Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিকৃত মানসিকতা নাকি বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা?

সিংহ-সিংহীর রাজকীয় বিয়ে

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্টালিন সরকার : খুবই গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রচার করেছে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া। তা হলোÑ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বুধবার রাজকীয়ভাবে বনের রাজা সিংহ-সিংহীর বিয়ে দেয়া হয়েছে। রংপুর চিড়িয়াখানার সিংহ বাদশার সঙ্গে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী নোভার বিয়েতে ৪৭ কেজি গরুর গোশতের তৈরি কেক কেটে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বিয়ে বাড়ির আদলে বর্ণিলভাবে সাজানো হয় পুরো চিড়িয়াখানা। বিয়ে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, তার মেয়ে মাশিয়াত মুবাশ্বিরা, স্ত্রী ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হাবিবুর রহমানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেছেন---। জনগণের টাক্সের টাকাই যে চিড়িয়াখানার পশুর বিয়ে নামের এই কা- হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রশ্ন হলো পশুর বিয়ে কি আমাদের শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যায়? রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে ‘পশুর বিয়ে’ বিকৃত মস্তিষ্কের শুধুই পাগলামি নাকি বিজাতি সংস্কৃতি চর্চার ওকালতি? নাকি পরিকল্পিতভাবে দেশের স্কুল পড়–য়া শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মগজ ধোলাই?
আমাদের দেশজ সংস্কৃতিতে জারি-সারী-ভাটিয়ালী-মুর্শিদী গানের রমরমা উপস্থিতি; আরো আছে কাওয়ালী, গজল, হামদ-নাতসহ অনেক কিছু। জাতি হিসেবে আমরা নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। নারী-পুরুষের বিবাহ প্রথা সেই আদিকাল থেকেই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে পশুর বিয়ের প্রচলন আছে কি? বাংলাদেশ সৌহার্দ্যরে দেশ। সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন সাবলীলভাবেই। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এ নজির আছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে পশুর বিয়ে দেয়া এ কেমন বিকৃত মানসিকতা? রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের অর্থ ব্যয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চার নামে পশুর বিয়ে দেয়া কি পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা? নাকি বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা? বিকৃত মানসিকতায় আয়োজিত ওই সিংহ-সিংহীর বিয়েতে উপস্থিত হওয়া স্কুলের অবুঝ ছাত্রীরা তো বললেন, তারা ‘মজা’ পেয়েছেন। এই মজা পাওয়া বয়সের মেয়েদের মস্তিষ্কে কি সুকৌশলে বিজাতীয় হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির বীজ বপন করা হচ্ছে? ইসলাম ধর্মমতে ‘কোনো পশুকে বিয়ে দেয়া ধর্মীয় ও মানবিক বিধানের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়’। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা অপর সম্প্রদায়ের সাথে মিল রেখে তাদের সংস্কৃতি পালন করবে তারা সে সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা আমার উম্মত নয়।’
পশুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকবেই। গৃহপালিত পশু গরুর উপকারের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। সুন্দরবনের বাঘের জন্য আমরা গর্ববোধ করি। পশু পালন এবং পশুর নির্মোহ উপকার মানুষ পেয়ে আসছে আদিকাল থেকেই। মানুষ ভালোবেসে পশু পালন করেন। কিন্তু পশুর বিয়ে? বিয়ে মূলত ধর্মীয় ভাবমর্যাদার বিধান। এ নিয়ে তামাশা করা উচিত নয়। পশুর বিয়ে দেয়া সুস্থ বিবেকবান মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিতে পশুর বিয়েতে বাধা নেই। ভারতের হিন্দুরা গরুকে গো-মাতা’র মর্যাদা দেয়ায় গরুর গোশত খাওয়া বন্ধ করেছে। বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে, গাছের বিয়ে ইত্যাদি কোলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে যায়। ভারতের অনেক রাজ্যে ‘সাপ’ পূজা করা হয়, হাতি ও গাছকে পূজা করা হয়। এগুলো তাদের ধর্মাচার ও কৃষ্টি-কালচার। বনের পশু-পাখির মাঝে সঙ্ঘবদ্ধ পরিবার, পারিবারিক নিয়ম-শৃংখলা, মায়া-ভালোবাসা, প্রেম-অনুভূতি, মালিকানা-দখলদারিত্ব, হিংসা-ঝগড়া, ত্যাগ-ভক্তি, প্রতারণা-ধোঁকাবাজি, সেবা-যতœ, নার্সিং, হেল্পিং, চাতুরি-ছলনা থাকতে পারে। কিন্তু জন্মগতভাবে তাদের দায়িত্ববোধ নেই। তবে যারা মূর্তি পূজা করেন তাদের মধ্যে পশু পূজা, পশুর বিয়ে-শাদি দিতেও দেখা যায়। কোলকাতার চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত সিরিয়াল ও নাটকে ব্যাঙের বিয়ে, গাছের বিয়ে দিতে দেখা যায় জাঁকজমক করে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে। এটা তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। কিন্তু বাংলাদেশে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। আমাদের দেশজ শিল্প সংস্কৃতি এবং ইসলাম ধর্মের রীতি-নীতি পশুর বিয়ে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের আমজনতা সেটা করেও না। বিয়ে-শাদি কেবল মানব জাতির জন্যই নির্ধারিত একটি সম্মানজনক ব্যবস্থা। যা মানুষের বংশ ও জন্মসংক্রান্ত অবস্থা বজায় রাখতে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, অতীতের নবী-রাসূলদের আমি স্ত্রী, পুত্র-কন্যা দান করেছিলাম। অর্থাৎ নবী-রাসূলদের রীতি হচ্ছে বিবাহ ও সন্তান নেয়া। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেও বিয়ে করেছেন। বিয়ে মানব জাতির ধর্মীয় ভাবমর্যাদার বিধান। এ নিয়ে তামাশা করা বা এর অবমাননা করা কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষের পক্ষে শোভা পায় না। বিশেষ করে কোনো পশুকে বিয়ে দেয়া ধর্মীয় ও মানবিক বিধানের অবমাননার নামান্তর। পশুদের জন্য পিতা-মাতা, কন্যা-ভাই-বোন ইত্যাদি পরিচয় সংরক্ষিত নয়। তাদের জন্য শরিয়ত ও নৈতিকতা নয়। তাদের জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক বা আত্মীয়তা নীতি রক্ষা সম্ভব নয়। বিয়ে নিয়ে কোনো ভাঁড়ামি-ফাজলামির সুযোগ নেই। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছেÑ ধর্মীয় বিধান নিয়ে যারা ঠাট্টা-মশকরা করবে তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। পশু-পাখির বিয়ে অন্য কোনো ধর্ম বা সংস্কৃতিতে থাকতে পারে, ইসলামে এসবের স্থান নেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, যারা অপর সম্প্রদায়ের সাথে মিল রেখে তাদের সংস্কৃতি পালন করবে তারা সে সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা আমার উম্মত নয়। বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্ক বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে চল। তিনি তোমাদের বিবাহ ও স্ত্রী পরিবার সম্পর্কে পরকালে জিজ্ঞাসা করবেন। মনে রেখ আল্লাহ তোমাদের ওপর তদারককারী রূপে রয়েছেন। অতএব তাকে ভয় করে চল।’
পশু হিং¯্র-অবলা-নিরীহ-গৃহপালিত-বন্য-যাযাবর যাই হোক তারা পশু-পাখিই। পশুর দায়বদ্ধতার বোধবুদ্ধি নেই। আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানবের জন্য যা করণীয় অবোধ পশুকে সে পর্যায়ে নিয়ে আসার মশকরা চলে না। বিজাতীয় সংস্কৃতিতে পশুর বিয়ে দেয়া, কলা গাছের বিয়ে দেয়ার রেওয়াজ আছে। সেটা তাদের সংস্কৃতি। কোলকাতার সংস্কৃতি ভাইফোঁটা, ভালোবাসা দিবস, উল্কি, হোলিখেলা, রাখি বন্ধন ইত্যাদি প্রচলিত। তারা সেটা করুক। ওই সংস্কৃতি প্রসারে তারা বিজ্ঞাপন, সঙ্গীত শিক্ষালয়, নাট্যবিদ্যালয়, নাট্যশালা, আর্টস্কুল, ফ্যাশন-শো, সঙ্গীত-অভিনয়-সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সাহিত্য, সেমিনার, এনজিও, ক্লাব-সমিতি, সাংস্কৃতিক সফর, চলচ্চিত্রকে মাধ্যমে ফেরি করছে। কিন্তু আমরা তাদের সংস্কৃতি নিতে যাব কেন? দেশের কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা আত্মসম্মানবোধের মাথা খেয়ে দিল্লি তোষণনীতিতে ব্যস্ত। ইসলাম-বিদ্বেষী মেরুদ-হীন কিছু শিক্ষিত সুশীল, সংস্কৃতি কর্মী, এনজিওবাজ দেশজ সংস্কৃতি সিঁকেয় তুলে দিল্লি-কোলকাতাকে খুশি করতে প্রগতির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চায় অভ্যস্ত। তাদের পথে হাঁটছে না সাধারণ মানুষ। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় অভ্যস্ত। কিন্তু রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার নামে পশু-পাখির বিয়ে দিয়ে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মগজ ধোলাই করা কি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাজ? নাকি নিছকই বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ?



 

Show all comments
  • তানিয়া ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:১৯ পিএম says : 0
    এটা নিছকই বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ
    Total Reply(0) Reply
  • Amjad Hosain ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমার জাতিকে ফেতনা থেকে হেফাজত করুন... এবং হেদায়েত করুন... আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৭:১৮ পিএম says : 0
    This kind offiCal are actualy not qualified for the position by briving he got the job
    Total Reply(0) Reply
  • abu bakkar siddik ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৯:৩৯ পিএম says : 0
    jonogoner taka baper taka mone kore khoros kortesen koren! apnader ki mone hoy kono din apnader k kobore jete hobe na?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিকৃত মানসিকতা নাকি বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চা?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