পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বর্তমান সময়ের দু’টি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ জঙ্গিবাদ ও সহিংস চরমপন্থা। এই চ্যালেঞ্জগুলো কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো দেশই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ নয়। কোনো ব্যক্তি এদের লক্ষ্যের বাইরে নয়। আমেরিকা থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায়; অগণিত মানুষ সন্ত্রাসবাদের শিকার হচ্ছে। আমরা মনে করি, সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র নেই। এদের সর্বত্রভাবে সমূলে উৎপাটন করার সংকল্পে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে স্থানীয় সময় বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোর) সাধারণ পরিষদে বাংলায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। জাতিসংঘে এবার নিয়ে টানা অষ্টমবারের মতো বক্তৃতায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রও বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ভাষণ বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের মূল কারণগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে এদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিগ্রহণ করেছে।
গুলশান হামলার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ভয়ঙ্কর ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আমরা এই নতুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি।
সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রভাবিত হয়ে কিছু আঞ্চলিক জঙ্গি সৃষ্টি হচ্ছে, বাংলাদেশ এসব জঙ্গি দমনে সফল হয়েছে। দেশীয় জঙ্গিদের ওই হামলার পর জনগণকে সচেতন করতে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি এবং তাতে মানুষের সাড়া পেয়েছি। আমি আশাবাদী বাংলাদেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসীরা সমূলে উৎখাত হবে। এ ধরনের সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের অস্ত্র, অর্থ এবং তাদের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িক অনুসমর্থন না দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে দেয়া প্রায় ১৯ মিনিটের ওই ভাষণে জলবায়ু, বিশ্ব মানবতার বির্পযয়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মরণ করেন ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে সব দেশকে এগিয়ে আসতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাও।
শেখ হাসিনা বলেন, এখনও আমাদের এই বিশ্ব উত্তেজনা ও ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত নয়। বেশ কিছু স্থানে সহিংস-সংঘাতের উন্মত্ততা অব্যাহত রয়েছে। অকারণে অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। এ প্রসঙ্গে সিরিয়ার শিশু আইলান কুর্দির সাগরে ডুবে মারা যাওয়া ও সম্প্রতি বোমা হামলায় আহত ওমরানের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কী অপরাধ ছিল সাগরে ডুবে যাওয়া সিরিয়ার ৩ বছর বয়সী নিষ্পাপ শিশু আইলান কুর্দির? কী দোষ করেছিল ৫ বছরের শিশু ওমরান, যে আলেপ্পো শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিমান হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে? একজন মা হিসেবে আমার পক্ষে এ সকল নিষ্ঠুরতা সহ্য করা কঠিন। বিশ্ব বিবেককে কি এসব ঘটনা নাড়া দেবে না?
জাতিসংঘে অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক সম্মেলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি- এই সম্মেলনের ফলাফল বর্তমান সময়ে অভিবাসনের ধারণা ও বাস্তবতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করবে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের স্বদেশ ও গন্তব্য উভয় স্থানের জন্যই সম্ভাবনাময় পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
‘বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের কর্মসূচি শান্তির সংস্কৃতি বিস্তারে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত সহিংসতার কবল থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দিবে। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় চালু ও ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বৈরিতা নিরসনে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোকে সঠিক দিকে পরিচালিত করতেও সবাইকে ভাবতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য স্থানীয় অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা বিগত কয়েক দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ডিসেম্বরে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে অভিবাসন-বিষয়ক গঠনমূলক সংলাপের প্রত্যাশা করছেন তিনি।
জাতিসংঘের বিদায়ী মহাসচিব বান কি মুনের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (মুন) সব সময়ই একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের অর্জনগুলোকে বাকি বিশ্বের জন্য ‘রোল মডেল’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী শিক্ষা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নারীরা এখন উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। সব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সম্ভবত বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা, বিরোধদলীয় নেতা, স্পিকার, সংসদ উপনেতা সবাই নারী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ভিশন-২০২১’ এবং ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে তার সরকার। উন্নয়নের পথে আরো এগিয়ে যেতে সহযোগিতা চান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
জনগণের দোরগোড়ায় ২০০ ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ৮ হাজার ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন, স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ডিজিটাল ল্যাব ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু, একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা এবং রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরুর কথাও তিনি বলেন।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি থাকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমিয়ে আনার চিত্রও তুলে ধরেন। মন্দার মধ্যেও রপ্তানি আয় প্রায় তিন গুণ বাড়ানোর কথা বলেন শেখ হাসিনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার কথাও আসে তার ভাষণে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল (বিবিআইএন)-এর মধ্যে ‘মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক’ তৈরি এবং বিনিয়োগ বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অনেকগুলো উন্নয়ন অর্জনকে হুমকির মুখোমুখি করছে জানিয়ে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিটি অনুসমর্থনের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এক মানবতার জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে আমরা সকলে এখানে সমবেত হয়েছি। মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আসুন আমরা মানবতার স্বার্থে অভিন্ন অবস্থানে উপনীত হই। বিশ্ব থেকে সংঘাত দূর করে শান্তির পথে এগিয়ে যাই। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘই হতে পারে আমাদের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। আসুন, আমরা এই সংস্থাকে আরও টেকসই ও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে নতুন করে শপথ গ্রহণ করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।