Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নভেম্বরেই পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে চায় বিএনপি

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : দীর্ঘ ৯ বছরেও কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ দিতে পারেনি বিএনপি। বৈরি পরিস্থিতি দলটিকে বারবার পেছনে ঠেলে দিয়েছে। তবে এবার আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দল পুনর্গঠন কার্যক্রমের ইতি টানতে চায় হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির পর জোরেসোরে চালাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া।
বিভাগীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন দলের মহাসচিব। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ১০ বিভাগের মধ্যে ৫টির রিপোর্ট কেন্দ্রে জমা পড়েছে। ওই সকল রিপোর্টে উঠে এসেছে, স্থানীয় রাজনীতির পরিবেশ, নেতার কর্মকা- এবং কর্মীদের দুরবস্থার চিত্র। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নেতৃত্বে নতুন নেতারা এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে গণদাবি পূরণে সফল হবে বলে মনে করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে কমিটি পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, হোমওয়ার্ক করা হচ্ছে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ কয়েক জেলার কাউন্সিল করার প্রস্তুতি রয়েছে। বাধা বিপত্তি যতোই আসুক লক্ষ্যে সঙ্গত কারণেই নভেম্বরের মধ্যেই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ইতি টানা হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট এবং বিএনপির একাধিক নীতি-নির্ধারকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, নির্বাচন অথবা আন্দোলন যে পথেই দিকেই যেতে হোক সবার আগে সংগঠিত দল প্রয়োজন। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছরেও দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ইতি টানা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে, মহাসচিব গেছেন মহাসচিব এসেছেন। কিন্তু সারা দেশে পরিপূর্ণ কমিটি কখনোই আলোরমুখ দেখেনি। বাস্তবতা হলো- ১০ বছর আগেও বিএনপির সংগঠন গুছালো ছিলো। ২০০৭ সালের ১/১১ দলটিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। যে ধারা অব্যাহত।
নেতাদের মতে, ২০০৭ সালের আগে দলের ৭৫ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬১টি জেলায় পুর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। বাকি ১৪টি ছিলো বিরোধপূর্ণ। ওইসকল কমিটি দলের চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানও বিরোধের নিষ্পত্তি করেননি। এর মধ্যে ছিলো, খন্দকার দেলোয়ার-মুন্নুর বিরোধের মানিকগঞ্জ, গয়েশ্বর-আমানের বিরোধের কেরানীগঞ্জ, নোমান-খসরুর বিরোধের চট্টগ্রাম মহানগর, আব্বাস-খোকার দ্বন্দ্বের ঢাকা মহানগর, সাইফুর রহমান-ইলিয়াস দ্বন্দ্বের সিলেট জেলাও ছিল।
দলের সংস্কার ইস্যুতে তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়ার বহিষ্কারের পর মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০০৯ সালের ৯ জুন সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যে যাত্রায় মাত্র ৪৮টি জেলা কমিটি গঠিত হয়েছিলো। সে থেকে গত প্রায় ৯ বছরে কমিটি তামাদি নামের জগদ্দল পাথর সরারে পারেনি বিএনপি। হাইকমান্ড যাদের দিয়ে এই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত টানবেন তাদের ঠিকান হয় জেলখানা। ফলে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অর্জন তো দূরের কথা টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গুম, খুন, হামলা-মামলা, নিপীড়নের মাত্রা এমনতর হয়েছে যে, কোন কোন এলাকা বিএনপির নেতাকর্মী শূন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুধু পুরুষ শূন্যতাই নয় মাঝে মধ্যে বিএনপি সমর্থক মহিলা-শিশু-কিশোর শূন্যতার দৃশ্যের অবতারণা হয়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা ভাবেনই যে তাদের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানের সাজা হবে, শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশীট হবে, দলের মহাসচিবকে ৮৪ মামলার পারোয়ানা নিয়ে আদালত চত্বরে বছরের পর বছর কাটাতে হবে। গুমের সংখ্যা হাজার ছাড়াবে। আগের দিন যে দুঃসংবাদটি শুনেছে পরের দিনের সংবাদটি আরো হতভম্ব হবার মতো হবে। এহেন পরিস্থিতিতেই ঘুরে দাঁড়ানের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে দলীয় প্রধান। নিজের চিকিৎসা সেবা নেয়ার কথা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনে না গিয়ে দেশে ফিরেছেন।
