পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ৩৫টি জেলার প্রাথমিক স্কুলের ৩১ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে প্রতিদিন টিফিন হিসাবে বিস্কুট খেতে দেয়া হয়। সরকার ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডবিøউএফপি) সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় আসছে জুলাই মাস থেকে শিশুদের মধ্যে আর বিস্কুট বিতরণ করা সম্ভব হবে না। অভিযোগ উঠেছে যে মন্ত্রণালয়ের সচিবের অবহেলার কারণে প্রকল্পটি বন্ধ হতে যাচ্ছে। সচিব চাচ্ছেন ‘নগদের’ মাধ্যমে খাদ্যের টাকা শিশুদের দিতে। অন্যদিকে অধিদফতর চাচ্ছে বাচ্চাদের এতদিন যেভাবে বিস্কুট দেয়া হয়েছে সেভাবেই দিতে।
এ অবস্থায় প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে না পাঠিয়ে নিজের দপ্তরে রেখেছেন প্রাথমিক শিক্ষা সচিব। এই প্রকল্পের মেয়াদবৃদ্ধি করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম ।
প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত ও ঝরে পড়া রোধ করতে স্কুল ফিডিংই হচ্ছে একমাত্র উপায়। এমনকি উপবৃত্তির চেয়েও স্কুল ফিডিং বেশি জরুরি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। চলমান প্রকল্পে বিদ্যালয়ে বিস্কুট বিতরণের জন্য নিয়োজিত এনজিওগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ জুন মাসে শেষ হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয় করার লক্ষে আগামী জুলাই থেকে ২২ সাল পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটি বর্ধিত করা হলে এনজিওদের সাথে চুক্তি করার প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতের নিজস্ব জনবল দ্বারা বিস্কুট বিতরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর আগে গত ২০২০ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা চলতি বছরের মার্চ মাসে ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। এবারে প্রস্তাবিত প্রকল্পে রান্না করা খাবার নয়, দেয়া হবে ডবিøউএফপি বিস্কুট।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বর্ধিতকরণের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের স্কুল মিল কার্যক্রম চলমান রাখা এবং চলতি বছরের মার্চ থেকে ৫ বছর ৪ মাস মেয়াদে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রসারণের জন্য ১৭ হাজার ২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়ানে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। পরে এ প্রকল্প গত ১ জুন একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন না দিয়ে কিছু অনুশাসন দিয়েছেন। সভায় চলমান স্কুল মিট মোডালিটি পর্যালোচনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। যেহেতু চলমান স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি আগামী ৩০ জুন শেষ হবে সেহেতু আগামী জুলাই মাস থেকে দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ৩৫টি জেলার ১০৪টি উপজেলার প্রায় ৩১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা সম্বব হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষার্থী বেড়িবাঁধে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। তবে রান্না করা খাবারে চেয়ে বিস্কুট দিলে ভালো হয় মতামত এসছে মন্ত্রণালয়ে। তিনি আরো বলেন, আমরা শুনছি এখন বিস্কুট নয়, খাবার জন্য দেয়া হবে নগদের মাধ্যমে টাকা। তিনি বলেন, এমনি তো উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আবার খাবার টাকা দিবে নগদ। তা হলে দুটো শেষ। কেউ পাবে কেউ পাবে না।
চিঠিতে আরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের স্কুল চলাকালীন সময়ে পুষ্টির অভার পূরণ এবং ক্ষুধা নিবারণে স্কুল মিল প্রদান না হলে শিশুদের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। চলমান প্রকল্পেসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পর্যালোচনা একটি কার্যকর মডেল নির্ধারণ এবং ব্যয় প্রাক্কলনে যথাযথ যাচাই করার জন্য কমপক্ষে এক বছর সময়ের প্রয়োজন হবে। ৩০ জুন পযন্ত চলমান প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এর মধ্যে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং প্রকল্পের সাহায্যের সমুদয় টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া