Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মঙ্গা ও খরা থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ বছর

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আগামী ১ জুলাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তার শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করবে। তারা সর্বদা নিজেদের ‘দুর্দান্ত, গৌরবময় এবং সঠিক’ বলে দাবি করে এসেছে। দ্বিতীয় শতাব্দী শুরু হওয়ার সাথে সাথে দলটির জন্য গর্ব করার করার মতো যথেষ্ট কারণও রয়েছে। তারা সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে সুদীর্ঘকাল টিকে থাকার পাশাপাশি দেশটিতে ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করছে।

এই একটি দল ভোটারদের কাছ থেকে কোনও বড় ধরণের বাধা ছাড়াই ৭২ বছর ধরে চীনকে শাসন করছে। তবে, এটি বিশ্ব রেকর্ড নয়। উত্তর কোরিয়াতে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং লেনিন এবং তার অনুসারীরা মস্কোতে আরও দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। তবে বিশে^র কোনও একনায়কতন্ত্র একটি মঙ্গা ও খরা কবলিত দেশকে এভাবে বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারেনি, যার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো বিশ^ মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের ফাটা রাস্তা ও রেলওয়েকেও লজ্জায় ফেলে দেয়। চীনের কমিউনিস্টরা হলেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল একনায়ক।

দলটির দীর্ঘায়ুর রহস্য হ’ল এর আদর্শগত কৌশল। ১৯৭৬ সালে দলের চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন নেতা দেং শিয়াওপিং প্রয়াত মাওয়ের উৎপাদনশীলতা-ধ্বংসকারী নীতি ‘গণ সমবায়’ রদ করেছিলেন এবং উৎপাদন শক্তিতে গ্রামাঞ্চলগুলিতে কাজ করার জন্য নীতিমালা আরোপ করেছিলেন।
তিয়ানানমেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে দেং কট্টর মাওবাদীদের শায়েস্তা করেন এবং আরও বেশি উৎসাহের সাথে পুঁজিবাদকে গ্রহণ করেন। এর ফলে অনেকগুলি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বন্ধ হয়ে যায় এবং আবাসন ব্যবস্থাকে বেসরকারীকরণ করা হয়। এতে কয়েক লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সময়ের সাথে সাথে চীনের অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করে।

চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর নেতৃত্বে দলটি তার পূর্বসূরীর কিছুটা হালকা ভিন্নমতকে ধারণ করেছেন। তারা আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে ভ্রষ্ট ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করেছে। বড় ব্যবসাগুলিকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তবে, চীনে দুর্নীতি রয়েছে এবং দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী পরিবারগুলি সত্যিই মহা ধনী। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির সাফল্যের কারণ হ’ল, চীন সবকিছুর পরেও এমন নির্লজ্জ দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়নি, যেখানে সংশ্লিষ্টরা একচেটিয়াভাবে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করে নেয়।

অনেক চীনা নাগরিক মনে করেন তাদের জীবন ধারার উন্নতি হচ্ছে এবং তাদের দাবিগুলি পূরণে শাসক দলটি যথেষ্ট সচেতন। কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় বসে গ্রামীণ কর বাতিল করেছে এবং একটি জন-কল্যাণ ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা প্রত্যেককে পেনশন এবং ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করে। সুবিধাগুলি প্রচুর নয়, তবে সাধারণ জনগণের কাছে প্রশংসিত। অনেক চীনা দলটির শক্তি সামর্থের প্রশংসা করেন। তারা বলেন যে, পশ্চিমা দেশগুলি করোনা মহামারীতে মারাত্মক হোঁচট খেলেও চীন দ্রæততার সাথে কোভিড-১৯ কে ঠেকিয়ে দিয়েছে এবং তার অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করেছে। বিশ্বের দরবারে চীনের ঘুরে দাড়ানোর শক্তি এবং ওজন নিয়ে তারা গর্ব করেন।
বিষয়টি জাতীয়তাবাদের পক্ষে ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করেছে, যা দলটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দলটিকে জাতি এবং সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে জাতিগত দাঙ্গা এবং বন্দুক দিয়ে গণহত্যার দেশ হিসাবে বর্ণনা করে থাকে। তাদের দৃষ্টিতে, একদলীয় শাসনের বিকল্প মানে হ›ল বিশৃঙ্খলা। অবশ্যই একদলীয় শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ আধুনিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয় স্বাধীনতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

একসময় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে জনসাধারণকে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের দিকে পরিচালিত করবে। যদি তা নাও ঘটে, তবে এই উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধি যে বিস্তৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করেছে, তারা অবশ্যম্ভাবীভাবে বৃহত্তর স্বাধীনতার দাবী করবে। কারণ তাদের অনেকে উত্তরসূরী পশ্চিমে শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে।

এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি কমিউনিস্ট পার্টির অব্যাহত জনপ্রিয়তার তলে চাপা পড়ে রয়েছে। তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য অনেক চীনা নাগরিক দলটিকে কৃতিত্ব দেয়। এট সত্যি যে, চীনের কর্মীগোষ্ঠী বয়স্ক হচ্ছে, ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং অবসর গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বিশে^র অনেক দেশই এই সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কোচন পর্যবেক্ষণ করছে। সেদিক থেকে চীনের প্রবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখে মনে হচ্ছে, এটি এখনও আরও কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।



 

Show all comments
  • Md Faruque Ahmed ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    চীনের কমিউনিস্টরা হলেন বিশ্বের সবচেয়ে সফল একনায়ক
    Total Reply(0) Reply
  • নিশা চর ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সফলভাবেই দেশ চালাতে সক্ষম হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিম আশরাফ ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    এজন্য দলটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখি। তবে একনায়ক তন্ত্র সমর্থথন করি না।
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ২৬ জুন, ২০২১, ১:০৮ এএম says : 0
    চীন এখন এক নম্বর অর্থণীতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Akbar Hossain ২৬ জুন, ২০২১, ৯:০৯ এএম says : 0
    চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • নিয়ামুল ২৬ জুন, ২০২১, ৯:১০ এএম says : 0
    শাসকদের মধ্যে দেশ প্রেম থাকলে দেশ এমনই এগিয়ে যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