পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আহমদ আতিক : চীনা প্রেসিডেন্ট আসছেন ঢাকায়। আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও। এগুলোর রেশ থাকতেই ব্রিকস-বিমসটেক আউট রিচ সামিটে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী যাবেন ভারত সফরে। সেখানে তার সাথে বৈঠক হতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা’র। এছাড়া চলছে পাক-ভারত যুদ্ধের দামামা। এরই মধ্যে ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। সার্ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেবার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। সব মিলিয়ে আগামী অক্টোবর মাস বাংলাদেশের জন্য বিরাট কূটনৈতিক ব্যস্ততার। বাংলাদেশ চীনের কাছে চেয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা। মার্কিনীরা জানতে চাচ্ছে নিরাপত্তার জন্য কী চাই বাংলাদেশের। দ্বন্দ্ব এড়াতে ভারত ও চীনকে যৌথভাবে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা বলছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাক-ভারত দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে রাশিয়া, চীন এবং ইরান। বাংলাদেশ এ অঞ্চলে শান্তির পক্ষে। তাই ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিবেচনায় নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনাতে রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমনটিই বলছেন সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই দিনের সফরে আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন। দিন হিসাবে সফরটি দু’দিনের হলেও ২৪ ঘণ্টার কম সময় বাংলাদেশে কাটাবেন তিনি। এসময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবং প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তাঁর এই সফরে বাংলাদেশের বৃহদায়তন প্রকল্পে চীনের অর্থায়নসহ দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এ নিয়ে এখন ব্যস্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তারা। প্রতিদিনই চীনাদের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নানান বৈঠক চলছে।
ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন। গত বৃহস্পতিবারও চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে চীনের। এক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাব নিয়ে দেড় বছর ধরে আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে। সেইসাথে আনোয়ারায় চীনের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সামুদ্রিক অর্থনীতি, সামরিক খাতে সহযোগিতার বিষয়গুলো আসবে। এ ছাড়া সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, মংলা বন্দরের আধুনিকায়ন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন করাসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ১০ কোটি ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করতে চীনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দু’টি প্রকল্পের জন্য বাণিজ্যিক চুক্তি করে চীনের এক্সিম ব্যাংকের কাছেও পাঠানো হয়েছে ঋণপ্রস্তাব। চীনের সাড়া পেলে, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে চূড়ান্ত হবে প্রকল্পের তালিকা। অন্য কোনো উন্নয়ন অংশীদারের সাথে আলোচনার আগেই বেইজিংয়ের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চায় ঢাকা। যদিও এসব প্রকল্পের কয়েকটি নিয়ে আলোচনা চলছিল আগে থেকেই। ২৫টির মধ্যে দুটি প্রকল্পের জন্য বাণিজ্যিক চুক্তি করে দেশটির এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে ঋণ প্রস্তাবও। তবে সে বিষয়েও সাড়া আসেনি এখনো। সেগুলো হলো ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্মেন্ট ফেইজ থ্রি ও ৭০৫ দশমিক আট শূন্য মিলিয়ন ডলারে কর্ণফুলি নদীতে টানেল নির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া চীনের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলো হলো সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন ৫০০.৪৬৬ মিলিয়ন ডলার, রাজশাহী ওয়াসার সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ৫০০ মিলিয়ন ডলার, সিস্টেম লস রিডাকশন রিপ্লেসিং ৫ মিলিয়ন ডলার, ইলেক্ট্র মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেক্ট্রনিক এনার্জি মিটার ১৬৫.৯৮ মিলিয়ন ডলার, এক্সেপেশন এন্ড এস্ট্রেন্দিনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট ২০৩৮.০৬ মিলিয়ন ডলার, পদ্মা ব্রিজে রেইল লিংক ফেইজ ওয়ান ও টু ১৬৫৮.৫৭ মিলিয়ন ও ৯১৭.১৮ মিলিয়ন ডলার, পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক এস্ট্রেন্দিনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি ১৩২১.৮৩ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৩৯৩.৯৮ মিলিয়ন ডলার, মডার্ন নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি ২০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে এর বাহিরেও আরো ১৩টি প্রকল্প চেয়েছিল বাংলাদেশ, যদিও কোন সাড়া মেলেনি চীনের কাছ থেকে। সেগুলো হলো এ ডিজিট্র্যাক প্যারালাল ট্যু দি এক্সিসটিং এমজি লাইন ইন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশন-২৫৮.৩৬ মিলিয়ন ডলার, ডাবল লাইন বিটুইন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন ৭৫২.৭৯ মিলিয়ন ডলার, স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি ১০০০ মিলিয়ন ডলার, মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে এন্ড কোস্টাল প্রটেকশন ওয়ার্কস ফ্রম সীতাকুন্ড-চিটাগাং-কক্সবাজার ২৮৫৬.৫৬ মিলিয়ন ডলার, এক্সপেশন এন্ড মডার্ননাইজেশন অফ মংলা পোর্ট ফ্যাসিলিটিস ২৪৯.১৭ মিলিয়ন ডলার, এক্সটেনশন অফ দ্য এক্সিসটিং আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং অপারেশন অফ বড় পুকুরিয়া কোল মাইনিং ২৫৬.৪১ মিলিয়ন ডলার, গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট কয়েল ফায়ার্ড থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত এমজি রেলওয়ে ট্র্যাক ১৭৫৬.০৫ মিলিয়ন ডলার, প্রিপেইমেন্ট মের্টানিঙ প্রজেক্ট ফর বিপিডিবি ডিস্ট্রিবিউশন জোনস- ৫২১.৫৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া আর ৪টি প্রকল্প ঝুলে আছে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায়। তবে চীনের সাড়া পাবার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে চূড়ান্ত করা হবে প্রকল্পের তালিকা।
