পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সোহাগ খান : বাংলাদেশের আর্থিক খাতের ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখছে না। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর মত আবারও আটকে গেল রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর আর্থিক খাতে যত কেলেঙ্কারী সংগঠিত হয়েছে, পুরো স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তত কেলেঙ্কারী হয়নি। প্রতিটি কেলেঙ্কারীর পরেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বর্ষীয়ান এই মন্ত্রী। তবে আজ পর্যন্ত একটি কেলেঙ্কারীরও তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তারই মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের মতে, মন্ত্রীর সদিচ্ছা না থাকার কারণেই এসকল তদন্ত প্রতিবেদন অন্য ইস্যুর ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
শেয়ার বাজার, ডেসটিনি. ইউনিপেটুইউ, যুবক, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, মাদার টেক্সটাইল, মাদারীপুর স্পিনিং, বেনটেক্স, ইব্রাহিম কনসোর্টিয়াম, জাজ ভূঁইয়া গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, ঢাকা ট্রেডিং হাউজসহ হাজার খানেক বেনামী কোম্পানী বর্তমান অর্থমন্ত্রী আমলে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছে। এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘সরকার আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারীর বিষয়ে তদন্ত করালেও এই খাতের রাঘব বোয়ালদের চাপে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে না। সরকার দেশ চালাতে গেলে কিছু জায়গায় অদৃশ্যভাবে বাধা থাকে। যার ফলে কিছু করার সামর্থ্য থাকে না সরকারের।’
রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘রির্জাভ চুরির মূল হোতারা বহাল তবিয়তেই আছে। শুধু তাদের নাম প্রকাশ হয়ে যাবে, এমন ভয়ে বারবার দিনক্ষণ ঠিক করেও দেশের রাজকোষ চুরির রিপোর্ট প্রকাশে অর্থমন্ত্রী গড়িমসি করছেন।’
সরকার এই খাতের লুটেরারাদের শক্ত হাতে দমন না করতে পালে যে কোন মূহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে বড় রকমের ধস নামতে পারেÑ আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই সাবেক ব্যাংকার।
সরকারী ব্যাংকের লোপাটের চিত্র
সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে রাজনৈতিক পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ বরাদ্দ ও বেনামে এ্যাকাউন্ট খুলে ঋণপত্র (এলসি) জালিয়াতিসহ বিভিন্নভাবে গত আটবছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লোপট করেছে। এধরনের ঘটনায় সরকারি আটটি ব্যাংকে গত আট বছরে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক, বিডিবিএল ও কৃষি ব্যাংকেই প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসি, প্রাইম, ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের কমপক্ষে পাঁচ শত কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকের পরিচালকদের অনেকেই এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা দালিলিকভাবে দায়িত্ব পালন করায় তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সহজেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আবার ওই বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের প্রভাব খাটানোর বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও দালিলিক প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আপাতত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
দুদক সূত্র মতে, ব্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আর ঋণ জালিয়াতির নগ্নতা প্রকাশ পায় বেসিক ব্যাংকের ঘটনার মধ্য দিয়ে। এই সকল কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর অন্যান্য ব্যাংকের বিরুদ্ধেও একই ধরনের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ আসতে থাকে দুদকে। এসবের মাঝেই ধরা পড়ে বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারী।
সোনালী ব্যাংক
