত দু’তিনদিন ধরে আকাশ কিছুটা মেঘলা থাকলেও আবহাওয়ায় যথেষ্ট বসন্তের আমেজ। গতকাল ও এর আগের দিন বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে সামান্যই। চলতি মাসে যেখানে বরিশালে ৩শ’ থেকে ৩৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ দিয়ে রেখেছিলে আবহাওয়া বিভাগ, সেখানে গতকাল (২৪সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৪২ মিলিমিটারের মত। গতমাসে দক্ষিণাঞ্চলে ১৭ দিনে ৫১৩ মিলিমিটারেরও বেশী বৃষ্টি হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮.৩৩% বেশী।
গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মাসজুড়েই কখনো নীল আকাশে ধূসর মেঘের ভেলা উড়ে বেরানো অনেককে প্রকৃতির অপর মহিমার কথা মনে করিয়ে দিলেও চলতি মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। ফলে প্রধান খাদ্য ফসল-আমনের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে গত মাসের অতিবর্ষণে যেমনি রোপা আমন ও এর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তেমন এমাসের বৃষ্টির অভাব পুনরায় এ ধানের উৎপাদনকেও ঝুঁকির কবলে ফেলতে পারে বলে শংকিত কৃষিবীদগণ।
আর এদিকে আশ্বিনের এ সময়ে তাপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ ৩১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠার কথা থাকলেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর তা ৩৪.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায়। এমনকি শেষ রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সময়ও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওপরে উঠছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে মাঝ রাত থেকে মেঘনা অববাহিকায় হালকা কুয়াশাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, ভারতের অন্ধ্র উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে তেলাঙ্গনা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ ভারতের হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য-প্রদেশ, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। ফলে আকাশে কখনো সাদা ধূসর মেঘের ভেলা, আবার কখনো কিছুটা কালো মূর্তি ধারন করলেও বৃষ্টির খুব একটা দেখা নেই। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এবার কিছুটা আগেভাগেই বর্ষার বিদায় ঘণ্টাও বাজতে পারে।
তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আসন্ন অমাবশ্যার ভড়া কোটালে ভড় করে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগে আরো বৃষ্টি ঝড়াতে পারে। এমনকি আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময় মাঝারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগণ। আজ ও আগামীকাল বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধির সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে আবহাওয়া বিভাগ থেকে। সে সাথে বরিশাল ও খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকা এবং দেশের কোন কোন জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া সহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে। তবে গতকয়েক দিন ধরেই দক্ষিণাঞ্চলের দিগন্তজুড়ে মাঝে মাধ্যেই কিছুটা কালো মেঘ জমলেও বৃষ্টির খুব দেখা মেলেনি।
আবহাওয়া বিভাগের মতে গত মাসে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৮% ও খুলনায় প্রায় ৮৭% অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেও সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ২% কম বৃষ্টি হয়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অতিক্রম করে এবং অপর একটি গভীর নিম্নচাপ গত ১৭ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে। এছাড়া গত ২০ আগস্ট সারাদেশের ওপর একটি পূবালী লঘুচাপের আগমন ঘটে যা পরবর্তীতে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২১ আগস্ট বরিশাল-ফরিদপুর-যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলে এসে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। লঘুচাপটি পরবর্তীতে আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ বরিশাল সময় সারাদেশে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ কারণে বরিশাল ও খুলনা বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে গত মাসে। গত ২১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৪টা থেকে পরবর্তী ১২ ঘন্টায় বরিশালে ২৭৩ মিলিমিটার ও ভোলাতে সারাদেশের সর্বোচ্চ ২৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা ছিল স্মরণকালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে ১৯৬৭ সালের ১০ নভেম্বর বরিশালে ২৪ ঘন্টায় ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি কথা আবহাওয়া বিভাগের মাসিক বুলেটিনে উল্লেখ করা হলেও এখনো সে ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে ভারতের অন্ধ্র উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকার সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে তেলাঙ্গনা এবং সন্নিহিত এলাকায় অবস্থান করছে। তা কোন নিম্নচাপে রূপ নেবে কিনা, বিষয়টি এখনো সুস্পষ্ট নয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের কাছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রীষ্ম ও বসন্তের আবহ দক্ষিণাঞ্চলে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