জানা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। এর মধ্যে ব্লু-ইকোনমিতে সহযোগিতা, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য জাহাজ সংগ্রহসহ বেশকিছু বড় প্রকল্প রয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যে ২৫টি প্রকল্পের তালিকা করা হয়েছে, তাতে অর্থায়ন নিয়ে চীনের সঙ্গে আগে থেকেই আলোচনা হয়ে আসছে। প্রথম দিকে চীন প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের কথা বললেও এখন আর তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রকল্পগুলোয় তাদের আদৌ আগ্রহী আছে কিনা, তা জানতে চায় বাংলাদেশ। সরকার চাচ্ছে চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকালেই অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হোক। চীন এসব প্রকল্পে সহযোগিতা যদি নাও দিতে চায়, তাও চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিক। কারণ, প্রকল্পগুলোয় চীনের সহযোগিতা না পেলে অন্য উন্নয়ন অংশীদারের কাছে যাবে বাংলাদেশ। চীনের উত্তর পাওয়ার পর বাংলাদেশ চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে কর্ণফুলী নদীর নিচে দেশটির অর্থায়নে নির্মিতব্য বাংলাদেশের প্রথম টানেলের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। হাই প্রোফাইল ওই সফরে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরে চীনা বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ভারত, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশ ওই মেগা প্রকল্পে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। একক কোনো দেশ নয়, বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে আলোচনা রয়েছে। সেখানে চীনও যুক্ত হতে পারে। গত শনিবার ঢাকায় ডেইলী স্টার সেন্টারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক : উন্নয়ন ও আগামীর চ্যালেঞ্জ শীর্ষক দিনব্যাপী আলোচনার সমাপনী অধিবেশনের বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, পটুয়াখালীর পায়রা বাংলাদেশের অনেক ভালো একটি সমুদ্রবন্দর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর আমার ধারণা, চীন ও ভারত এই প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
ঢাকা সফর শেষেই ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাবেন চীনা প্রেসিডেন্ট। আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় ওই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিকসের এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেবেন। সূত্রমতে, গুরুত্বপূর্ণ ওই আয়োজনে বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিবেন প্রধানমন্ত্রী। মূল অধিবেশনের সাইড লাইনে হোস্ট কান্ট্রির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা’র সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠক চেয়েছে ঢাকা। এরই মধ্যে দেশগুলোর কাছে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সূত্র মতে, সম্মেলনের শেষদিনে বৈঠক ৩টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
মোদির সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে করণীয় বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা হতে পারে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলার পাশাপাশি উন্নয়নের দিকে নজর থাকবে দুই প্রধানমন্ত্রীর। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় অসম্পাদিত চুক্তি দ্রুত সম্পাদন নিয়েও কথা হতে পারে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আসন্ন বৈঠকে ইতিমধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও ডকুমেন্টগুলোর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সেখানে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়েও কথা হতে পারে। তিস্তার দিকে চেয়ে আছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকস। যার বর্তমান চেয়ারম্যান ভারত। অন্যদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের কারিগরি ও অর্থনৈতিক জোট বিমসটেকের সদস্য বাংলাদেশ। বিমসটেকের অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।
এদিকে ২ অক্টোবর ঢাকায় হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ৫ম নিরাপত্তা সংলাপ। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ কোন ধরনের সহযোগিতা চায় সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা থাকছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টিই আলোচনার শীর্ষে থাকবে। এক্ষেত্রে মূলত নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে ঢাকার চাহিদাগুলো সম্পর্কেই জানতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা আসছে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব দেবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক-মিলিটারি বিষয়ক প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি টিনা কাইডানাও। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারাও থাকবেন ওই প্রতিনিধিদলে।
