পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : কাশ্মীর ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ানোর জোরালো আশঙ্কা তৈরি করেছে। দুই দেশের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বাগযুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতিসংঘ পর্যন্ত তা পৌঁছা, ভারতীয় নেতারা ও মিডিয়ার যুদ্ধপন্থী সুর এবং পাক সেনাবাহিনী প্রধানের ‘যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি’র ঘোষণা এই আশঙ্কাকে জোরালো করে তুলছে। এর সাথে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর শুরু হওয়া মহড়া থেকেও ‘সম্ভাব্য যুদ্ধ’র সংকেত নিচ্ছেন অনেকে। যদিও পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তা বলছেন, এই ‘নিয়মিত’ মহড়ার পরিকল্পনা অনেক আগেই করা ছিল।
গত রোববার কাশ্মীরের উরিতে সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় ভারতীয় দেড় ডজন সৈন্য নিহত হন। এর জের ধরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম অবস্থায় পৌঁছে। ভারতের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কঠোর জবাব’ দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। এদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, হামলার অব্যবহিত পরেই কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার ঘটনা থেকে বোঝা যায় ভারতের অভিযোগ কতটা উদ্দেশ্যমূলক।
যুদ্ধের দামামা
সময় যত গড়াচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে ‘যুদ্ধের দামামা’ বাজানোর আওয়াজ যেন ততই বাড়ছে। দেশটির মিডিয়া এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও যুদ্ধের পক্ষে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। একটি জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক ইংরেজি টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপক অর্ণব গোস্বামী পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে গত বুধবার বলেই ফেললেন, ‘আমাদের উচিত তাদের পঙ্গু করে ফেলা।’ মিডিয়ায় যুদ্ধে পক্ষে প্রচারণা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, ভারতেরই একটি সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি ও’ গত বুধবার তাদের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে ‘সেনাবাহিনীর কী দরকার, ভারতের মিডিয়াই তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে!’
এই যুদ্ধ দামামায় বাতাস দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির বড় বড় নেতাও। সিনিয়র নেতা রাম মাধব বলেছেন, ‘তথাকথিত কৌশলগত কারণে সহ্য করার সময় শেষ হয়ে গেছে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও কঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। এক নেতা বলেছেন, ‘ওরা একটি দাঁতে আঘাত করেছে, জবাবে পুরো চোয়াল ফেলে দিতে হবে!’ উভয় দেশের রাজধানীর বিভিন্ন মহলেও চাউর হয়েছে যে, ভারত পাকিস্তানের মাটিতে হামলা চালাতে পারে। ভারতীয় মিডিয়া জানাচ্ছে, দেশটির সরকার অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে সামরিক অভিযানকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও এর সপক্ষে। তাদের সমর্থন যোগাচ্ছেন বিজেপির কট্টরপন্থী নেতারা।
সর্বোচ্চ সতর্কতায় পাক সেনাবাহিনী
ভারত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে পাক সেনাবাহিনী। হুমকি মোকাবিলার মহড়া শুরু করে দিয়েছে তারা। খবর পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের। অবশ্য পাকিস্তানের কর্মকতারা বলছেন, তাদের এই মহড়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
গত বুধবার পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের আকাশসীমা ও এমওয়ান এবং এমটু মোটরযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে উত্তর পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরগামী ফ্লাইট বাতিল করেছে সংস্থাটি। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কিছু এলাকায় বিমান চলাচল বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ভারতের সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় পাক সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতির গুজবে দেশটির শেয়ার মার্কেটে ধস নেমেছে।
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত অনুশীলনের অংশ হিসেবে এসব যুদ্ধবিমান অবতরণ করছে। প্রতি ৫ বছর অন্তর বড় ধরনের অনুশীলন করে পাক বিমান বাহিনী। এর প্রস্তুতি নিতে এক মাস সময় প্রয়োজন হয়।
যে কোনো পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত Ñপাক সেনাপ্রধান :
