Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

যাত্রী ছাউনি পার্কিং সুবিধা বিমান যাত্রীদের জন্য আলাদা লেইন
রফিকুল ইসলাম সেলিম : নগরীর ২৪টি স্পটে পার্কিং সুবিধা, নির্ধারিত ছাউনিতে যাত্রী উঠানামা, বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের জন্য সড়কে আলাদা লেইন স্থাপন এবং মহানগরীর সড়কগুলোকে দখলমুক্ত করে সম্প্রসারণের উদ্যোগসহ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একইসাথে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। নগরীতে নেই কোন স্থায়ী বাস ও ট্রাক টার্মিনাল। যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করা হচ্ছে। অবাধে চলছে অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। ফলে গণপরিবহন এবং সেইসাথে মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
যানজট কমাতে অর্থের বিনিময়ে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করার পরিকল্পনা নিয়েছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ২৪টি পার্কিং এলাকার প্রস্তাবনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেবে ট্রাফিক বিভাগ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ-উল-হাসান বলেন, নগরীতে যত্রতত্র পার্কিং যানজট সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। তা নিরসনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পার্কিংয়ের পৃথক জায়গা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এসব স্পটে কয়টি করে গাড়ি পার্কিং করা হবে সেটিও নির্ধারণ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। খুব শিগগির সিটি মেয়রকে এ প্রস্তাবনা দেয়া হবে উল্লেখ করে মাসুদ-উল-হাসান বলেন, সে অনুযায়ী তিনি উদ্যোগ নেবেন। নগর পুলিশের পরিকল্পনায় যেসব স্পটে পার্কিং সুবিধা গড়ে তোলা হবে সেগুলো হচ্ছে- এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায় থেকে সিআরবি সাত রাস্তা, স্টেশন রোড নিজাম হোটেল থেকে পুরাতন রেল স্টেশন, পুরাতন রেল স্টেশন ইয়ার্ড, জহুর হকার্স মার্কেট থেকে নিউ মার্কেটের এক্সিট গেইট পর্যন্ত এলাকা।
জিইসি মোড়ের কামাল স্টোরের সামনে ১২টি, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব কোণে ৫০টি, মুরাদপুর সিরাজ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ২৫টি করে অটো রিকশা ও গাড়ি পার্কিং করার মতো পার্কিং এলাকার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশ লাইন্সের পাশে পুনাক শপের সামনে ১০টি, আলমাস সিনেমা হল থেকে জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ গেইটের আগে পর্যন্ত স্থানে ৫০টি, জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে ২৫০টি, অক্সিজেন জনতা ব্যাংক থেকে কেডিএস গার্মেন্টস পর্যন্ত ১০টি করে গাড়ি রাখার ব্যবস্থাসহ পার্কিং স্থান নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও দেওয়ানহাট ফায়ার সার্ভিস এলাকায় রাস্তার দুই পাশে, ওয়াসা কলোনী, অংলকার মোড় থেকে একে খান গেইট পর্যন্ত এলাকায় আলিফ গলি, কর্ণেল হাট থেকে বিএসআরএম মিড আইল্যান্ডে গাড়ির পার্কিং স্থান করার পরিকল্পনায় আনা হয়েছে। নগরীর কয়েকটি মাঠের কিছু অংশেও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য পুলিশের পরিকল্পনায় এসেছে। বন্দরের সিপিআর গেইট সংলগ্ন খালি জায়গায় গাড়ি বা প্রাইম মুভার পার্কিং স্থান করারও পরিকল্পনায় রেখেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, পার্কিং স্থানগুলোতে টাকার বিনিময়ে গাড়ি রাখা যাবে। এগুলো ব্যবহারের কারণে যত্রতত্র পার্কিং করতে পারবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবনাটি সিটি মেয়রকে দেয়া হবে। সিটি কর্পোরেশন সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে পার্কিং স্থানগুলো নির্ধারণ করবে। সিটি কর্পোরেশন নিজস্বভাবে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তারা পার্কিং স্থান তৈরি করার জন্য বলবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। দ্রুত জনসংখ্যার সাথে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যাও। কিন্তু নগরীতে নেই কোন পার্কিং সুবিধা। স্কুল-কলেজসহ মার্কেট, বিপণি বিতান, কমিউনিটি সেন্টারগুলো গড়ে উঠেছে কোনরকম পার্কিং সুবিধা ছাড়াই। বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে সড়ক দখল করে রাখা হচ্ছে সারি সারি গাড়ি। এতে করে নগরীতে তীব্র যানজট হচ্ছে। নগরীতে শৃঙ্খলা আনতে এসব পার্কিং স্পেস গড়ে তোলা হবে।