গত ১ জুলাই গুলশানের জঙ্গি হামলাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে বিভিন্ন সহায়তার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিজেদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে চিন্তে ওয়াশিংটনকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দেয় ঢাকা। এবারের নিরাপত্তা সংলাপে বিশেষভাবে সেই চাহিদার কথা জানতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের বিষয়েও জানার আগ্রহ থাকবে দেশটির।
সূত্র বলছে, নিরাপত্তা সংলাপে কৌলশগত অগ্রাধিকারমূলক ইস্যু ও আঞ্চলিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়েও আলোচনা হবে। কারণ, এরইমধ্যে উগ্রবাদী সহিংসতা মোকাবেলায় গ্লোবাল কমিউনিটি এঙ্গেজমেন্ট এন্ড রেজিলিয়েন্ট ফান্ড (জিসিইআরএফ)-এর আওতায় ১০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ বাংলাদেশ পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের উগ্রবাদী সহিংসতা মোকাবেলা কার্যক্রম (সিবিএ)-এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী জাস্টিন সিভারেল। উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিশ্বের ৬০টি সিটিকে সিটি নেটওয়ার্ক-এর আওতায় নেয়া হয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা সিটি দক্ষিণ রয়েছে বলে জানান এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গত বুধবার দুপুরে নিউ ইয়র্কস্থ ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, জিসিইআরএফ-এর আওতায় তিনটি দেশকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। আর বাকি দু’টি দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া ও মালি। এ ফান্ডের প্রথম অর্থ সহযোগিতা পাওয়া দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি জানান, উগ্রবাদী সহিংসতা মোকাবেলায় বিশ্বের ৬০টি শহরের মধ্যকার যে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের ঢাকা দক্ষিণ সিটি।
তবে কাশ্মীরের সেনাঘাঁটিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় নতুন করে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের। চিরবৈরী দেশ দুটির দ্বন্দ্বে বাংলাদেশকে নিজ দেশের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেছেন সাবেক কূটনীতিকরা। উরি সেনাঘাঁটিতে হামলার ওই ঘটনায় বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করে এ কঠিন সময়ে দেশটির পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে পাঠানো এক চিঠিতে এ আশ্বাস দেন। এ হামলায় ১৭ সেনা নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। একইভাবে ১ জুলাই গুলশান হামলার সময়ও বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলেছিল ভারত।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও উগ্রবাদী সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবেই ভারতের পাশে থাকার কথা বলেছেন। তিনি এ অঞ্চলের সীমানাজুড়ে চলমান সব হুমকি নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এরই অংশ হিসেবে এটি তার অবস্থান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতের মতো এমন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর পাশে থাকার বিষয়ে এ সমর্থন জানিয়ে ঠিক কাজটিই করেছে। পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশকে নিজকে সংরক্ষিত করে, নিজ অধিকারকে সংরক্ষিত করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শান্তি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নই আমাদের টার্গেট।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, এটি সত্য পাকিস্তানের সঙ্গে এ অঞ্চলে কারো সম্পর্ক ভালো নেই। সংবাদে বেরিয়েছে, পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আসন্ন সার্ক সম্মেলনে ভারত, বাংলাদেশ এমনকি শ্রীলঙ্কাও যাচ্ছে না। পাকিস্তান দেশটি আসলে নিজেকে একঘরে করে ফেলেছে তার আচরণ ও কার্যকলাপের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানকে কাশ্মীরের জনগণের কথা ভাবতে হবে। কাশ্মীরের মানুষের কথা ভেবেই এবং তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েই কাশ্মীরকে স্বাধিকার দেয়া উচিৎ। কাশ্মীর সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। কাশ্মীরের জনগণ নির্ধারণ করবে তারা কীভাবে, কোথায় থাকবে?
আশফাকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। ভারত বা পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবিত না হয়ে আমরা এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান যে সকল মন্তব্য করেছে তা কোনো গণতান্ত্রিক সরকার করতে পারে না। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব বিবৃতি দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করে। এসকল কোনো গোপন বিষয় নয়, আমরা সকলেই এটি জানি। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী? যদি মার্ক করা হয় এখন ১০-এর মধ্যে মাত্র ২ নম্বর পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস করে কেউ একটি দেশকে ভয় দেখাতে পারবে না। কিন্তু কোনো দেশ যখন কোনো অঞ্চলের মানুষের ওপর অন্যায় করবে তখন বিনয়ের সাথে আমরা তাদের বলব। সেখানে জনগণের ইচ্ছার মূল্য দিতে হবে। আমরা ঠিক পথে চলেছি। তবে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়। বাংলাদেশ ওআইসি ও সার্কের সদস্য।
তার মতে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের জনগণের স্বাধিকারের কথাও আমাদের বলা উচিৎ। এটা তো বলি না, আমরা এটাতে জড়াতে চাই না বলে। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন স্বরূপ। আমরাও মানুষের ইচ্ছাকে দাম দেব। এটি কোনো সামরিক সমস্যা নয়, এটি রাজনৈতিক সমস্যা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।