ইন্ডিয়া টুডে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ বলেছেন, তার বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। রাওয়ালপিন্ডিতে সেনা কমান্ডারদের একটি সম্মেলনে রাহিল এ কথা বলেন। সম্মেলনে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে দেশের মানুষের সাথে সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’
জাতিসংঘে বাগযুদ্ধ :
দুই দেশের নেতাদের বাগযুদ্ধ জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাষণের পর তার কড়া জবাব দিয়েছে ভারত।
আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের ‘প্রধান শিকার’ পাকিস্তান Ñনওয়াজ :
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের ‘প্রধান শিকার’ বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ দাবি করেন। নওয়াজ জানান, পাকিস্তানের বহু সেনা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। ভারত শাসিত কাশ্মীরে যে সহিংস বিক্ষোভ এখন চলছে, তাকে মি. শরীফ ফিলিস্তিনদের ‘ইন্তিফাদা’ বা গণ-আন্দোলনের সাথে তুলনা করেন। একই সাথে গত জুলাইয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরি যুবক বুরহান ওয়ানীকে তিনি সেই ইন্তিফাদার নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন।
কাশ্মীর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হবার আশঙ্কাকে বিশ্ব নেতারা উপেক্ষা করছেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে নওয়াজ বলেন, ভারত বিপুল অস্ত্রভা-ার গড়ে তুলছে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু পাকিস্তান করবে বলে পাক প্রধানমন্ত্রী জানান।
‘সন্ত্রাসের আখড়া’ তৈরি করেছে পাকিস্তান Ñভারত :
নওয়াজের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারত এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাচীন ইতিহাসের শিক্ষার পীঠস্থানকে ‘সন্ত্রাসের আখড়া’ বানিয়েছে পাকিস্তান। জাতিসংঘে ভারতীয় মিশন বিবৃতিতে বলেছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহায্য ব্যয় করে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র দিয়ে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান।
কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তার জবাবে ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাস সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
ভারত কি আসলেই যুদ্ধে যেতে চাইবে?
ভারতের সংবাদমাধ্যম ও নেতারা যুদ্ধের ডঙ্কা বাজালেও বাস্তবে কি ভারত আসলেই যুদ্ধে জড়াতে চাইবেÑএমন প্রশ্নে নেতিবাচক উত্তর জবাব দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। পাকিস্তানকে ‘সমুচিত জবাব’ দেবার হুমকি দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে পাকিস্তানের ভূখ-ে পাল্টা আঘাত হানার জন্য ভারতের সামর্থ্য এবং গোয়েন্দা তথ্য আছে কিনা? অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতের সরকারগুলো সে ধরনের সামর্থ্য গড়ে তুলেছে বলে মনে হয় না। ভারতে বিবিসি’র সংবাদদাতা সৌতিক বিশ্বাস এমনটাই বলছেন। ভারতের জন্য এটা সহজ হবে না, কারণ পাকিস্তানের রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার কৌশলগত বিষয়ের সম্পাদক অজয় শুক্লাও একই রকম মত পোষণ করেন। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চালিয়ে যাওয়াটা খুব সহজ। শুক্লার মন্তব্য, ভারত কোনো হামলা চালানোর জন্য কৌশলগত দিক থেকে প্রস্তুত নয়। এটা দেশটির পরিকল্পনার ব্যর্থতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকটি বাস্তবতা ভুললে চলবে না যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম।’
দুই দেশের সামনেই মূল অস্ত্র কূটনীতি
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধের চেয়ে বরং দুই দেশের সামনে এই মুহূর্তে পরস্পরকে ঘায়েল করার মূল অস্ত্র হচ্ছে কূটনীতি। ভারত চায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে নিয়ে পাকিস্তানকে আঞ্চলিকভাবে একঘরে করে রাখতে। এমন প্রকাশ্য ঘোষণাও দিয়েছেন ভারতীয় নেতারা। বিশেষ করে আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলনকে উপলক্ষ বানাতে চায় ভারত। এছাড়া বাংলাদেশ, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়। তবে এ ক্ষেত্রে চীনকে বিরোধী কোর্টেই পাবেন নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে পাকিস্তানেরও চেষ্টা আছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে পাশে পাওয়ার। চীন ইতোমধ্যে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। এছাড়া মুসলিম দেশগুলোর সমর্থনও যেতে পারে ইসলামাবাদের পক্ষে। বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করছেন। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়া টুডে, ডন, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।