হলমাক গ্রুপসহ কয়েকটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান মিথ্যা তথ্য দিয়ে একই কায়দায় সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হলেও টাকা আদায় সম্ভব হয়নি দীর্ঘ সময়েও। এ ঘটনায় হলমার্ক গ্রুপ ও ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কমিটির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আদায় হচ্ছে না অর্থ। এ দুর্নীতিতে ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালকের জড়িত থাকার অভিযোগ এলেও অনুসন্ধানে দালিলিক প্রমাণ না পাওয়ায় দুদক মামলা করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে।
বেসিক ব্যাংক
বেসিক ব্যাংকের ন্যক্কারজনক ঋণ কেলেঙ্কারী মূল হোতা আব্দুল হাই বাচ্চু এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গা মেলে। দুদকের তদন্তে তার নামের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্টতা থাকলেও মামলা করতে পারেনি। জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা পাঁচ হাজার কোটি টাকার মাঝে আদায় হওয়ার সম্ভবনা নেই ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। অথচ অর্থমন্ত্রী তার ‘পক্ষ নিয়ে’ তাকে সম্মাজনক বিদায়ের ব্যবস্থা করেছেন। তবে এই ঋণ কেলেঙ্কারীর অন্য হোতারা এমডি. ফখরুল আলম, ডিএমডি রুহুল আলম, মোনয়েম খান, মোহাম্মদ সেলিমসহ ব্যাংকের বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেলে অথবা ফেরারী।
রূপালী ব্যাংক
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লোপাটের কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান দুদকে চলমান আছে। ব্যাংকটির লোকাল অফিস থেকে মেসার্স বেনিটেক্স লিমিটেড, মাদার টেক্সটাইল মিলস ও মাদারীপুর স্পিনিং মিলস নামে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা আদায় হওয়ার সম্ভবনা নেই।
জনতা ব্যাংক
ব্যাংকের রমনা করপোরেট ও লোকাল অফিস থেকে তানভীর চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে মেসার্স চৌধুরী নিটওয়্যারস লিমিটেড এবং মেসার্স চৌধুরী টাওয়েলের নামে ঋণ দেখিয়ে ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান পরিচালনা করছে দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি বিশেষ টিম। এছাড়াও থার্মেক্স গ্রুপকে আরও প্রায় ১৫০০ কোটি মাত্রারিক্ত ঋণের দায়ে অভিযুক্ত বর্তমান পরিচালনা পরিষদ।
কৃষি ব্যাংক
ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখা থেকে ভুয়া ঋণপত্রের মাধ্যমে ১৭৪ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুরেখা এন্টারপ্রাইজ, আলম এন্টারপ্রাইজ, ব্রাদার্স এসোসিয়েট, শাহনাজ ট্রেডিং এবং এমআর করপোরেশনের নামে এলসি খুলে ওই পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই শাখার বরখাস্তকৃত ম্যানেজার গুলজার হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
অগ্রণী ব্যাংক
ব্যাংকটির সাবেক ‘আলোচিত’ এমডি (অপসারিত) আব্দুল হামিদ নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা লোপট করেছেন। এই কাজে সহায়তা করেছেন তার ‘ক্যাশিয়ার খ্যাত’ ডিএমডি মিজানুর রহমান (বরখাস্তকৃত)। মুন গ্রুপকে ৭শ’ কোটি টাকা, জাজ ভুইয়া গ্রুপকে ফান্ডেড ২ হাজার ১শ’ কোটি ও নন-ফান্ডেড জামানত ছাড়া ৩ হাজার কোটি টাকা, তানাকা গ্রুপকে ৭৭০ কোটি, এসএ গ্রুপ, আরএসএমআরএম গ্রুপসহ বিভিন্ন গ্রুপ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি অনাদায় যোগ্য এসব ঋণ দিয়েছেন। এসব লুটপাটেরও তদন্ত চলছে দুদকে।
বিডিবিএল
খুলনার আলোচিত পাট ব্যবসায়ী ঢাকা ট্রেডিং হাউসের সত্বাধিকারী টিপু সুলতানের কালো থাবায় আটকে আছে সদ্য একীভূত করা এই ব্যাংকটির প্রায় শতকোটি টাকা। তিনি এলসি পারচেজ করে অর্থ উত্তোলন করলেও মিথ্যা মামলা করে অর্থ আটকে রেখেছেন বলে জানান ব্যাংকটির একজন মহাব্যবস্থাপক। জামানত ছাড়া এলসি দিয়েছে তৎকালীন এমডি জিল্লুর রহামান। এসএ গ্রুপ, নুরজাহান গ্রুপ, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, এমআর ট্রেডিংসহ প্রায় আরো ১০টি প্রতিষ্ঠান লুট করেছে ৫শ’ কোটি টাকা। বিডিবিএল এর অর্থ কেলেঙ্কারীর ঘটনাগুলোও দুদকে তদন্তাধীন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের মূল হোতাদের হাত অনেক লম্বা। তাদের সরকার চাইলেই কিছু করতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।