এদিকে বিমান বন্দরগামী যাত্রীদের জন্য দের জন্য আলাদা লেইন তৈরীর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার মাসুদ-উল-হাসান বলেন, সল্ট গোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড এলাকায় যানজটের কারণে অনেক বিমানযাত্রী তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট মিস করে থাকেন। যাত্রীদের এ বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত করতে আমরা বিমানযাত্রীদের জন্য আলাদা লেইন করার পরিকল্পনা নিচ্ছি।
প্রাথমিকভাবে সল্ট গোলা ক্রসিং থেকে নেভী হাসপাতালের গেইটের আগে পর্যন্ত লোহার বেষ্টনি দিয়ে আলাদা একটি লেইন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ। তিনি আরও বলেন, নেভী হাসপাতাল গেইটের আগে পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হলেও তা সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত করার পরিকল্পনা আছে। এটি ছাড়া বন্দর ফ্লাইওভারের পাশে নিউমুরিং এলাকা থেকে শিল্প পুলিশ অফিসের পাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে বলেও জানান তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ জানান, এ সড়কটিতে অন্য যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে কোন গাড়ি ওই লেইনে দাঁড়াতে পারবে না।
চসিকের পক্ষ থেকে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে এনে জনদুর্ভোগ হ্রাসে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন নগরীতে কোন অবৈধ যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে টমটম ও ব্যাটারি চালিত রিকশা এবং অনুমোদনবিহীন অটোরিকশা যাতে চলাচল করতে না পারে সেদিকে ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনের নেতাদের নজর রাখতে বলেন তিনি। নগরীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার পাশাপাশি যেসব সড়কে যানজট হচ্ছে সেসব সড়ক সম্প্রসারণ করা হবেও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে প্রাইম মোভার, ট্রেইলর, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি টেক্সি, মালিক গ্রুপ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন মেয়র।
এতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। পরিবহন সেক্টরের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজকরণ, গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন ফি কমিয়ে আনা, বাস, ট্রাক, ট্রলি, প্রাইম মোভার, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি টেক্সি ইত্যাদির জন্য টার্মিনাল নির্মাণ, স্কেলে ওজনে হয়রানি, পুলিশ ও নানামুখি জটিলতা নিরসন, নির্বিঘেœ রাস্তায় চলাচলের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। পরিবহন নেতাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন চট্টগ্রাম নগরীর কোথাও ইজিবাইক ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচল করবে না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাস্তায় গণপরিবহন শৃংখলার মধ্যে চলাচল করতে হবে। সাধারণের পথরোধ করে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না। নগরীর বাস, ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মোভার ইত্যাদি পরিবহনের জন্য টার্মিনাল নির্মাণে জায়গা সংস্থানের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন ফি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
সিটি মেয়র বলেন, নগরবাসীর নিকট দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী চট্টগ্রামকে বিশ্ববাসীর কাছে আধুনিক ও বাসোপযোগী নগরী হিসেবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃংখলা আনা হবে। সে লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত যাত্রী ছাউনী স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, মেরিটাইম নিয়ম অনুযায়ী কন্টেইনার পরিবহনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। অবৈধ যানবাহন যাতে অবাধে চলাচল করতে না পারে সে বিষয়টি নজরদারী করার জন্য ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