হজ পালনে যাবার ৪ মাস আগে শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের জন্য সাংগঠনিক দায়িত্ব ও নির্দেশ দিয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহানকে। কাজটির কোন অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমন নয়। ১০ সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে সাংগঠনিক রিপোর্ট চেয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন পর্যন্ত তার কাছে জমা পড়েছে ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ ৫টি বিভাগের রিপোর্ট। বাকি রয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর জেলার সাংগঠনিক রিপোর্ট।
এদিকে নতুন কমিটির নেতাদের তথ্য সরবরাহের জন্য হিমসিম খাচ্ছে দলীয় দফতর। কারণ নেতায় নেতায় বিদ্বেষের কারণে স্থানীয় নেতারা প্রয়োজনীয় তথ্যও দিচ্ছে না। রাগ-ক্ষোভে পদত্যাগ অব্যাহত রেখেছে নতুন নেতারা।
সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম) মাহবুবুর রহমান শামীম ইনকিলাবকে জানান, তার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট দেয়া হয়নি। ১০ জেলার মধ্যে ৭টি জেলায় সফর করেছেন, সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করছেন। বাকি ৩টি জেলার রিপোর্ট প্রস্তুতের পরই হাইকমান্ডের কাছে জমা দিবেন।
তিনি জানান, বিভাগের অনেক জেলায় কাউন্সিল সম্ভব, অনেক জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারেই বৈরি।
খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ইনকিলাবকে জানান, তাদের বিভাগের রিপোর্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া চলমান। তার বিশ্লেষণে, যশোহর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ ৪/৫টি জেলায় নেতাকর্মীরা এলাকাতেই অবস্থান করতে পারছেন না। দলের কাউন্সিল তো দূরের কথা মিলাদ মাহফিল করার মতো পরিস্থিতিও রাখেনি সরকার। এ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে হাইকমান্ডের কাছে তার রিপোর্ট পেশ কবেন শিগগিরই।
সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন ইনকিলাবকে জানান, তিনি দলের মহাসচিবের কাছে তার বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছেন। ৫ জেলা নিয়ে এই বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠন প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুনামগঞ্জ, মৌলভী বাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় কমিটি গঠন করা হয়নি। প্রস্তুতি চলছে।
ডা. জীবন বলেন, অনেকদিন পর কমিটি পুনর্গঠন হলো। বাকি জেলাগুলো পুনর্গঠিত হবার পর উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি করতে হবে। তাই দ্রুততার সাথে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য হাইকমান্ডের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এই সাংগঠনিক সম্পাদক।
বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শিরিন সুলতানা। তিনি জানান, বরিশাল বিভাগের ৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে শুধু ঝালুকাঠির কমিটি আংশিক পুনর্গঠিত হয়েছে। বাকি বরিশাল উত্তর, দক্ষিণ, মহানগর, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলার কমিটি তামাদি।
ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ইনকিলাবকে বলেন, আমরা মুলত আমাদের এরিয়ার মধ্যে জেলা, থানা/উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠন কি পর্যায়ে রয়েছে সে চিত্রই তোলে ধরেছি। কোথায় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কর্মকা-সহ একটি সারাংশ হাইকমান্ডের কাছে উপস্থাপন করেছি। তার মতামত, বাস্তবতা বৈরি হলেও এ প্রেক্ষাপটেই খুব শিগগিরই বাকি কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা জরুরি।
কুমিল্লা বিভাগের রিপোর্ট এখনো কেন্দ্রে জমা পড়েনি। এ প্রসঙ্গে সে বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান জানান, তারা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কমিটি করেছেন। বাকি চাঁদপুর, কুমিল্লাহ মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলার কমিটির রিপোর্ট প্রস্তুত করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নভেম্বরেই পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে চায় বিএনপি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