সরকারি খাতে ৪ শত ৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা এখনো ব্যয় করা হয়নি। প্রকল্পের কার্যক্রম চলামান না থাকলে এ টাকা ফেরত চলে যাবে। এ অবস্থায় অব্যয়িত টাকা দিয়ে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের চলমান বিদ্যালয়গুলোতে বেবল উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট প্রদান করা হলে আগামী জুলাই থেকে ১২ মাস এ কার্যক্রম চালানো সম্ব হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে চলমান দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি প্রয়োজন। চিঠিতে আরো বলা হয়, চলমান প্রকল্পে বিদ্যালয়ে বিস্কুট বিতরণের জন্য নিযোজিত এনজিওগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ জুন মাসে শেষ হবে। সে ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয় করার লক্ষে আগামী জুলাই থেকে ২২ সাল পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটি বর্ধিত করা হলে এনজিওদের সাথে চুক্তি করার প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতের নিজস্ব জনবল দ্বারা বিস্কুট বিতরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
চলমান দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকানো আর পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা মেটাতে দেশে স্কুল ফিডিং-এর প্রকল্পটি বেশ অভিনব। এটি বাস্তবায়ন করে আসা হচ্ছে, যার সফলতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সরকার ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডবিøউএফপি) সহায়তায় এই প্রকল্প আগামী ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। গত ২০২০ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরে তা চলতি বছরের মার্চ মাসে ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। এবারে প্রস্তাবিত প্রকল্পে রান্না করা খাবার নয়, দেয়া হবে ডবিøউএফপি বিস্কুট।
জানা গেছে, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে ২০০১ সালে স্কুল ফিডিং চালু হয়। এরপর ১৬ বছরে মাত্র ১৭ শতাংশ শিশুকে এর আওতায় আনা হয়েছে। এখনো স্কুল ফিডিংয়ের বাইরে রয়ে গেছে ৮৩ শতাংশ শিশু। ফিডিংয়ের আওতায় থাকা বেশ কয়েকটি স্কুলে খবর নিয়ে জানা গেছে, ৭৫ গ্রামের এক প্যাকেট বিস্কুটেই আছে ৪৫০ কিলোক্যালরি। এর মধ্যে ১২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম। উচ্চমাত্রার পুষ্টিগুণ থাকায় একবারে আটটি বিস্কুট খেলে সমস্যা দেখা দেয় শিশুদের। তাই একবারে দুটি বিস্কুট খেয়ে বেশি পরিমাণ পানি খেতে হয়। আর এই বিস্কুটটি প্রচলিত অন্যান্য বিস্কুটের মতো সুস্বাদুও নয়। এতে চিনির পরিমাণ খুবই কম। শিশুরা মিষ্টি পছন্দ করলেও এই বিস্কুটে চিনির পরিমাণ মাত্র ১২ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ২০১৫ সালে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য উপবৃত্তির চেয়ে খাবার দেওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করেন। কারণ গরিব পরিবার উপবৃত্তির টাকা নানা কাজে ব্যয় করে ফেলে। তবে শিক্ষার্থীদের খাবার দিলে তা সরাসরি উপকারে আসে। এ বিষয়ে আইএমইডি এক জরিপও চালায়। এখানে মাত্র ৬ শতাংশ অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) উপবৃত্তি চেয়েছে, বাকি ৯৪ শতাংশ ফিডিংয়ের পক্ষে মত দিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০১২ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ২৬.২ শতাংশ, ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২১.৪ শতাংশে। এরপর চার বছরে মাত্র ১ শতাংশের কিছু বেশি কমে এখন তা ২০ শতাংশে এসেছে। তবে সরকারি হিসাবে, এখন শতভাগ শিশুই স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হয়, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি ১১ শতাংশ শিশু এখনো স্কুলের বাইরে রয়ে গেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিলকিস বেগম বলেন, বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত আমাদের স্কুলে থাকতে হয়। আগে ব্যাংক থেকে টাকা পেতাম। এখন নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় অভিযোগ করে সমাধান হচ্ছে না। আমি বিস্কুটা সব সময় পাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।